শরিফুল ইসলাম প্রিন্স, জলঢাকা: স্বাধীনতার ৪৬ বছর যাবত উপজেলার প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষ শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছিল মান্ধাতা আমলের ছোট একটি শহীদ মিনারের মধ্য দিয়ে। অবশেষে অনেকটা নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হলো উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। যার দৈর্ঘ্য ১০৫ ফুট ও প্রস্থ ৮৬ ফুট। দীর্ঘদিনের যে দাবী পুরন হয়নি তা মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই পূর্ণতা পেয়ে নির্মিত হলো জলঢাকা আধুনিক মানের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। এর মূল উদ্যোক্তা স¤প্রতি বদলী হয়ে যাওয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহ রাশেদুল হক প্রধান। তিনি দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর থেকেই বিভিন্ন সভা-সেমিনারে জোড়ালো দাবী উঠেছিল স্বপ্নের আধুনিক শহীদ মিনার নির্মাণের। সে চিন্তা থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক গোলাম মোস্তাফার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেছিলেন তিনি (সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা)। অবশেষে গত বছরের ২৬ মার্চের স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপন প্রস্তুতি সভায় সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের দাবীর প্রেক্ষিতে আধুনিক শহীদ মিনার নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। শুরু হয় অর্থ সংগ্রহের কাজ। ব্যবসায়ী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সবাই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট। গত বছরের ১৩ই জুলাই ১৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে শুরু হয় শহীদ মিনার নির্মাণের প্রস্তুতি। ২১ আগষ্ট/১৭ তারিখে এর আনুষ্ঠানিক ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে উপজেলাবাসীর কাঙ্খিত আধুনিক কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের পূর্ণতা পায়। যে যার মত করে সহযোগিতা করেন এ নির্মাণ কাজে। উপজেলা প্রকৌশলী হারুন-অর রশিদ বলেন, একজন ডিজাইনারের ডিজাইন অনুসারে এর কাজ সমাপ্ত করা হয়। তিনি আরও বলেন, পর্যায়ক্রমে শহীদ মিনার নির্মাণের পাশাপাশি এখানে থাকবে আধুনিক মানের মুক্তিযুদ্ধ ফাউন্ডেশন কমপে¬ক্স, মুক্তিযুদ্ধ পাঠাগার, দৃষ্টিনন্দন একটি বাগানসহ নির্মিত হবে প্রাত: ভ্রমনের জন্য সড়ক। যার আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩০ লাখ টাকা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আব্দুল গফফার জানান, এমন একটি কাজের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ততা করতে পেরে ধন্য মনে করছি। শহীদ মিনারটি নির্মাণের ফলে উপজেলার ৫ লক্ষাধিক গণমানুষ এখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহা. রাশেদুল হক প্রধান সাংবাদিকদের বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করি মনেপ্রাণে। জলঢাকায় যোগদানের পর থেকেই মনে হয়েছিল এখানে স্বাধীনতা সংগ্রামের বীরসেনাদের শ্রদ্ধা নিবেদনের একটি আধুনিক শহীদ মিনার নির্মাণের। আর তাই সকলের সহযোগিতা এবং ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় নির্মিত হয়েছে জলঢাকাবাসীর প্রাণের শহীদ মিনার। তিনি আরও জানান, ব্যক্তিগত ভাবে সবাই এখানে সহযোগিতা করেছেন। উপজেলা পরিষদ থেকে শুরু করে প্রশাসনের কর্মকর্তা জেলা পরিষদ, শিক্ষক, ব্যবসায়ী সকলেই শহীদ মিনার নির্মাণের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। গত ১৬ই ডিসেম্বর শহীদ মিনারটির অনারম্বর ভাবে উদ্বোধন করা হয়। এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা বলেন, বিগত দিনে এ আসনটিতে স্বাধীনতাবিরোধী সংগঠন জামায়াত অধিষ্ঠিত ছিল দীর্ঘসময় ধরে। তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন হয়নি উপজেলাটিতে। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনে আসনটি ফিরে পাই। জলঢাকার গণমানুষের দীর্ঘদিনের দাবীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সর্বপ্রথম আমি উদ্যোগ নেই শহীদ মিনারটি নির্মাণের।