Connect with us

দেশজুড়ে

১৬ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে সুন্দরবন, বছরে জেলেদের থেকে ৫০ কোটি টাকা আদায়

Published

on

সুন্দরবন sundarbanএস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট: সুন্দরবনে বাগেরহাটের চাঁদপাই ও শরণখোলা, পশ্চিশ সুন্দরবনের খুলনা ও সাতীরা রেঞ্জে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ১৬টি বনদস্যু বাহিনী। এসব দস্যু বাহিনীর টোকেন ছাড়া জেলেদের মৎস্য আহরন সম্ভব হচ্ছে না। প্রতি বছর বনদস্যুরা প্রায় ২ লাখ জেলে ও বাওয়ালীদের কাছ থেকে মুক্তিপণের দাবিতে আদায় করছে ৫০ কোটি টাকা। আর টোকেন বিহিন জেলেদের চাঁদার দাবিতে অপহরন ও মুক্তিপন আদায় করা হচ্ছে। বর্তমানে দস্যু বাহিনীর এমন বেপরোয়া কর্মকান্ডে আতংকিত হয়ে পড়েছে উপকূলীয় অঞ্চলের জেলে ও তাদের পরিবারগুলো। সাপ্তাহিক, পাকি, মাসিক ও গোন এবং সিজিন হিসাবে ৫ থেকে ২০ হাজার টাকার বিনিময় দস্যুদের সরবরাহকৃত এ টোকেন নিতে হচ্ছে জেলেদের। তাছাড়া জাল, নৌকা, ডিজেল, চাল, ডাল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় মালামালও নিয়ে যাচ্ছে। এই বনদস্যু দলগুলোর হাতে মুক্তিপনের দাবীতে প্রায় প্রতিদিনই অপহৃত হচ্ছে হাজার- হাজার জেলে-বাওয়ালী।
গত ৩ বছরে র‌্যাব ও কোস্টগার্ডের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এসব বাহিনীর অন্তত ৯ জন বনদস্যু বাহিনী প্রধানসহ ৭৯ জন বনদস্যু আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে মারা গেলেও থামেনি দস্যুতা। পরে ওই সব বাহিনীর সেকেন্ডইন কমান্ডাররা পূনরায় বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তাদের নামে বাহিনী গড়ে পুরোদমে জেলে অপহরনসহ নানা অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়ে যেতে থাকে। এ কারনে কমছেনা সুন্দরবনের দস্যু বৃত্তি। ৩ বছরে বিভিন্ন দস্যু বাজিনীর হাতে নিহত হয়েছে প্রায় ২শ জেলে। আর এসব বাহিনীর হাতে প্রতিবছর গড়ে অপহৃত হয় ১ হাজার জেলে-বানজীবী। অপহৃতদের বেশির ভাগই মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মুক্তি পান।
সুন্দরবনের দুবলার ফিসার ম্যান গ্রুপের হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর বনদস্যুরা প্রায় ২ লাখ জেলে ও বাওয়ালীদের কাছ থেকে মুক্তিপণের দাবিতে আদায় করছে ৫০ কোটি টাকা। আর মুক্তিপণ না পেলে বনদস্যুদের হাতে প্রাণ হারাতে হচ্ছে অসংখ্য জেলে-বনজীবীদের।
আইন শৃংখলা রাকারী বাহিনী, সুন্দরবন বিভাগ ও জেলে-বাওয়ালীদের কাছ থেকে জানা গেছে, পূর্ব ও পশ্চিম সুন্দরবনের ৪টি রেঞ্জে বর্তমানে ১৬ টি বনদস্যু বাহিনী সক্রিয় রয়েছে। বাহিনীগুলো হলো, আমজাদ বাহিনী, ফরহাদ বাহিনী, শহিদুল বাহিনী, জাহাঙ্গীর বাহিনী, জাকির বাহিনী, রুবেল বাহিনী, বাকিবিলাহ বাহিনী, মুর্তজা বাহিনী, আনোয়ার বাহিনী, মাহবুব বাহিনী, তছলিম বাহিনী, নাসির বাহিনী, জিহাদ বাহিনী, জুলফিকার আলী গামা বাহিনী, দুই ভাই বাহিনী ও রেজাউল ওরফে শীর্ষ বাহিনী।সুন্দরবনে বনদস্যুদের মধ্যে বর্তমানে ৬টি বাহিনী বেশি শন্তিশালী অবস্থানে রযেছে।
এ বাহিনীগুলোর মধ্যে বাগেরহাটের চাঁদপাই রেঞ্জ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে মুর্তজা বাহিনী ও শরণখোলা রেঞ্জ অঞ্চল নিয়ন্ত্রন করে রেজাউল ওরফে শীর্ষ বাহিনী।সাতীরা রেঞ্জের উত্তর দিক নিয়ন্ত্রণ করে আমজাদ বাহিনী ও দণি দিক নিয়ন্ত্রণ করছে জাকির বাহিনী। খুলনা রেঞ্জের উত্তর এবং দণি পাশ নিয়ন্ত্রণ করে মাহবুব বাহিনী ও জাহাঙ্গীর বাহিনী।তবে আইনশৃংখলা রা বাহিনীর তথ্যানুযায়ী, সুন্দরবনে অর্ধশতাধিক সদস্য, দেশি-বিদেশী অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী শীর্ষ বাহিনী ও জাহাঙ্গীর বাহিনী। এ বাহিনীর সবচেয়ে বেশি তৎপরতা দেখা যায় বাগেরহাট ও খুলনা অঞ্চলে। এদের চাঁদা না দিলে সুন্দরবনে জেলেদের মাছ ও গোলপাতা সংগ্রহ করতে দেওয়া হয় না।
সুন্দরবনের বাঘ উপকূলবাসীর কাছে বনাঞ্চলের রাকবজ হিসেবে পরিচিত থাকলেও বর্তমানে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের কাছে বাঘ আতঙ্ক এখন গৌন হয়ে পড়েছে। বর্তমানে মূর্তিমান আতঙ্ক হিসাবে দেখা দিয়েছে বনদস্যু বাহিনী গুলো। সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগর এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে ওঠা দস্যুদের হামলা, লুটপাট, অপহরণে এখন অতিষ্ঠ পুরো দণি-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকা।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম জানান, সুন্দরবনরে বনরেিদর চেয়ে বনদস্যুদের রয়েছে অত্যাধুনিক দেশি-বিদেশী অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ।
সুন্দরবনের দুবলা ফিসার ম্যান গ্রুপের চেয়ারম্যান ও মুক্তিযুদ্ধ কালিন সুন্দরবন অঞ্চলের সাব সেক্টর কমান্ডার মেজর (অবঃ) জিয়াউদ্দিন জানান, তার কাছে তথ্য রয়েছে কয়েকটি বনদস্যু বাহিনী মৌলবাদি ও চরমপন্থীদের সাথে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। রাজনৈতিক পৃষ্টপোষকতায় থাকা এসব বনদস্যু বাহিনী গুলোর গটফাদারদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় না আনা গেলে সুন্দরবনের দস্যুবৃত্তি কখনই বন্ধ হবে না। উপকূল মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি মো. ইদ্রিস আলী জানান, প্রতিনিয়ত বিভিন্ন এলাকা কেন্দ্রিক দস্যুদের চাঁদা দিয়েই মাছ ধরতে যেতে হচ্ছে জেলেদের। আর চাঁদা দিতে অপারগ হলে মুক্তিপনের জন্য তাদের অপহরণ করা হচ্ছে।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *