Connect with us

রংপুর

অবশেষে খুললো রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়- শীঘ্রই ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা

Published

on

downloadতপন কুমার রায়, বেরোবি:  সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে খুলে দেওয়া হলো রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। আন্দোলনের কারনে প্রায় ১০৯ দিন প্রশাসনিক ভবন ও ৪৯ দিন একাডেমিক ভবনগুলো তালাবদ্ধ থাকার পর অবশেষে তালা ভেঙ্গে উম্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

রবিবার, মার্চ ২২, ২০১৫, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম নূর-উন-নবীর উদ্যোগে এবং জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মিজানুর রহমান,  অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অশোক কুমার,  সহকারী প্রক্টর শাহীনুর রহমানের উপস্থিতিতে বিভিন্ন ভবনের তালা খুলে দেওয়া হয়।

জানা যায়, ঐদিন সকাল ১১ টা ২৪ মিনিটে প্রশাসনিক ভবনের উত্তর গেটের তালা ভাঙ্গার মাধ্যমে অভিযান শুরু করা হয়। ক্রমান্বয়ে উক্ত ভবনের সব তালা ভাঙ্গার পর ১১ টা ৪০ মিনিটে একাডেমিক ভবন-৩ এর তালা ভাঙ্গা শুরু হয়। এসময় চার দফা দাবিতে তালা লাগানো শিক্ষার্থীদের একাংশকে নিশ্চুপ থাকতে দেখা গেছে। তাদের পক্ষ থেকে কোন ধরনের বাধা প্রদান করা হয়নি। প্রায় ১২ টার দিকে ক্রমান্বয়ে সব ভবনের তালা খুলে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এদিকে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস চালু হওয়ার খবরে সকাল থেকেই বিভিন্ন বিভাগের শত শত শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে আসতে থাকে। বিভিন্ন ভবনের তালা খুলে দেয়ার সময় তারা করতালি দিয়ে কর্তৃপক্ষকে অভিনন্দন জানায়। তারা ক্লাস খোলার আনন্দে ক্যাম্পাসে মিছিল করে। দীর্ঘদিন পর একাডেমিক ভবন খোলা পেয়ে ভবনের ভিতরে ঢুকে উল্লাসে মেতে উঠে বেশ কিছু শিক্ষার্থী । ক্যাম্পাস খোলার প্রথম দিনেই একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম, ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব, সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও লোকপ্রশাসন বিভাগের ক্লাস নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও অচিরেই ভর্তি কমিটির বৈঠক ডেকে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম নূর-উন-নবী। একই সাথে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে অতীতের সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

তবে আন্দোলনরত শিক্ষকরা ক্লাস পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে নমনীয়তা প্রকাশ করলেও আগামী ২৫ শে মার্চে আন্দোলনরত শিক্ষক সমিতির এক সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ রাফিউল-আজম খান । কবে থেকে সকল বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হবে কিংবা আপনারা ক্লাস-পরীক্ষা নিবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা ক্লাস-পরীক্ষা নিতে আগ্রহী, তাই ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরে যেতে চাই । উপাচার্যের  একক সিদ্ধান্তে আজ খুলে দেওয়া হলো বলে ক্লাস আজ থেকেই শুরু করব এমনটি নয়। আগামী ২৫শে মার্চ শিক্ষক সমিতির সভায় এই বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিব ।’

এদিকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম নূর-উন-নবী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংকট সমাধানে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, রংপুর মিঠাপুকুর আসনের সংসদ সদস্য এইচ এন আশিকুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত সাবেক রাষ্ট্রপতি আলহাজ্ব এইচ এম এরশাদ, শিক্ষা সচিব এন আই খান, রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু, আওয়ামী লীগের রংপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রেজাউল করীম রাজু, রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, জেলাপ্রশাসক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ প্রশাসন, বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। একই সাথে তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে সকলের পরামর্শ ও সহযোগিতা কামনা করেছেন।

উল্লেখ্য যে, বিভিন্ন দাবী আদায়ের জন্য গত ৩ ডিসেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের গেইটে ও পরবর্তীতে ২ ফেব্রুয়ারি একাডেমিক ভবনের গেইটে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন করে আসছিলেন কতিপয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী। এ নিয়ে উপাচার্য নিজেই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেও  কোন ফল হয়নি।  বিষয়টি সুরাহার জন্য শিক্ষামন্ত্রীর প্রতিনিধি হয়ে রংপুর মিঠাপুকুর আসনের সংসদ সদস্য এইচ এন আশিকুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দুত সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ, রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু, রংপুরের বিভাগীয় কমিশনারসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও বিভিন্নভাবে বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

অবশেষে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নীতি নির্ধারণী কর্তা ব্যক্তি, স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পরামর্শ করে আজ রবিবার বেলা ১১টায় বিভিন্ন ভবনের তালা খুলে দেওয়া হয়। প্রথমে প্রশাসনিক ভবন পরে পর্যায়ক্রমে একাডেমিক ভবন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক-১ এর তালা খুলে দেওয়া হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম নূর-উন-নবী প্রশাসন ভবনের বিভিন্ন দপ্তর ঘুরে দেখেন।

এদিকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে প্রশাসনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কায় ও ক্যাম্পাসের যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

 

 

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *