Connect with us

জাতীয়

ধর্মের নামে ব্যবসা, রাজনীতি এবং সন্ত্রাস বন্ধ হোক

Published

on

মসীহ উর রহমান

ধর্ম এসেছে মানবতার কল্যাণে। মানবজাতি যখন এবলিসের প্ররোচনায়  অন্যায় অশান্তিতে নিমজ্জিত হয়, তখন মানবজাতিকে শান্তি দিতে যুগে যুগে আবির্ভূত হয়েছেন নবী-রসুল-অবতারগণ। তাঁরা আল্লাহর কাছ থেকে যে কেতাব বা শাস্ত্র নিয়ে এসেছেন, যখন মানুষ সেই বিধানগুলি দিয়ে নিজেদের জীবন পরিচালিত করেছে, সমাজ-রাষ্ট্র পরিচালিত করেছে, তখনই মানবজীবন শান্তিময় হয়েছে। প্রাচীন ভারতবর্ষে তাই হয়েছে, পৃথিবীর অন্যান্য সভ্যতার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তাই মানুষের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সর্বোপরি আধ্যাত্মিক-পারত্রিক মুক্তির জন্য ধর্ম এসেছে স্রষ্টার পক্ষ থেকে। এটা তাই আল্লাহ ও মানুষের পারস্পরিক একটি চুক্তির বিষয়। মানুষ আল্লাহর বিধান মানলে উভয় জীবনে শান্তি পাবে, না মানলে উভয় জীবনে শাস্তি পাবে। এই চুক্তিভিত্তিক লেনদেনের মাঝে মধ্যসত্ত্বভোগী কোন শ্রেণির অস্তিত্ব আল্লাহ স্বীকার করেন না। সুতরাং ধর্মের কাজ করে বিনিময় গ্রহণ সর্বধর্মে নিষিদ্ধ, ধর্মের কাজের বিনিময় নিতে হবে শুধুমাত্র আল্লাহর কাছ থেকে। এই নিষিদ্ধ হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হল, পার্থিব বিনিময় নিলে ধর্মের সঠিক রূপ বিকৃত হয়ে যায়। তথাপি প্রতিযুগেই নবীদের বিদায়ের পর প্রতি জাতিতে একটি বিশেষ শ্রেণির জন্ম হয়েছে, ধর্মকে যারা তাদের জীবন-জীবিকার মাধ্যমে পরিণত করেছেন। এভাবেই সৃষ্টি হয়েছে পৃথিবীর তাবৎ ধর্মব্যবসায়ী সম্প্রদায়। আল্লাহর কোনো নবী এবং তাঁদের সাহাবীরা কোনোদিন ইসলামের কোনো কাজের জন্য বিনিময় গ্রহণ করেছেন বলে জানা যায় না। সুতরাং যারা এই কাজ করছে তারা কোন নবীরই উম্মত নয়, তাই তাদের কাছ থেকে ইসলামের শিক্ষা গ্রহণ অবান্তর, হাস্যকর, অন্যায়। এ যেন অন্ধের কাছে পথের সন্ধান প্রত্যাশা করা।
দ্বিতীয়ত, ধর্মের নামে রাজনীতি। বর্তমানে সারা দুনিয়ায় পশ্চিমা সভ্যতার সৃষ্ট গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ইত্যাদির অনুকরণে হাজার হাজার রাজনৈতিক দল গড়ে উঠেছে। ইসলামপন্থীরাও যুগের হাওয়ার সঙ্গে তাল মেলাতে ইসলামের চেহারা পরিবর্তন করে মডারেট ইসলাম, গণতান্ত্রিক ইসলাম, সমাজতান্ত্রিক ইসলাম ইত্যাদি ‘আধুনিক’ রূপ দান করেছে। এই ভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে নির্বাচন, মিছিল, মিটিং, ঘেরাও, হরতাল, অবরোধ, জ্বালাও পোড়াও ইত্যাদি সর্বপ্রকার কর্মসূচি নিয়ে থাকে। এই পথ আল্লাহ দেন নি, সুতরাং এগুলিকে দীনের মধ্যে সংযোজন বা বেদাত বলাই বাঞ্ছনীয়। আল্লাহর রসুল বা তাঁর প্রকৃত উম্মাহ অর্ধেক পৃথিবীতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কঠোর সংগ্রামের পথে, নির্বাচন করে নয়। যারা সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষদেরকে ধর্মের দোহাই দিয়ে এই ভ্রান্তপথে নিয়ে যাচ্ছে তারা এর জন্য হাশরের দিন আল্লাহর আদালতে অবশ্যই অভিযুক্ত হবেন।
ইসলাম এসেছে সকল প্রকার সন্ত্রাসকে নির্মূল করার জন্য, অথচ আজ ইসলামের সঙ্গে টেররিজম বা সন্ত্রাসবাদ শব্দটি একত্রে উচ্চারণ করা হয়। এর কারণ এই জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ ইসলাম প্রতিষ্ঠার জেহাদের নামে এখানে ওখানে, আদালতে, সিনেমা হলে বোমা মারছে, অসংশ্লিষ্ট মানুষ হত্যা করছে। আল্লাহর রসুল এবং তাঁর আসহাবগণ যতদিন না কোনো সার্বভৌম ভূখণ্ডের অধিকারী হয়েছেন তারা ততদিন কেবলমাত্র মানুষকে তওহীদের দিকে আহ্বান করে গেছেন। এর জন্য বহু নির্যাতিত হয়েছেন কিন্তু কখনও অস্ত্র হাতে নেন নি। যখন আল্লাহ তাঁদেরকে মদীনায় একপ্রকার স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রক্ষমতা দান করলেন তখন স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের নীতি পরিবর্তিত হয়ে গেল। কারণ একটি আন্দোলন এবং একটি রাষ্ট্রের নীতি কখনোই এক হতে পারে না। রাষ্ট্র সেনাবাহিনী রাখতে পারে, অস্ত্র রাখতে পারে কিন্তু একটি দলের জন্য সেটা বৈধ হয় না। কিন্তু যারা জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী তারা আপামর জনতার সমর্থনপুষ্ট রাষ্ট্রশক্তি না পেয়েই অস্ত্রবাজি করছে। এটা রসুলাল্লাহর সুন্নাহ পরিপন্থী, সুতরাং অবৈধ। তাদের এই আত্মদানকে তারা ইসলামের খেদমতে করা হচ্ছে বলে বিশ্বাস করলেও প্রকৃতপক্ষে তাদের এই কাজ ইসলামের কোনো উপকারে আসছে না, বরং এই কাজ ইসলামের ক্ষতি করছে। তাদের এই অবৈধ কাজে আল্লাহ ও রসুলের মর্যাদায় কালিমালেপন করার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে ইসলামবিদ্বেষী গোষ্ঠী। এতে করে তারা দুনিয়াও হারাচ্ছেন, আখেরাতও হারাচ্ছেন।
কাজেই আমরা পরিষ্কার করে সকল ধর্মপ্রিয় মানুষকে জানাতে চাই, যারা প্রকৃতপক্ষেই আল্লাহ রসুলকে, অবতারদেরকে ভালোবাসেন, যারা মানুষের কল্যাণ চান, ইসলামের জন্য কিছু করতে চান সেই সকল সত্যনিষ্ঠ মানুষদেরকে বলবো, আপনারা ধর্ম নিয়ে ব্যবসাকারী, ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতিকারী ও সন্ত্রাসকারীদের দ্বারা প্রভাবিত হবেন না। নিজেদের ঈমানকে ভুল পথে প্রবাহিত করবেন না। ধর্ম এসেছে মানুষের কল্যাণে। যা করলে মানুষ কষ্ট পায়, মানবতার অকল্যাণ হয় সেটা কোনোভাবেই ধর্মসম্মত কাজ হতে পারে না। আসুন, আমরা আমাদের ঈমানকে সঠিকপথে পরিচালিত করি। অন্যায়, অবিচার, সন্ত্রাস, সহিংসতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ ও দশের কল্যাণে ভূমিকা রাখি।

লেখক: আমীর, হেযবুত তওহীদ

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *