Connect with us

দেশজুড়ে

লক্ষীপুরে সংবাদ সম্মেলন করেছে অরাজনৈতিক আন্দোলন হেযবুত তওহীদ

Published

on

লক্ষীপুর প্রতিনিধি: ধর্মনুভুতিকে ব্যাবহার করে গুজব রটিয়ে ভয়াবহ তান্ডবের মাধ্যমে নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে হেযবুত তওহীদের ২ সদস্যকে নৃশংসভাবে হত্যা, বাড়ি-ঘড় লুটপাট ও ধ্বংসযজ্ঞের সাথে জড়িতদের বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে মানবতার কল্যানে নিবেদিত অরাজনৈতিক আন্দোলন হেযবুত তওহীদ । লক্ষীপুর রায়পুর উপজেলা হেযবুত তওহীদ এর অস্থায়ী কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের
শুরুতে হেযবুত তওহীদ কর্তৃক আয়োজিত দেশব্যাপী জঙ্গিবাদ বিরোধী সভা-সমাবেশের উপর একটি প্রামান্যচিত্র প্রদর্শন করা হয় । প্রামান্যচিত্রে দেখানো হয় সারা দেশে হেযবুত তওহীদের উদ্যোগে গত কয়েক বছরে ৮০ হাজারেরও বেশি সভা-সেমিনার, প্রামান্যচিত্র প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জঙ্গিবাদবিরোধী জনমত গড়ে তোলা হয়েছে । এই আন্দোলনটি গত কয়েক বছর ধরে রাজধানীসহ দেশের প্রায় সবকটি জেলা, থানা এমনকি গ্রামে-গঞ্জে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জনসচেতনতামূলক কাজ করে যাচ্ছে । জঙ্গিবাদকে ইস্যু করে যখন একটির পর একটি মুসলিম দেশকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে, বাংলাদেশকে নিয়েও সেই একই ষড়যন্ত্র চলছে তখন দেশকে নিরাপদ রাখতে , ষোল কোটি মানুষকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, ধর্মব্যাবসা, অপরাজনীতি এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হওয়া অপরিহার্য । হেযবুত তওহীদ জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদসহ যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের পক্ষে বাংলাদেশের ষোল কোটি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য নানামুখ ী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে । এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে এ প্রামান্যচিত্রে ।

আরো একটি প্রামান্যচিত্রে দেখানো হয় জঙ্গিবাদ, ধর্মব্যাবসা ও অপরাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার কারনে নোয়াখালীতে গত বছর ১৪ মার্চ ধর্মব্যাবসায়ী জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীর উস্কানীতে হেযবুত তওহীদের মাননীয় এমামের বাড়িতে হামলা চালিয়ে আন্দোলনের দুইজন কর্মীকে নৃশংসভাবে জবাই করে হত্যা করা হয় ও বাড়িঘড় লুটপাট-অগ্নিসংযোগ করার ঘটনার নেপথ্য কারন কি ছিল তাও বিভিন্ন ডকুমেন্টের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় । সংক্ষিপ্ত প্রামান্যচিত্র প্রদর্শনীর পর সংবাদ সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্যের উপর প্রেস-বিজ্ঞপ্তি পাঠ করেন লক্ষীপুর জেলা হেযবুত তওহীদের সভাপতি জিল্লুর রহমান মানিক। ”তিনি সুস্পষ্টভাবে জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়ীকতার বিরুদ্ধে হেযবুত তওহীদ কিভাবে কাজ করে যাচ্ছে তা তুলে ধরেন এবং হেযবুত তওহীদ কি কি প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে, কেন হচ্ছে সে বিষয়েও আলোকপাত করেন ।

তিনি বলেন, আন্দোলনের প্রতিষ্ঠালগ্ন অর্থাৎ ১৯৯৫ থেকেই আমাদের বিরোধিতায় অবতীর্ণ হয়েছে এক শ্রেণির ধর্মব্যবসায়ী। তারা ওয়াজে, খোতবায়, হাটে বাজারে সর্বত্র অপপ্রচার চালিয়ে মানুষকে আমাদের উপর হামলা করতে উস্কানি দিয়ে গেছে। এর ফলে আমরা বহু জায়গায় বহুবার আক্রান্ত হয়েছি। আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
.
আমাদেরকে লক্ষ্যবস্তু বানানোর কারণ, একমাত্র আমরাই এদেশে ধর্মের দোহাই দিয়ে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদসহ ধর্মের নামে প্রচলিত প্রতিটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিজেদের জীবন-সম্পদ উৎসর্গ করে আদর্শিক লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। যারা ধর্মকে তাদের রুটি রুজি ও কায়েমী স্বার্থেও হাতিয়ার বানিয়ে নিয়েছে, আমাদের এই সত্য তুলে ধরার দরুন তাদের মুখোশ খুলে যাচ্ছে, জনসাধারণের উপর থেকে তাদের প্রভাব হারিয়ে যাচ্ছে।”

গত বছর এই দিনে সোনাইমুড়িতে যে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছিল সেটির বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, সেদিন স্থানীয় দাঙ্গা সৃষ্টিকারী আলেমরা নিকটবর্তী এলাকার বিভিন্ন মাদ্রাসা থেকে তাদের ছাত্রদের নিয়ে হেযবুত তওহীদের মাননীয় এমামের বাড়িতে আক্রমণ করে। সেখানে গত পনের বছর থেকে অপপ্রচার চালানো হয়েছে যে হেযবুত তওহীদের সদস্যরা নাকি নামাজ পড়ে না। তাদের এই কথাটি সর্বৈব মিথ্যা, কারণ আমরা নামাজ পড়ি ঠিকই, কেবল যে ইমামগণ নামাজ পড়ানোর বিনিময়ে অর্থ গ্রহণ করেন তাদের পেছনে পড়ি না। এর কারণ আল্লাহ ধর্মীয় কাজের বিনিময় গ্রহণকে হারাম করেছেন।
.
ধর্মব্যবসায়ীদের এই রটনা যে ভুল তা মানুষের সামনে সুস্পষ্ট করার জন্য আমরা একটি মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেই। তখন ধর্মব্যবসায়ীরা নতুন করে প্রচারে নামে যে, ‘হেযবুত তওহীদ খ্রিষ্টান, তারা গির্জা নির্মাণ করছে’। তারা সকাল থেকে স্থানীয় কয়েকটি মসজিদের মাইকে বলতে শুরু করল যে, ‘গির্জা ভাঙ্গো খ্রিস্টান মারো।’ তাদের উসকানিতে স্থানীয় জামায়াত, শিবির, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, হেফাজতে ইসলামের সন্ত্রাসীরা সহ মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকগণ নির্মাণাধীন মসজিদটিকে তারা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিল।
.
চার পাঁচ ঘণ্টা ধরে চলল আক্রমণ। আমাদের প্রত্যেকে মারাত্মকভাবে আহত হলেন। অবশেষে যখন থানা পুলিশ এলো তখন সন্ত্রাসীরা তাদের সামনেই মো. সোলায়মান খোকন ও ইব্রাহীম রুবেল নামে আমাদের দুজন সদস্যকে নির্মমভাবে মেরে মাটিতে ফেলে দিল। তারপর তাদের বুকের উপর চেপে বসে কয়েকজন তাদের হাতপায়ের রগ কেটে দিল, গরু জবাই করা লম্বা ছুরি দিয়ে জবাই করে ফেলল, তাদের চোখ উপড়ে নিল। হাত পায়ের রগ কেটে দিল। এক পর্যায়ে পেট্রল ঢেলে তাদের শরীরে আগুন জ্বালিয়ে দিল।
.
যখন পুলিশ আমাদের আহত অবরুদ্ধ মরণাপন্ন সদস্যদেরকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়িতে তুলল তখন তাদেরকে গাড়ি থেকে নামিয়ে হত্যা করার জন্য গভীর রাত পর্যন্ত পুলিশ ও বিডিআর বাহিনীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে গেল।”
.
ঘটনার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে হেযবুত তওহীদ নেতৃবৃন্দ বলেন যে, তাদের দায়েরকৃত মামলার মোট ৮৩ জন আসামির মধ্য থেকে অল্প কয়েকজনকে আজ পর্যন্ত আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তারা সবাই এখন জামিনেই আছে এবং সকল আসামিই এলাকায় দাপটের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং আবারো অনুরূপ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটানোর হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছে।
.
হেযবুত তওহীদ নেতৃবৃন্দ সকল আসামিদের এবং যারা ঘটনার পূর্বে নামঠিকানা বিহীন উস্কানিমূলক হ্যান্ডবিল বিতরণ করেছিল সেই নেপথ্য নায়কদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি পেশ করেন। উক্ত ঘটনায় ভস্মীভূত ঘরসমূহ পুনর্নিমাণ ও ক্ষতিগ্রস্থ হেযবুত তওহীদ সদস্যদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবিও তারা জানান।

অনুষ্ঠানে প্রধান অথিতী ছিলেন হেযবুত তওহীদের যুগ্ন সাধাঃসম্পাদক শপিকুল আলম উখবাহ তিনি গনমাধ্যম কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের কাছে আমরা দুটো বিষয় আশা করি । প্রথমত, হেযবুত তওহীদ সম্পর্কে ব্যাপক অপপ্রচার হয়েছে । আপনারা হেযবুত তওহীদ সম্পর্কে জানবেন, বুঝবেন এবং আমাদের সম্পর্কে যাবতীয় অস্পষ্টতা ও সন্দেহ থেকে মুক্ত হবেন । দ্বিতীয়ত, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে আমরা যে প্রস্তাবনাগুলো তুলে ধরছি তা বিবেচনা করবেন । যদি তা প্রয়োগযোগ্য ও বাস্তবসম্মত হয় তাহলে জাতির স্বার্থে তা প্রচার করার ক্ষেত্রে আমাদেরকে সহযোগীতা করবেন আমরা নি:স্বার্থভাবে শুধুমাত্র মানবতার কল্যানে কাজ করে যাচ্ছি ।” সবশেষে তিনি সকলের সহযোগীতা ও দোয়া কামনা করেন ।

উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় পিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিক বৃন্দ ও রায়পুর উপজেলা হেযবুত তওহীদের সভাপতি আব্দুর রহমান,ও প্রচার সম্পাদক ফেরদৌস নবি, জেলা দপ্তর সম্পাদক কাউসার আহমেদ এবং জেলা কমিটির অর্থ সম্পাদক রকি হোসেন । বাবুল পাটোয়ারী নিহত রুবেল এর স্ত্রী ,বোন সহ আরও স্থানীয় হেযবুত তওহীদের সদস্যগন ।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *