Connect with us

ঢাকা

গুলশান হামলায় নিহত এক ইতালিয়ান নারী ৫ মাসের অন্তস্বত্ত্বা ছিলেন

Published

on

সিমোনাঅনলাইন ডেস্ক: কথা ছিল সিমোনার একটি ছেলে সন্তান হবে। তিনি তার নাম রাখবেন ‘মাইকেল অ্যাঞ্জেলো’। মাতৃগর্ভে নিহত এ মাইকেল অ্যাঞ্জেলোর জন্য কোনও ভালোবাসা দেখি না। তবে তার মাকে জবাই করা নরপিশাচদের জন্য ভালোবাসা, সমবেদনা, আফসোস আরও অনেক কিছুই দেখতে পাই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক স্ট্যাটাসে এমনটাই লিখেছেন নোবেল হিমুরা নামে এক ব্যক্তি।
গত শুক্রবার (১ জুলাই) গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে বর্বর জঙ্গি হামলায় নিহতদের মধ্যে একজন সিমোনা মন্তি। তিনি ছিলেন ৩৩ বছরের এক ইতালিয়ান তরুণী। পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন তিনি। কথা ছিল বাংলাদেশে লম্বা ছুটি কাটিয়ে ফিরে যাবেন নিজ দেশে, সেখানেই জন্মগ্রহণ করবে তার সন্তান। কিন্তু জঙ্গিদের হামলায় তার আগেই প্রাণ হারালেন তিনি।
হিমুরা ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করে লেখেন, গুলশানে জঙ্গিদের হাতে জবাই হওয়া পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা সিমোনার বিষয়ে আমাদের মিডিয়ায় এখনও কোনও খবর নেই। তবে হিজাবের কারণে খাতির বা খাবার খেতে দেওয়ার বিষয়ে খবর আছে।
হিমুরা আরও লেখেন, বাংলা ভাষার জন্য গুগোল ট্রান্সলেটর তেমন কার্যকর নয়, এটা নিয়ে আমার দুঃখ ছিল। নিয়ম করে ওখানে কন্ট্রিবিউট করতাম। কিন্তু এখন আর করব না। তবে একমাত্র সান্ত্বনা বাংলা ভাষায় লেখা আমাদের এই নোংরা চরিত্র কোনও ইতালিয়ান ট্রান্সলেট করে পড়তে পারবে না।
সবশেষে তিনি লেখেন, আপনারা ভালো থাকবেন আপনাদের ভালোবাসা ক্রাশ সমবেদনা আর ডিফেন্ডিং নিয়ে। আমার রইলো মাইকেল অ্যাঞ্জেলোর জন্য ভালোবাসা মাইকেল অ্যাঞ্জেলোর জন্য কান্না…।
তবে অন্তঃসত্ত্বা এই নারীর কথা লিখেছেন আরেক সাংবাদিক আরিফ জেবতিক। তিনি লেখেন, ‘আমার স্ত্রী যখন সাতমাসের অন্তঃসত্ত্বা, সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যায়। কী আনন্দের একেকটা দিন! আমার মা রাজ্যের সব কাপড়চোপড় মেলে দিয়ে অনাগত নাতনির জন্য কাঁথা বানাচ্ছেন। সেই কাঁথাগুলোর এমন সব জটিল নকশি ডিজাইন, বাকি দু’মাসে কাঁথা সেলাই শেষ হবে বলে মনে হচ্ছিল না।
আহা, সেই ভিনদেশি তরুণী, তোমাকে যখন কুপিয়ে খুন করছিল সেই অমানুষগুলো, তখন তোমার পেটের সেই অনাগত সন্তানটিকে স্পর্শ করার আকঙ্ক্ষা নিয়ে বেঁচে থাকা তুমি কী ভাবছিলে? আজ কী ভাবছে তোমার প্রেমিক? তোমার মা কি কাঁথা বানায় তোমাদের দেশে?’
তারপরই তিনি লিখেছেন, ‘কোথাও আদৌ কিছু বদলেছে কি এ রক্তস্রোতে? ঈদের বাজারের ঝলমলে বাতি কি নিভেছে এক সেকেন্ডের জন্য? একটা শোকসভায় কি মানুষের সংখ্যা পেরুলো পঞ্চাশের ওপরে? একটা রেস্তোরাঁ কর্মীকে পিটিয়ে জঙ্গি বানিয়ে হাসপাতালে পাঠানোর আগে কি একটা পুলিশ এক মুহূর্তের বিরতি নিল? সারারাত আশা আর অপেক্ষায় বসে থাকা মানুষগুলো ভোর ৬টার আগে কি জেনেছিল একটু পরেই অপারেশন হবে, কিন্তু তারা সেটি দেখার জন্য বেঁচে থাকবে না।’
গতকাল সোমবার গুলশানের ৭৯ নং রোডে গিয়েও দেখা যায়, মানুষ নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন ফুল আর মোমবাতি জ্বালিয়ে। নীরবতা পালন করছেন, করছেন প্রার্থনা। মা আর বোনকে নিয়ে তেমনি শ্রদ্ধা জানাতে মীরপুর থেকে এসেছিলেন সাকিব। সাকিব বলেন, পুলিশ বলছে, এই হামলায় তিন বাংলাদেশি, সাত জাপানি আর নয় জন ইতালিয়ান মারা গিয়েছেন, মোট ২০ জন।
কিন্তু সংখ্যাটা ২০ কেন হবে, এটাতো ২১ জন হবে। কারণ পাঁচ মাসের একটি ভ্রূণ মাতৃগর্ভেই মেরে ফেলেছে ওরা। আমরা তার সন্তানকেও শ্রদ্ধা জানাতে চাই, যে শিশুটি পৃথিবীতে আসার আগেই পৃথিবী থেকে চলে গেল, আমরা তার কাছে ক্ষমা চাই।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (১ জুলাই) গুলশানে জঙ্গি হামলায় সিমোনা মন্তিসহ নিহত হন আরও আট ইতালিয়ান। তারা হলেন ভিনসেঞ্জো দ’আলেত্রো, নাদিয়া বেনেদেত্তি, ক্লদিও কাপেল্লি, ক্লদিয়া মারিয়া দ’আন্তোনা, ক্রিস্টিয়ান রোজি, মার্কো তন্দাত, আদেলে পুগলিসি এবং মারিয়া রিভোলি।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *