Connect with us

খুলনা

খুলনা-বেনাপোল কমিউটার ট্রেন নিয়ে আবার চক্রান্ত শুরু।

Published

on

 জামাল মোহাম্মাদ-খুলনা ।

বেনাপোল -খুলনা চলাচলকারী লাভজনক কমিউটার ট্রেনটি বেসরকারি খাতে লীজ দেয়ার পাঁয়তারা চলছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবির প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ সরকার প্রথমবার ক্ষমতায় আসার সাথে সাথেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে ১৪ বছর আগে খুলনা-বেনাপোল কমিউটার ট্রেনটি চালু হয়। চালুর কিছুদিন পরেই ২০১৩ সালের দিকে রেলের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা এই ট্রেনটিকে বেসরকারি খাতে “ইসলাম শিপিং ইন্জিনিয়ারিং” কে প্রতিদিন মাত্র ১৬ হাজার টাকায় লিজ দেয়।ফলে একদিকে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ক্ষতি অন্যদিকে ট্রেনের চোরাকারবারীদের কারনে বড় অংকের রাজস্ব হারাচ্ছিল রাষ্ট্র। সাথে সাথে সাধারন যাত্রীদের যাতায়াতে শুরুহয় অসহনীয় দুর্ভোগ। পরে সাধারণ মানুষের দাবিতে আবারো কমিউটার ট্রেনটি সরকারি ব্যবস্থাপনায় চলাচল শুরুহয়। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে বেনাপোলের সাথে খুলনার মধ্যে চলাচলকারী লাভজনক কমিউটার ট্রেনটি বেসরকারি খাতে লীজ দেয়ার পাঁয়তারা চলছে। কমিউটার ট্রেনটি বেসরকারি খাতে লীজ নেওয়ার জন্য রেলের মহাপরিচালক দপ্তরে দেনদরবার করছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের একজন উর্ধ্বতন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। নির্দিষ্ট সময়ে যাতায়াত এবং খরচ কম হওয়ায় সাধারণ মানুষ এ ট্রেনে যাতায়াত করে থাকেন। এছাড়া বেনাপোলে সিএন্ডএফ এজেন্ট, কাস্টমস এবং বন্দরে কর্মরত অনেকেও এ ট্রেনে যাতায়াত করে অফিস করে থাকেন।সরেজমিনে বেনাপোল খুলনা কমিউটার ট্রেনে ভ্রমণ করে দেখা যায়,সকাল ৬টায় ট্রেনটি খুলনা স্টেশন ত্যাগ করে দৌলতপুর, নওয়াপাড়া, সিঙ্গীয়া, যশোর, ঝিকরগাছা, নাভারণ স্টেশন পার হয়ে সকাল সাড়ে ৮টায় বেনাপোল পৌছায়। এ সব স্টেশনের বেশীর ভাগ যাত্রী ভারতে যায়। পরবর্তীতে সকাল ৯টায় বেনাপোল স্টেশন ত্যাগ করে বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে খুলনা পৌছায়। এই ট্রেন আবার দুপুর ১২টায় খুলনা স্টেশন ত্যাগ করে ৬টি নির্ধারিত স্টেশন থেকে যাত্রী ওঠানামা করিয়ে দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে বেনাপোল পৌছায়। পুনরায় কমিউটার ট্রেনটি বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে খুলনার উদ্দেশ্যে বেনাপোল ত্যাগ করে। সব স্টেশনে কম বেশী যাত্রীর ভিড় লক্ষ্য করা যায়। খুলনা থেকে বেনাপোল আসতে বাসে সময় লাগে ৩থেকে সাড়ে ৩ ঘন্টা। ভাড়ার পরিমাণ ১শ’ ৫০ টাকা। সেক্ষেত্রে কমিউটার ট্রেনে খুলনা থেকে বেনাপোল আসতে সময় লাগে আড়াই ঘন্টা আর ভাড়া মাত্র ৪৫ টাকা। এ কারণে খুলনা থেকে জেলা শহর যশোরসহ ভারতে যাতায়াতকারী যাত্রীরা বাসের চেয়ে কম খরচে ট্রেনে যাতায়াত করে থাকে। বিজিবি,পুলিশ এবং ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরিদর্শকদের কড়াকড়ির ফলে কমেছে চোরাকারবারি দের দৌরাত্ম্য। যাত্রীগন সাচ্ছন্দে ও নিরাপদে তাদের গন্তব্যে যাতায়াত করেতে পারছেন। পূর্বের তুলনায় কমিউটার ট্রেন থেকে সরকারি কোষাগারে বেশী অর্থ জমা হচ্ছে।যত দিন যাচ্ছে খুলনা-বেনাপোল ট্রেনে যাত্রীর সংখ্যা ও আয় বাড়ছে। গত বছরের শেষ ছয় মাসের হিসাবে অনুযায়ী দেখাযায় জুলাই মাসে মোট যাত্রী সংখ্যা ছিলো ৬১হাজার ৪৯জন, মোট আয় হয়েছে ২১ লক্ষ ১৬হাজার ৯০ টাকা,আগষ্টে মোট যাত্রী ৬৫হাজার ৯৫ জন,মোট আয় ২১ লক্ষ ১৯ হাজার ২২৩ টাকা, সেপ্টেম্বরের মোট যাত্রী ৭৪ হাজার ১শ’৫০ জন,মোট আয় ২৪ লক্ষ ৬৯ হাজার ৬শ’ ৮০টাকা,অক্টোবরের মোট যাত্রী সংখ্যা ছিলো ৬৯হাজার ৮শ’ ৬জন,মোট আয় ২০ লক্ষ ৫০হাজার ৫শ’৩০ টাকা,নভেম্বরের মোট যাত্রী সংখ্যা ৬৩ হাজার ৪শ’৫৪জন,মোট আয় ১৯ লক্ষ ৭৪ হাজার ৭শ’ ৮৭টাকা, ডিসেম্বরের মোট যাত্রী সংখ্যা ৭৪ হাজার ২শ’ ১৭ জন,মোট আয় ২৪ লক্ষ ৬১ হাজার ৬২ টাকা। ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহের এক দিনের হিসাব অনুযায়ী দেখা যায় এ ট্রেন থেকে ২২ ডিসেম্বর খুলনা স্টেশনে আয় হয়েছে ২৬ হাজার ৯শ’ ৮০ টাকা। এছাড়া ২৯ ডিসেম্বর দৌলতপুর থেকে ১০ হাজার ৫৫ টাকা, ৩০ডিসেম্বর নওয়াপাড়া থেকে ৮ হাজার ৯শ’ ৮০ টাকা, ২১ ডিসেম্বর সিঙ্গিয়া থেকে ৩ হাজার ২শ’ ৩০ টাকা, ৩০ ডিসেম্বর যশোর থেকে ১৪ হাজার ৫শ’ ৩০ টাকা, ২৯ ডিসেম্বর নাভারণ থেকে ৮ হাজার ৪শ’ ৭০ টাকা এবং ৩০ ডিসেম্বর বেনাপোল থেকে ৩৮ হাজার ৮শ’ ৭০টাকা আয় হয়েছে। এছাড়া ৩০ ডিসেম্বর টি,টি,ই ক্যাশ ৫ হাজার ৫শ’ ৮০ টাকা, টিসি ক্যাশ ২হাজার ১শ’ ৭০ টাকা। এ হিসাবে প্রতি মাসে গড়ে বেনাপোল খুলনা কমিউটার ট্রেন থেকে সরকারের আয় হয় ৩৭ লাখ টাকার বেশী অথচ লাভজনক এই ট্রেনটিকে বেসরকারি খাতে লীজ দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে রেলের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা। বেনাপোল খুলনা কমিউটার ট্রেনটি বেসরকারি খাতে লীজ দেয়া হচ্ছে কিনা এ ব্যাপারে পাকশীতে কর্মরত চীফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার মিহির কুমার গুহ এর মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি জানান, নীতিমালা মেনেই ট্রেন বেসরকারি খাতে লিজ দেওয়া হয়। আপাতত খুলনা বেনাপোল কমিউটার ট্রেনটি লিজ দেয়ার কোন চিন্তা ভাবনা নেই। তবে শেষ ৬ মাসের আয়ের চেয়ে বেশি টাকা দিলে তার অনুকুলে লিজ দেয়া যেতে পারে। সচেতন মহলের দাবি, বেনাপোল- খুলনা কমিউটার ট্রেনটি বেসরকারি খাতে লীজ দেয়া হলে এই ট্রেনে যাতায়াতকারী যাত্রীরা পূর্বের মত ভয়াবহ ভোগান্তির শিকার হবেন। আর চোরাচালানীরা পূর্বের মত তাদের আধিপত্য বিস্তার করবে।চোরাকারবারি দের কারনে রাষ্ট্র হারাবে রাজস্ব-শুল্ক। তাই লাভজনক খুলনা বেনাপোল কমিউটার ট্রেনটি যাতে কোন স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থরক্ষার জন্য রাষ্ট্র ও সাধারন জনগনের ক্ষতি করে বেসরকারি খাতে লীজ দেয়া না হয় তার জন্য রেলমন্ত্রী ও রেলের মহাপরিচালকের সদয় দৃষ্টি কামনা করেছেন দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সাধারণ মানুষ।

জে-খার্টিন,খুলনা ।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *