Connect with us

জাতীয়

কে দায়ী?

Published

on

সুলতানা রাজিয়া:

যুগে যুগে ধর্ম এসেছে মানবতার কল্যাণের জন্য। বিভিন্ন নবী, রসুল, অবতারগণ স্রষ্টার পক্ষ থেকে ঐশী বাণী প্রাপ্ত হয়ে স্রষ্টার নাজিলকৃত কিতাব নিয়ে এসেছিলেন। তাদের প্রত্যেকের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিলো মানবতার কল্যাণ, মানবজাতির কল্যাণ। মানুষ কিভাবে সুখে, শান্তিতে, নিরাপত্তায় থাকতে পারবে, কি করলে মানুষের দুঃখ-কষ্ট দূর হবে এর জন্য তাঁরা তাঁদের সমস্ত জীবন, পার্থিব সহায় সম্পদ সবকিছু বিলিয়ে দিয়ে গেছেন। কখনও তাঁরা নিজেদের কল্যাণ নিয়ে ভাবেননি। তাঁরাই হলেন প্রকৃত ধার্মিক এবং মহামানব। সময় ও কালের স্রোতে জাতি তাঁদের সেই শিক্ষা ভুলে গেল, ভুলে গেল তাদের নেতা ও অবতারদের অবদানকে। তখন তারা মানবজাতির কল্যাণের পরিবর্তে শুরু করলো নিজেদের কল্যাণ। এরই মধ্যে প্রত্যেক ধর্মে জন্ম নিল ধর্মব্যবসায়ী ধর্মগুরু, ধর্মযাজক, পুরোহিত ও পন্ডিত। প্রত্যেক ধর্মে এবং ধর্মগ্রন্থেই রয়েছে মানবতার কল্যাণের কথা। এ কথাটাই সব মহামানব ও অবতারগণ শিক্ষা দিয়ে গেছেন। এক শ্রেণির কুচক্রি মহল নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য তাঁদের সেই শিক্ষাকে বিপথে পরিচালিত করলো। একদল ধর্মকে পুঁজি করে শুরু করলো ধর্মব্যবসা। আরেকদল সেই ধর্মকেই রাজনীতির হাতিয়ার বানিয়ে শুরু করলো ক্ষমতা দখলের অপরাজনীতি। ফলে যে ধর্ম এসেছে মানবতার কল্যাণের জন্য তা দিয়ে শুরু হলো মানবতার অকল্যাণ। কোনো ধর্মই আর মানবজাতিকে শান্তি দিতে পারলনা। কারণ ধর্ম তার নিজস্ব রূপ হারিয়ে ফেললো। মানুষের ধর্মবিশ্বাস ভুল পথে পরিচালিত হলো। আজ মানুষ দিশেহারা, দিকভ্রান্তের মতো হাতড়িয়ে বেড়াচ্ছে কোন পথে, কিভাবে শান্তি আসবে।
সুপ্রিয় পাঠকবৃন্দ, আপনারা অনেকেই হয়ত ভারতীয় অভিনেতা আমির খান অভিনীত পি.কে ছবিটা দেখেছেন। ছবিতে পিকে ভীন গ্রহের একজন নিষ্পাপ মানুষ হিসেবে অভিনয় করে। যে কিনা পৃথিবীতে আসার সাথে সাথেই ধোঁকাবাজি ও প্রতারণার শিকার হয়। সে তার চুরি হয়ে যাওয়া বস্তুটি খোঁজার জন্য সরল মনে, সরল বিশ্বাসে সবার কাছে যায়। সবাই তাকে বলে স্রষ্টার কাছে যেতে। সে স্রষ্টাকে খোঁজা শুরু করে। যেহেতু সে জানেনা সত্যিকার স্রষ্টাকে কোথায় গেলে পাওয়া যাবে, তাই সকল ধর্মের ধর্মগুরুদের কাছে গিয়ে অর্থ প্রদান করে এবং তাদের যার যার ধর্মের রীতি রেওয়াজ পালন করে। শেষ পর্যন্ত যখন সে বুঝতে পারল এরা সবাই ধোঁকাবাজ, ভন্ড প্রতারক, সবাই তার বিশ্বাস নিয়ে ব্যবসা করছে, নিজ নিজ ফায়দা হাসিল করছে তখন তার সব ধর্মের প্রতি বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যায়। এই ছবিতে চরম একটা বাস্তব সত্যকে তুলে ধরা হয়েছে। আজ সমস্ত পৃথিবীতে প্রত্যেকটা ধর্মে এমন ধর্মব্যবসায়ী ও ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতিবিদ রয়েছে। যাদের অপকর্ম পিকের মতো লাখ লাখ মানুষের স্রষ্টার প্রতি ধর্মবিশ্বাসকে নষ্ট করে দিচ্ছে। তারাও পিকের মতো দেখছে কোনো ধর্মেই শান্তি নেই। সব ধর্মে অন্যায় অশান্তি আর অরাজকতা। সবাই ধর্মের দোহাই দিয়ে, মিথ্যে ফতোয়া দিয়ে নিজের পকেট ভরতে ব্যস্ত। মানবতার কল্যাণ করতে তাদের একমুহুর্তও সময় নেই। এই ধর্মব্যবসায়ী মিথ্যে ফতোয়াবাজদের জন্য ধর্মের প্রতি, স্রষ্টার প্রতি যাদের বিশ্বাস হারিয়ে গেল, আমরা তাদেরকে খুব সহজেই নাস্তিক উপাধি দিচ্ছি। এমনকি এ অপরাধের শাস্তি হিসেবে নির্মমভাবে হত্যা করছি। অথচ একবারও ভেবে দেখিনা এই বিরাট সংখ্যক লোক কেন ধর্মের প্রতি বিতশ্রদ্ধ? তাদের ধর্মবিশ্বাস নষ্ট হবার পেছনে কাদের হাত? পিকে ছবিটা কি আমাদের বোধশক্তিকে একটুকুও জাগ্রত করেনি? এখনও কি সময় হয়নি এই ধর্মব্যবসায়ীদের, ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতিবিদদের মুখোশ উন্মোচন করার? মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে আবারো সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার? মানবতার কল্যাণের জন্যই যে ধর্মের আবির্ভাব তা মানুষকে জানাবার? তা না হলে জেনে রাখুন ধর্মের এই অপব্যাখ্যার দরুন হাজার নাস্তিকের জন্ম হবে। জাতি, দেশ দ্রুত নিশ্চিত ধ্বংসের দিকে ধাবিত হবে। আর সে ধ্বংস প্লাবনে আমি, আপনি আমরা সবাই তলিয়ে যাব। তাই আসুন আর চুপ করে না থেকে সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। এই ধর্মব্যবসায়ী ও ধর্মের অপব্যাখ্যাকারীদের চিহ্নিত করি। স্রষ্টা প্রদত্ত ধর্মকে মানবতার কল্যাণে নিবেদিত করি। তাহলে এপারেও শান্তি আখিরাতেও মুক্তি।

লেখক: হেযবুত তওহীদের সদস্য।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *