Connecting You with the Truth

রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদ জানাল হেযবুত তওহীদ

নতুন করে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিপীড়নে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা। তবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের ক্ষেত্রেও তারা সীমান্তরক্ষীদের বাধার মুখোমুখি হচ্ছে। ফলে অনেককেই আশ্রয় নিতে হচ্ছে ‘নো ম্যান্স ল্যান্ড’ এ। ছবি- আল জাজিরা
স্টাফ রিপোর্টার:
গতকাল এক লিখিত বিবৃতিতে চলমান রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে হেযবুত তওহীদ। হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মসীহ উর রহমানের সাক্ষরিত বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের প্রতি নির্যাতন বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও বাংলাদেশ সরকারের প্রতি বেশ কিছু দাবি উত্থাপন করা হয়।
বিবৃতিতে মসীহ উর রহমান বলেন, ‘হেযবুত তওহীদের অবস্থান সকল প্রকার অন্যায়ের বিরুদ্ধে। ধর্ম-বর্ণ-দল-মত মুখ্য নয়, অন্যায় যে-ই করুক হেযবুত তওহীদ তার বিরুদ্ধেই সোচ্চার। সম্প্রতি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর পুনরায় যেভাবে নির্যাতন,হত্যা, ধর্ষণ, উচ্ছেদকরণ ইত্যাদি শুরু হয়েছে তাতে বিশ্ব বিবেক আজ স্তম্ভিত। বিবিসির সর্বশেষ তথ্যমতে গত এক সপ্তাহে ২৭ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা নতুন করে মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া হাজার হাজার রোহিঙ্গা দুই দেশের সীমান্তমধ্যবর্তী স্থানে আটকে আছে। নাফ নদীতে নৌকা ডুবে প্রায়শই ভেসে আসছে রোহিঙ্গা নারী-শিশুর লাশ। জাতিসংঘের ঘোষণা মোতাবেক- এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচাইতে নির্যাতিত জনগোষ্ঠী হচ্ছে এই রোহিঙ্গা মুসলমানরা। মিয়ানমার সরকারের অত্যাচার-নিপীড়নের মুখে দেশটির রাখাইন রাজ্যের প্রায় পুরো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীই এখন উদ্বাস্তু হবার পথে। মানবজাতির ইতিহাসে এই ঘটনা চরম লজ্জার, চরম দুঃখের।” তিনি বলেন, “এমন পৈশাচিক বর্বরোচিত মানবতাবিরোধী ঘটনা প্রত্যক্ষ করে কোনো সুস্থ, বিবেকবান মানুষ স্থির থাকতে পারে না। মুসলিম জাতি যদি আজকে বিশ্বজুড়ে ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারত, তাহলে মুসলিমদের বিরুদ্ধে এতবড় দুঃসাহস কেউ দেখাতে পারত না।” আল্লাহ ও রসুলের নির্দেশ অমান্য করে হাজারো ভাগে বিভক্ত হবার পরিণতিতে এই জাতিকে আরও কত অপমান-লাঞ্ছনা ভোগ করতে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
হেযবুত তওহীদের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘মানুষ জন্মগতভাবে কিছু অধিকার লাভ করে থাকে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে পৃথিবীতে বসবাস করার অধিকার। রোহিঙ্গাদের এই অধিকারটি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। হাজার বছর ধরে রাখাইনে বসবাস করে আসলেও বলা হচ্ছে তারা ‘বিদেশি’, বাঙালি। সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে তাদেরকে স্বদেশ থেকে উচ্ছেদের জন্য জাতিগত নিধন চলছে। মিয়ানমার সরকারের বোঝা উচিত পৃথিবীতে তাদের যেমন বসবাসের অধিকার আছে, তেমনি রোহিঙ্গাদেরও আছে। তাদের স্বদেশ থেকে উৎখাত করে দেওয়ার অধিকার কারো নেই।” তিনি বলেন, বৌদ্ধ ধর্মের অন্যতম প্রধান শিক্ষা হলো, অহিংসা পরম ধর্ম। “সেখানে রোহিঙ্গাদের প্রতি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মিয়ানমার সরকার ও সংখ্যাগরিষ্ট জনগোষ্ঠীর এ কোন্ ধরনের আচরণ?” প্রশ্ন করেন জনাব মসীহ উর রহমান। তিনি বলেন, “মানবতার বিরুদ্ধে এতবড় অন্যায়ের বিরাট মাসুল একদিন মিয়ানমার সরকারকে অবশ্যই গুনতে হবে।”
রোহিঙ্গা নিপীড়ন প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ব্যর্থ বলে মন্তব্য করে হেযবুত তওহীদের সাধারণ সম্পাদক বিবৃতিতে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বক্তব্য ও আইন-কানুনের কোনো পরোয়াই করছে না মিয়ানমার সরকার। আবার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও যে খুব কার্যকরী ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে তাও নয়। জাতিসংঘকে আমরা বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে শক্তিশালী ভূমিকায় দেখতে পেলেও রোহিঙ্গা ইস্যুতে তারা কাগুজে বাঘের ন্যায় আচরণ করছে। নিন্দা ও উদ্বেগ তো সাধারণ মানুষই জানাতে পারে, কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষরা যা পারি না তা খুব সহজেই জাতিসংঘ করতে পারত। পৃথিবীর বৈধ কর্তৃপক্ষ হিসেবে বহু পূর্বেই জাতিসংঘের উচিত ছিল শক্তি প্রয়োগ করে হলেও এ অত্যাচার বন্ধ করা। সুদূর উত্তর আফ্রিকায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শান্তি স্থাপনে ভূমিকা রাখছে, কিন্তু বাড়ির কাছে অশান্তির আগুন জ্বলছে সেখানে জাতিসংঘের কোনো শান্তিরক্ষী নেই। এর কারন কি তা আমাদের বোধগম্য নয়। সম্প্রতি জাতিসংঘের যৌথ বিবৃতি প্রদানের প্রস্তাবে চীন ভেটো দিয়েছে। অর্থাৎ সুস্পষ্ট এই অন্যায়ের বিরুদ্ধেও পরাশক্তিগুলো একাত্মতা পোষণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাদের এই দ্বিধাবিভক্তি সত্যিই নিন্দনীয়!’
সবশেষে হেযবুত তওহীদের পক্ষ থেকে দাবি উত্থাপন করে তিনি বলেন, ‘এমতাবস্থায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আমাদের দাবি হচ্ছে, যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গাদের প্রতি চলমান অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। বিশ্ববিবেক সোচ্চার হোক। প্রয়োজনে জাতিসংঘ শক্তি প্রয়োগ করুক, পরাশক্তিগুলো সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিক। যারা ইতোমধ্যেই উদ্বাস্তু হয়েছে তাদেরকে শরণার্থী শিবিবের মানবেতর জীবন থেকে ফিরিয়ে নিজেদের ভিটেমাটিতে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক। যাদের সহায়-সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হোক। সেই সাথে রোহিঙ্গাদেরকে নাগরিকত্ব প্রদান করতে মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করা হোক।”
রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক আচরণ করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মসীহ উর রহমান বলেন, “বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান হচ্ছে, আপাতত রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশে নিরাপদে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেওয়া হোক এবং এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে কূটনৈতিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে মিয়ানমার সরকারের উপর শক্ত চাপ প্রয়োগের প্রচেষ্টা চালানো হোক। এ ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ইত্যাদি অতি প্রয়োজনীয় মানবিক সহযোগিতার দরকার হলে সরকার দেশের নাগরিকদেরকে তাতে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। আশা করা যায় এই কাজে সরকার দেশের সকল দল-মত-শ্রেণি-পেশা-ধর্ম-বর্ণের মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতা লাভ করবে। তবে শেষ কথা হচ্ছে- রোহিঙ্গাদের প্রতি চলমান অত্যাচার, হত্যাকা-, দেশান্তরিতকরণ বন্ধ করতেই হবে এবং তাদেরকে নিজেদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে বাপ দাদার ভিটে-মাটিতেই পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। তার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে যতটা সম্ভব আপসহীন অবস্থানে থেকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শক্ত লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।”

Comments
Loading...