Connect with us

চাঁপাই নবাবগঞ্জ

বেপরোয়া শরিফার ২২ বছর বয়সে ২৪ বিয়ে!

Published

on

shaifaঅনলাইন ডেস্ক: নাম তার শরিফা খাতুন। বয়স প্রায় ২২। এ পর্যন্ত বিয়ে করেছেন ২৪টি। হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকা। একে একে ২৪টি বিয়ে করলেও দু-একটি ছাড়া অধিকাংশ স্বামীর সঙ্গেই কোনো প্রকার বিয়ে বিচ্ছেদ হয়নি শরিফার।
শরিফার পৈতৃক বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরসংলগ্ন সদর উপজেলাধীন বারঘরিয়া ইউনিয়নের লক্ষীপুর-তাঁতিপাড়া এলাকায়। বাবা শরিফুল ইসলাম, মা জুলেখা খাতুন ওরফে জবেদা। তিন ভাইবোনের মধ্যে শরিফা জ্যেষ্ঠ, মেজ ভাইটির নাম হজরত আলী। ছোট ভাই ৬-৭ বছরের। শরিফার বাবা শরিফুল ইসলাম পেশায় রাজমিস্ত্রি, সৌদি আরব প্রবাসী। অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে গ্রামের বাড়ি বারঘরিয়া থেকে কয়েক বছর আগে বিতাড়িত হয়ে জেলা শহরের স্বরূপনগর-শাহীবাগ মহল্লায় বাসা ভাড়া নিয়ে বিয়ে বাণিজ্য চালাতে থাকেন।
সেখান থেকেও একই কারণে বিতাড়িত হয়ে বিভাগীয় শহর রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করে প্রতারণা চালাতে থাকেন। মা জবেদা খাতুন বর্তমানে রাজশাহী শহরের সাধুর মোড় এলাকায় শরিফাসহ তিন সন্তান ও চট্টগ্রামের ছেলে, চব্বিশ নম্বর জামাতা নিয়ে বসবাস করছেন।
বিষয়টি অনুসন্ধানে মেয়ে ও মা শরিফা-জবেদা চক্রের বিয়ের কাবিননামাসহ বেশ কিছু নথি প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে। কাবিননামায় বিয়ের কনে হিসেবে শরিফার একাধিক নাম ব্যবহার করা হয়েছে। শরিফা খাতুন, তুরজাউন খাতুন, শরিফা খাতুন বৃষ্টি, আবার কোথাও শরিফা নাম উল্লেখ্য রয়েছে। কাবিননামায় কুমারী দাবি করে শরিফার বয়স দেখানো হয়ে ১৮ থেকে ২০ বছর।
চাঁদপুর ফরিদগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম সাহাপুর গ্রামের সেকেন্দার গাজীর ছেলে তেইশ নম্বর প্রতারিত স্বামী সৌদি আরব প্রবাসী নূর হোসেন মুঠোফোনে জানান, ২০১৩ সালে প্রবাস জীবনের ছুটিতে সৌদি থেকে এসে পারিবারিকভাবে ৩ লাখ ১টা দেন মোহরে ১৭ ভরি স্বর্ণ দিয়ে বিয়ে করেন শরিফা খাতুন বৃষ্টিকে।
১৯ লাখ টাকায় রাজশাহীর তেরখাদিয়ায় একটি বাড়ি কিনে দেন শরিফার নামে। দেশে নয় মাস ঘর-সংসার করে ছুটি শেষে সৌদি কর্মস্থলে যাবার সময় চার মাসের গর্ভবতী শরিফাকে নিয়ে যান সঙ্গে। সেখানে শরিফা একমাসও থাকেনি। মা জবেদার প্ররোচনায় ফিরে আসে বাংলাদেশে এবং পেটের পাঁচ মাসের সন্তান নষ্ট করে জানায়, গর্ভপাত হয়েছে। এরপর তাদের সংসার টিকেছিল আরো ১৮-১৯ মাস। এ সময় শরিফার অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন সময় আরো ৩০ লাখ টাকা পাঠায় তার স্বামী। চার মাস পূর্বে মা জবেদার প্ররোচনায় শরিফা চট্টগ্রামের এক যুবককে বিয়ে করে।
লক্ষ্মীপুর-তাঁতীপাড়া গ্রামে বসবাসরত শরিফার ফুফা সফিকুল ইসলাম ও ফুফু সায়েরা বেগম জানান, বিয়ের নামে প্রতারণার কারণে শরিফা বা তার মা জবেদার সঙ্গে তেমন আত্মীয়তা রাখননি তারা।
