Connect with us

খুলনা বিভাগ

যশোরের শার্শায় বিষক্ত আমের মিছিল, ক্ষতিকর কেমিক্যালে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকিতে 

Published

on


মিলন কবির-

যশোরের শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া বাগুড়ী বেলতলা আমের বাজার ‘বিষের বাজারে’ পরিণত হয়েছে। আমগুলো টসটসে রাখতে ব্যবহার করা হচ্ছে নানা কেমিক্যাল; যা মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
বাগুড়ী গ্রামের এক যুবলীগ ক্যাডারের তত্ত্বাবধানে এই কর্মকাণ্ড চলছে; যিনি নিজেও একজন আম ব্যবসায়ী। স্থানীয় প্রশাসন জনস্বার্থবিরোধী এই কাজ বন্ধে অজ্ঞাত কারণে ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
এছাড়া, বাজারে আসা আমচাষি, ব্যবসায়ী, পাইকার, আড়তদারদেরও জিম্মি করে ফেলেছেন সরকারি দলের ওই ক্যাডার। তবে এ সব অসাধু কাজে নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছেন তিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাগআঁচড়া বাগুড়ী বেলতলা বাজারে নিবন্ধিত আম ব্যবসায়ী ৫২ জন। এসব ব্যবসায়ীকে এ, বি, সি- এই তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে ‘হপ্তা’ আদায় করছেন সিন্ডিকেটের হোতা যুবলীগ ক্যাডার শাহাজান আলী। এ ক্যাটাগরির পাঁচ হাজার, বি ক্যাটাগরি দুই হাজার এবং সি ক্যাটাগরির ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দেড় হাজার টাকা হারে ‘হপ্তা’ আদায় করা হচ্ছে। এছাড়াও অনিবন্ধিত প্রায় দেড়শ’ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে একইভাবে মোটা টাকা আদায় করা হচ্ছে। নির্বিঘ্নে ব্যবসার স্বার্থে আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা এই জুলুম মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে চাষি ও ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পাশাপাশি বেড়ে যাচ্ছে আমের দাম। এর ওপর তাদের কাছ থেকে আড়তদাররা খাজনা, কমিশন ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অনুদান বাবদ শতকরা দশ টাকা হারে কেটে নেন। দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা দরে প্রতি মণ আম বিক্রি হলে চাষিদের কাছ থেকে দুইশ’ থেকে আড়াইশ’ টাকা করে আদায় করা হয়। এ বাজারে প্রতিদিন হাজার হাজার মণ আম বেচাকেনা হচ্ছে। যা থেকে প্রতিদিন সিন্ডিকেটটি আদায় করছে লাখ লাখ টাকা।
এদিকে আমের রঙ ভালো করার জন্য, পাকানোর জন্য ও আম যাতে না পচে তার জন্য এখানে রাত-দিন শত শত মণ আমে স্প্রে করে মেশানো হচ্ছে ভারত থেকে চোরাই পথে আমদানি করা রাইস মিথানল, কারবাইড সালফেট, ফরমালিনসহ বিভিন্ন প্রকারের বিষাক্ত কেমিক্যাল; যা দেহের বিভিন্ন কোষ ধ্বংস করে মানুষকে দ্রুত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে।
যশোরের অন্যতম বৃহৎ এই বাজারে প্রত্যেক মৌসুমে হাজার হাজার মণ বিভিন্ন প্রজাতির আম ওঠে; যার বেশিরভাগই ঢাকা, খুলনাসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোতে চালান করা হয়। এই বাজারে দুই শতাধিক আমের আড়ত রয়েছে। এসব আড়তেরও আছে এক বা একাধিক গুদাম ঘর। তাছাড়া বাজারের আশপাশে প্রায় শতাধিক বাড়ি নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে প্রতি মৌসুমে স্প্রেসহ আম রাখার কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। মৌসুমে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শত শত ব্যাপারি এই বাজারে আসেন। আড়তে আম বিক্রি হওয়ার পর তা চলে যায় আগে থেকে নির্দিষ্ট করা গুদাম ঘর বা বাসাবাড়িতে। এর পর ঘরের মেঝেতে আম বিছিয়ে রাইস মিথানল, কারবাইড সালফেট, ফরমালিন একসঙ্গে মিশিয়ে স্প্রে করা হয়। ফ্যানের বাতাসে কিছুক্ষণ শুকানোর পর প্লাস্টিক কার্টন অথবা ক্যারেটে পুরনো খবরের কাগজ মুড়িয়ে প্যাকিং করা হয়। এর পর ট্রাকে লোড দিয়ে তা পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, রাইস মিথানল, কারবাইড সালফেট, ফরমালিনসহ বিষাক্ত কেমিক্যাল একসঙ্গে মিশিয়ে স্প্রে করা আম খেলে মানুষের পেটের পীড়া, লিভার সিরোসিস, কিডনি বিকল, হৃদযন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতিসহ দেহের কোষকলা ধ্বংস হয়ে শারীরিক বিপর্যয় ঘটেতে পারে। এমনকী অধিক মাত্রায় এই আম খেলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
যোগাযোগ করা হলে এই অসাধু কারবারের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছেন যুবলীগ ক্যাডার হিসেবে পরিচিত শাহাজান আলী।
তিনি বলেন, ‘আমিও আমের ব্যবসা করি। এখানে আমরা সবাই মিলে বাজারটি নিয়ন্ত্রণ করি। বাজার থেকে যে টাকা উঠানো হয় সেখান থেকে একটি অংশ এখানকার বিভিন্ন মসজিদ-মাদরাসায় প্রদান করা হয়। তারপর যা থাকে, তা বাজারে যারা পরিশ্রম করে তাদের দেওয়া হয়। আমি কোনো চাঁদাবাজি করি না।’
অন্য এক প্রশ্নে শাহাজান আলীর ভাষ্য, ‘আমে বিষাক্ত কেমিক্যাল স্প্রে করার বিষয়টি আমার জানা নেই ৷

জে-থার্টির

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *