Highlights
তিস্তায় পানি বৃদ্ধি, গঙ্গাচড়ায় ৪ হাজার পরিবার পানিবন্দি
তিস্তায় আবারো পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। হঠাৎ উজানের ঢলে নদীতে পানি বাড়ায় রংপুরের গঙ্গাচড়ায় নদীর তীরবর্তী চরাঞ্চলসহ নিন্মাঞ্চলের প্রায় ৪ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানির বৃদ্ধিতে কৃষকের স্বপ্নের আমনের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। সাথে দেখা দিয়েছে পয়ঃনিষ্কাশন ও বিশুদ্ধ পানির সংকট।
পানিবন্দী পরিবারগুলো গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে উঁচু নিরাপদ স্থানে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। আর গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১ টার বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল।
শুক্রবার (০২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে গঙ্গাচড়ার তিস্তার তীরবর্তী এলাকা ঘুরে দেখাগেছে, পানি বৃদ্ধির ফলে বন্যাকবলিত লোকজন আশ্রয় নিয়েছে উচু স্থানে খোলা আকাশের নিচে, বাঁধ ও আশ্রয়কেন্দ্রসহ আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে।
উপজেলার লক্ষিটারী ইউনিয়নের বাগের হাট আবাসনের থাকা এক নারী জানান, কালকে রাত থাকি বাচ্চা-কাচ্চা নিয়া নিন (ঘুম) না পারি সারারাত জাগি রাত কাটাইছি। কোলোত ছাওয়া নিয়া পানিত আছি। এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি লোকজন আসে নাই। যদি এই নদীর দুই ধারে শক্ত করে বাধ নির্মাণ হতো তাহলে কি আর হামার গুলাক পানিত ডুবে থাকা লাগে। পানিত ডুবি থাকতে থাকতে সরকারি লোকজন আসি ২-৩ কোজি চাল দিয়া যায়, হামরা কি সরকারের কাছে চাউল চাই। হামরা কামাই করি খাবার পাই না। হামার গুলার একটায় দাবি শংকরদহ থাকি বিনবিনা এলাকা পর্যন্ত একটা বেড়িবাঁধ। তাহলে হামরা গুলা বাচ্চা-কাচ্চা নিয়া সুখে শান্তিতে থাকনো হয়।
উপজেলার পানিবন্দি প্রায় শতাধিক স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে, লক্ষীটারি ইউনিয়নের শংকরদহ থেকে কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা এলাকা পর্যন্ত একটি বাঁধ নির্মাণ করা গেলে এসব মানুষের কষ্ট দূর হতো।
কোলকোন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ বলেন, তার ইউনিয়নের প্রায় ৫০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত কোন সরকারি লোকজন খোঁজ খবর নেননি। আক্ষেপ করে এই জনপ্রতিনিধি বলেন, আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজনকে বার-বার বলেছি তিস্তা নদীর ডান তীরে একটা শক্ত বাঁধ নির্মাণের জন্য তারা আমাদের কথা কিছুতেই রাখেননি। বন্যা এলে শুধু আশ্বাস দিয়ে যান কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করেন না তারা।
লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদি বলেন, এবারের এই বন্যায় আমার ইউনিয়নের প্রায় ৭০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে আগাম জাতের আমনক্ষেত। ৮ -১০ দিনে মধ্যে ধানগুলো ঘরে তোলা যেত সে ধান এখন পানির নিচে। পানি বৃদ্ধির কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণসহায়তা দেওয়া হয়নি। আমরা সরকারের কাছে একটি মাত্র দাবী জানাই তারা যেন তিস্তা নদীর ডান তীরে একটি শক্ত বাঁধ নির্মাণ করে দেন।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বাংলাদেশ পানি উন্নায়ন বোর্ড জানিয়েছেন , ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের পানি বৃদ্ধির প্রবণতা কিছুটা কমে আসায় ডালিয়া পয়েন্টে পানি সমতল আগামী ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে । তবে পরবর্তী ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টায় তিস্তা উজনের অংশে (সিকিম, গ্যাংটক) পুনরায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে ফলে সময়ে তিস্তা নদীর পানি সমতল পুনরায় বৃদ্ধি পেতে পারে এবং ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।
গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এরশাদ উদ্দিন বলেন, আমরা বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। স্থানীয় জন-প্রতিনিধিদের কাছে বন্যাকবলিত পরিবারগুলোর তথ্য চাওয়া হয়েছে। জন-প্রতিনিধিদের মাধ্যমে তথ্য এলেই উপজেলর সব স্থানের বন্যাকবলিত মানুষের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।