নূর হোসেনের ছোট ভাই ফরহাদ হোসেন ঘটনার সত্যতা যাচাই-বাছাই করতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে এসে জানান, নূরের সঙ্গে শরিফার তালাক হয়নি। ফরহাদ দাবি করেন, মা জবেদার ইন্ধনে শরিফা একই রকম প্রতারণা করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আব্দুল্লাহ, বদিউজ্জামান, মোসারফ হোসেন, আজাহার আলী, সারোয়ার রহিম আপেল ও রাজশাহীর আহসান হাবিবের সঙ্গে। বিয়ের কাবিনগুলোও সংগ্রহ করেছেন তিনি। তাদের বিরুদ্ধে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীতে চারটি মামলা ও ১০টির অধিক সাধারণ ডায়েরি রয়েছে। তাদের বিচার ও শাস্তি দাবি করে প্রতারিত ৮ স্বামী ও তাদের পরিবার গত শুক্রবার বিকালে চাঁপাই নবাবগঞ্জ প্রেস ক্লাব চত্বরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে।
চাঁপাই নবাবগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম জানান, শরিফা-জবেদা চক্রের প্রতারণার স্বীকার তথাকথিত স্বামী শীষ মোহাম্মদের দায়েরকৃত মামলায় পুলিশ চার্জশিট দিয়েছে। শরিফার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকলেও স্থান পরিবর্তন করায় শরিফাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
রাজশাহী বোয়ালিয়া থানার উপপরিদর্শক মহিউদ্দীন খান জানান, তদন্তে শরিফার ২৪টি বিয়ের সত্যতা পেয়েছেন তিনি।
চাঁপাই নবাবগঞ্জে প্রতারণার স্বীকার তথাকথিত স্বামী শীষ মোহাম্মদ জানান, শরিফার প্রতারণামূলক প্রতিটি বিয়ের ক্ষেত্রে মা জবেদা বিদেশ ফেরত প্রবাসী ও সম্পদশালীদের বেছে নিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। নিজের দুর্ভোগ-হয়রানীর বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি জানান, তার সঙ্গে শরিফার বিয়ে হয়নি। কনে দেখতে গিয়ে তাকে ফাঁসিয়ে দেয়া হয়েছে। ভুয়া কাবিননামায় ১৫ লাখ টাকা দেনমোহর দাবি করে তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করা হয়। প্রেক্ষিতে আত্মরক্ষার্থে তিনি শরিফা খাতুন, তার মা জবেদা বেগম এবং রাজশাহী মহিষবাথান এলাকার দারুস সালাম মাদরাসার প্রভাষক ও বিয়ের কাজী আব্দুস সাত্তারের বিরুদ্ধে ২০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির মামলা করেন। যার চার্জশিট পুলিশ চাঁপাইনবাবগঞ্জ আদালতে দাখিল করেছেন এবং শরিফার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে পুলিশের কাছে।
এ বিষয়ে গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার শরিফা ও তার মা জবেদার বাড়ি রাজশাহীর সাধুর মোড়ে গিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কথা বলতে রাজি হননি তারা। একইভাবে দুদিন মহিষবাথান কাজী অফিসে গেলেও সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন কাজী আব্দুস সাত্তার। শরিফার বিয়ে বাণিজ্যের বিষয়টি মিথ্যা, ভিত্তিহীন দাবি করে ফোনেও কোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে অনীহা প্রকাশ করেন শরিফা ও তার মা জবেদা। বিয়ের কাজী আব্দুস সাত্তারও নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *