Connect with us

দেশজুড়ে

কাউনিয়ায় প্রাইভেট, কোচিং ও গাইড-নোটের কাছে অভিভাবকরা নিরুপায়: জড়িত কারা?

Published

on

কাউনিয়া প্রতিনিধি : রংপুরের কাউনিয়া উপজেলায় শিশু শ্রেণী থেকে সবোর্চ্চ পর্যন্ত প্রাইভেট ও কোচিং সেন্টার ছাড়া অভিভাবকরা যেন নিরুপায়। তার সাথে মহাসমারোহে চলছে নিষিদ্ধ গাইড-নোট, সহায়িকাসহ নামে-বেনামে রকমারী বইয়ের বাহার। মোটা টাকার বিনিময়ে একেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলে একেক প্রকাশনীর গাইড-নোটের তালিকা প্রদান। উপজেলায় প্রাইভেট ও কোচিং সেন্টারগুলোর মালিকসহ অনৈতিক শিক্ষকরা অভিভাবকদেরকে কৌশলে এই ফাঁদে পড়তে বাধ্য করে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে দাবী করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীকে মারপিট, অশ্লীলতাহানী ও জোর করে বা প্রলোভন দিয়ে বিয়ের ঘটনা অহরহ দেখা গেছে। উপজেলার অনেক অভিভাবকরা জানিয়েছেন, সুষ্ঠু লেখাপড়ার চর্চাকে পাশ কাটিয়ে প্রাইভেট বা কোচিং সেন্টার গুলো বর্তমানে কোন অভিভাবকের কাছ থেকে বেশি টাকা হাতিয়ে নেয়া যাবে, সেই ফন্দি-ফিকিরেই ব্যস্ত থাকে। প্রাইভেট ও কোচিং সেন্টারগুলো এবং বইয়ের অসাধু প্রকাশনী বিক্রেতা শিক্ষক সমন্বয়ে রয়েছে লম্বা শিকড়, শক্তি জোগায় শিক্ষক সমিতি ও পুস্তক বিক্রেতা সমিতি এমন অভিযোগ অনুসন্ধানে জানা যায়।

দেখা যায়, সরকারের কোন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকার কারণেই বুড়ো আঙুল দেখিয়ে উপজেলার আনাচে কানাছে যত্রতত্র ব্যাঙেরগড়ে উঠা বিভিন্ন নামের প্রাইভেট ও কোচিং সেন্টার এবং নিষিদ্ধ বইয়ের প্রকাশনী ও লাইব্রেরীর মালিকরা লেখাপড়ার চর্চাকে ব্যবসার ফাঁদ হিসেবে চিহ্নিত করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে প্রতারনা করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। আক্ষেপ করে তারা জানান, প্রাইভেট বা কোচিং সেন্টারগুলো এমনি জিনিস যেখানে ঢোকার রাস্তা আছে, কিন্তু বেরুবার পথ নেই। ফলে দেখা গেছে, অনেক টাকা গচ্ছা দিয়েও সবশেষে যা ছিল তাই আছে ঐ সব শিক্ষার্থী। উপজেলার সচেতন মহল মনেকরে যে শিক্ষার্থী মেধাবী, সে বাসায় লেখাপড়া করে অখ্যাত স্কুল থেকেই স্ট্যান্ড করে বেরিয়ে যাচ্ছে। তার জন্য এগুলোর প্রয়োজন পড়ে না। বর্তমান সৃজনশীল প্রশ্নপত্রের দোহাই দিয়ে প্রাইভেট ও কোচিং সেন্টারের মালিকরা তাদের অর্থনৈতিক ফায়দা হাছিলের জন্য কোমলমতী শিক্ষার্থীদের মগজে ঢুকিয়ে দিচ্ছে যে, লেখাপড়া বর্তমানে কঠিন হয়ে গেছে এজন্য প্রাইভেট বা কোচিং সেন্টারে ভর্তি হওয়া অতি আবশ্যক। পাশাপাশি নিষিদ্ধ ঐসব গাইড নোট সহায়িকা ক্রয়ের জন্য উদ্বুদ্ধ করে, এমনকি বাধ্য করে বলে অভিযোগ আছে।

শিক্ষা যদি জাতির মেরুদণ্ড হয়, তাহলে শিক্ষকরা সেই জাতির কি? ভাবতে অবাক লাগে সেই শিক্ষক যখন তার আদর্শ থেকে সরে এসে প্রাইভেট, কোচিং ব্যবসা ও নিষিদ্ধ বইয়ের সরবরাহ কাজে অসাধু প্রকাশনীর অর্থ লোভে প্রভাবিত হয়ে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ প্রদান করে। তখন শিক্ষকরা তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে কতটা জ্ঞানহীন তা আর বলার অবকাশ রাখেনা। অথচ সৃজনশীল পদ্ধতি চালুর প্রাক কালে মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী বলেছিলেন, সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতিতে প্রাইভেট, কোচিং ও গাইড-নোট সব বিলিন হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্লাসরুম গুলোই হবে সৃজনশীল শিক্ষা বিকাশের উর্বর ক্ষেত্র।

এদিকে সচেতন মহলের ধারণা, সৃজনশীল লেখাপড়ার বিষয়বস্তু কিংবা প্রশ্নপত্র যদি কঠিন হতো, তাহলে যারা শিক্ষা নীতির মাঝে সৃজনশীল প্রশ্নপত্র ঢুকিয়ে দিয়েছেন তারা নিশ্চয়ই বেকুব নন। এছাড়া সৃজনশীল প্রশ্নপত্রের কিংবা বিষয়বস্তুর জন্য শিক্ষার্থীদের তো স্কুল রয়েছে। সেই সরকারি বে-সরকারি স্কুলের শিক্ষকরাও নিশ্চয়ই বেকুব নন। তাদের দাবী উপজেলায় প্রাইভেট ও কোচিং সেন্টারগুলোসহ গাইড-নোট ব্যবসার ফায়দা লুটার এটি একটি প্রক্রিয়া মাত্র। যাতে অভিভাবকরা কোন পথ না পেয়ে, কাঁচা পয়সা ঢেলে তাদের সন্তানদের সারাদিনই প্রাইভেট বা কোচিং সেন্টারে বসিয়ে রাখতে বাধ্য হয়।
একটি সূত্র উল্লেখ করেছে, উপজেলার অধিকাংশ সরকারী-বেসরকারী স্কুলের শিক্ষকরা নিজেরাই একেকটি কোচিং সেন্টার খুলে বসেছেন। সেই সাথে বাধ্যতামূলক ঘোষনা করে দিয়েছে, তাদের প্রাইভেট বা কোচিং সেন্টারে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে হবে এবং বিভিন্ন প্রকাশনীর সাথে পূর্বে চুক্তিকৃর্ত নিষিদ্ধ বই নিতে হবে। অন্যথায় স্কুল পরীক্ষায় নম্বর কম দিয়ে ফেইল করিয়ে দেয়া হবে। কি ভয়ঙ্কর কথা! অনুসন্ধান করে আরো দেখা গেছে, প্রাইভেট বা কোচিং সেন্টারের সাথে জড়িতরা সবাই কোন না কোন স্কুল কলেজের সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িয়ে আছে। তারা হয় কোন সরকারী নয়তো বে-সরকারী স্কুল কলেজের শিক্ষক। ফলে উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক থেকে ১টি পৌরসভাসহ ৬টি ইউনিয়নের যেখানে সেখানে শোভা পাচ্ছে এসব প্রাইভেট ও কোচিং সেন্টারের সাইনবোর্ড। যা সুষ্ঠু তদন্ত করলে বেড়িয়ে আসবে থলের বিড়াল।
কারা এর শিক্ষক? কারা এর শিক্ষার্থী? কোন কিছুই বোধগম্য নয়। দেখা যায়, কোচিং সেন্টারের সাথে জড়িয়ে গিয়ে এই শিক্ষকরা এক সময় নিজেরাই স্কুল খুলে বসেছেন। এর কোন রাজস্ব কর দিতে হয় কি না সেটাও অজ্ঞাত। এক সময় ডাক্তারদের পয়সা ওয়ালা বলে সম্বোধন করা হতো এখন ডাক্তারদের পাশাপাশি কোচিং সেন্টারের মালিকদের পয়সা ওয়ালা বলে অভিহিত করা হচ্ছে যা বর্তমানে উপজেলা জুড়ে ট্যক অব টাউন বলে পরিচিতি পাচ্ছে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে আরো জানা যায়, উপজেলায় অসংখ্য প্রাইভেট ও কোচিং সেন্টারের কারনে সরকারী বেসরকারী নামকরা স্কুলগুলো ক্রমেই অন্তঃসার হয়ে পড়ছে। একদিকে স্কুল অন্যদিকে প্রাইভেট বা কোচিং সেন্টারের চাপ সহ্য করতে না পেরে প্রায় শিক্ষার্থীরাই মানসিক অসুস্থ হয়ে পড়ছে। যেখানে সেখানে প্রায় প্রতিদিন প্রাইভেট ও কোচিং সেন্টার তৈরী হওয়ার ফলে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া বর্ণনা করে এলাকাবাসী জানান, ছোট ছোট ঘুপড়ি ঘরের মধ্যে অবর্ণনীয় ভাবে গাদাগাদি করে বসে সেখানে শিক্ষার্থীরা কি লেখাপড়া শিখছে।
এদিকে প্রাইভেট বা কোচিং সেন্টারের অধিকাংশ শিক্ষকদের পাঠদান পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন একাধিক অভিভাবক। তারা জানান, রাতে ও ভোরে প্রাইভেট বা কোচিং করানো হচ্ছে। এতে কি সবাই একযোগে শিক্ষিত হয়ে পড়ছে ? যা নিয়ে কাউনিয়া উপজেলাসহ দেশ জুড়ে ব্যাপক ভাবে আলোচিত হচ্ছে। অপরদিকে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সচেতন মহল দাবী জানান, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কর্তৃক শিক্ষার্থীদের মেধা বাঁচাতে কাউনিয়া উপজেলাসহ দেশের সকল প্রাইভেট বা কোচিং সেন্টারগুলো যথাদ্রুত আইনের আওতায় এনে বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরী।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *