Connect with us

দেশজুড়ে

রাজশাহী চেম্বারের সাবেক প্রশাসকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার

Published

on

Rajshahi-Al-Leader-Tuku-Agaরাজশাহী সংবাদদাতা: রাজশাহীতে এবার চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগ অর্থ সম্পাদক জিয়াউল হক টুকুর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ রোববার বিকাল ৪টার দিকে রাজশাহী সিটি করপোরেশন ভবনের বিপরীত দিকে অবস্থিত নিজের চেম্বার থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
এদিকে এই আওয়ামী লীগ নেতার গুলিতে নিহতের ঘটনা নিয়ে নানা রহস্যের জন্ম দিয়েছে। পুলিশ বলছে, বৈধ অস্ত্র চেম্বারে বসে পরিস্কার করতে গিয়ে নিজের গুলিতেই মারা গেছেন টুকু। তবে নিহতের স্বজনদের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, তাকে পরিকল্পিতাবে চেম্বারের ভেতরে ঢুকে হত্যা করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পারিবারিক সূত্র জানায়, রোববার দুপুরের খাবার সেরে জিয়াউল হক টুকু নগরীর গোরহাঙ্গা মোড়ে (নগর ভবনের বিপরীতে) অবস্থিত তার চেম্বারে যান। কিন্তু টুকুর এক নিকটাত্মীয় বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও রিসিভ করেননি টুকু। পরে তার আশেপাশের লোকজন তার চেম্বারে এসে টুকুকে রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন। এসময় বোয়ালিয়া থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে টুকুর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদত হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, ‘টুকুর নামে লাইসেন্স করা পিস্তল রয়েছে। সেটি সার্বক্ষণিক তার কাছেই থাকতো। তঘটনাস্থলে গিয়েও দেখা গেছে, তার বুকের বাম পাশে একটি গুলিবিদ্ধ হয়েছে এবং তার ব্যবহৃত পিস্তলটি পাশে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তার ব্যবহৃত পিস্তল পরিষ্কার করতে গিয়েই নিজের গুলিতে নিহত হয়ে থাকতে পারেন। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে এব্যাপারে আরো স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে বলে আমাদের সময়কে জানান তিনি।
এদিকে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, দীর্ঘদিন থেকে তার বৈধ অস্ত্র থাকলেও এমন ঘটনা ঘটার কোনো সম্ভাবনা নেই। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তবে কারা এমন হত্যাকা- ঘটাতে পারে সেব্যাপারে পরিবারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জিয়াউল হক টুকু তার বৈধ অস্ত্র অবৈধভাবে ব্যবহার করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গতবছরের ১২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে জিয়াউল হক টুকু তার লোকজন নিয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলের সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা গোলাম আম্বিয়ার কার্যালয়ে যান। এ সময় তিনি ওই কর্মকর্তার কাছে তার দরপত্রের ফাইলে স্বাক্ষর হয়েছে কিনা জানতে চান। জবাবে ওই কর্মকর্তা জানান, ফাইলে কিছু সদস্যা রয়েছে। তাই স্বাক্ষর হয়নি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে জিয়াইল হক টুকু তার ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে তাকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে কার্যালয় থেকে বের হয়ে আসেন। তিনি কার্যালয়ের বাইরে এসে পকেট থেকে পিস্তল বের করে তিনটি ফাঁকা গুলি ছোড়েন। এরপর চলে যান। পরে ওই কর্মকর্তার দরজার দেয়ালে গুলির দাগ পাওয়া গেছে পুলিশ জানায়। এঘটনা ওই দিন জিয়াউল হক টুকুর বিরুদ্ধে ওই কর্মকর্তা অস্ত্র ও দ্রুত বিচার আইনে বোয়ালিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তিনি কিছুদিন কারাভোগও করেন।
সূত্রে জানা গেছে, ৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগের করার সুবাদে টুকু রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন দপ্তরে ঠিকাদারির ব্যবসা করতেন। বিশেষ করে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে, পানি উন্নয়ন বোর্ড, কাস্টমস, বরেন্দ্র উন্নয়ন বহুমুখী কর্তৃপক্ষ, কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, সড়ক ও জনপদ দপ্তরসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে অবৈধভাবে ঠিকাদারি ব্যবসা করতেন বিভিন্ন সময় এই অস্ত্র দেখিয়ে কর্মকর্তাদের ভয়ভীতিও দেখিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, তিনি ব্যবসায়ী না হয়েও রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির পদ জোর করে দখল করে নেন। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল থেকে ২০১২ সালের ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত পদটি দখল করে রেখেছিলেন। এ সময় ২০১১ সালের ১৯ আগস্ট তার বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী সম্মেলনের নামে বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রায় ২৫ লাখ টাকা চাঁদাবাজির রয়েছে। এছাড়া সম্মেলনের জন্য চেম্বার থেকে ৬ লাখ টাকা ঋণ নেন। যা এখন পর্যন্ত পরিশোধ করতে পারেননি তিনি।
বিভিন্ন কারণে তিনি এভাবেই সমালোচিত ও আয়োচিত হয়েছিলেন। এজন্য দলীয় অনেক নেতাকর্মীও তার শত্রুুতে পরিণত হয়। তার কারণে রাজশাহী জেলা ও মহানগর নেতাকর্মীরা অনেকটা তোটস্থ ছিলেন। তবে এসব কারণেই দুর্বৃত্তের গুলিতে তিনি নিহত হয়ে থাকতে পারেন বলে অনেকেই তাৎক্ষণিকভাবে ধারণা করছেন।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *