Connect with us

দেশজুড়ে

নড়াইলে গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে ইয়াবা!

Published

on

1437547371_Untitledউজ্জ্বল রায়, নড়াইল: চিত্রা, মধুমতি, কাজলা ও নবগঙ্গা বিধৌত ঐতিহ্যবাহী ও শতাব্দীর প্রাচীন জনপদ হল নড়াইল জেলা। শিক্ষা, শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কৃতির চারণক্ষেত্র নড়াইল জেলা তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। নড়াইলের সেই রূপ আজ আর নেই। রূপ-সৌন্দর্য হারিয়ে শ্রীহীন জনপদে পরিনত হয়ে পড়েছে শতাব্দীর স্বাক্ষী নড়াইলের সদর উপজেলা। পৌর শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে নীতি নৈতিকতা বিরোধী কর্মকান্ড এবং অসামাজিক কার্যকলাপ দিনকে দিন বাড়ছে। ভয়াল মাদকের আগ্রাসী থাবায় সমৃদ্ধ ও সম্ভাবনাময়ী নড়াইল ‘প্রায় বিপন্ন’ জনপদে পরিনত হয়ে পড়েছে। সর্বত্র মাদকের ছড়াছড়ি। হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে সর্বনাশা ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। মাদকের সহজলভ্যতার কারণে এখানে মাদক বিক্রেতার পাশাপাশি মাদকসেবীর সংখ্যাও বাড়ছে। এখানকার মাদক সেবীদের কাছে বিশেষ করে ‘ইয়াবা’ এখন হট কেকের মতো। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দেদারসে চলছে ইয়াবা বেচাকেনা। নড়াইল পুলিশ সুপার সরদার রকিবুল ইসলামের মাদকবিরোধী অভিযান ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কর্মকর্তারা মাদক পাচার ও বিক্রি বন্ধে তৎপর থাকলেও থেমে নেই মাদক বেচাকেনা। মাদকের সহজলভ্যতা, অপেক্ষাকৃত কম দাম এবং পুলিশী ঝুঁকি কম থাকায় নড়াইল পৌরসভাসহ আশেপাশে এলাকায় মাদক পাচারকারী ও সেবনকারীরা ‘ইয়াবা বড়ি’র নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কতিপয় অসাধু ও দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা মাসিক চুক্তির বিনিময়ে মাদক বেচা কেনায় সহযোগিতা করছেন। রূপগঞ্জ বাজারের মেইন রোডসহ অলিগলি, পাড়া-মহল্লা সর্বত্র মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ‘সিন্ডিকেট’ করে ইয়াবা বিক্রি হচ্ছে। এক কথায়, ইয়াবায় ভাসছে নড়াইল পৌরসভাসহ আশেপাশে এলাকা।
খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, পৌরসভাসহ সদর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক বাণিজ্যিক পয়েন্টে দেদারসে বিভিন্ন মাদকদ্রব্য বিক্রি হচ্ছে। এসব মাদকদ্রব্যের মধ্যে রয়েছে ইয়াবা, গাঁজা, ফেন্সিডিল, হেরোইন, মদ ও ঘুমের বড়ি। আনুমানিক ৬ মাস পূর্বে ফেন্সিডিলের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও বর্তমানে তা কমে সেই জায়গা দখল করে নিয়েছে মরণ নেশা ইয়াবা। বর্তমানে এখানে এক বোতল ফেনসিডিলের দাম ৭শ’ থেকে ৯শ’ টাকা। পক্ষান্তরে একটি ইয়াবা বড়ির দাম ১শ’ থেকে দেড়শ টাকা। উন্নত মানের ইয়াবা’র দাম ৩শ টাকা থেকে ৪শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম কম হওয়ার কারনে মাদক বিক্রেতাদের পাশাপাশি সেবনকারীরা সর্বনাশা ইয়াবা’র নেশায় ঝুঁকে পড়েছে। নড়াইলের সড়ক পথ ও নৌপথ দিয়ে মাদকদ্রব্য প্রবেশ করে থাকে। সীমান্ত শহর যশোর, খুলনা, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, সাতক্ষীরা ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের মাদক পাচারকারী চক্র মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নিজস্ব লোকজন দিয়ে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। মাদক পাচারকারীরা মাদক পাচারের জন্য পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের বেশি ব্যবহার করছে। এরা ‘ক্যারিয়ার’ হিসেবে পরিচিত। এ সব ক্যারিয়ারদের অধিকাংশ স্বামী পরিত্যক্ত ও তালাক প্রাপ্ত মহিলা। আছে কলেজের শিক্ষার্থীরাও। স্থানীয় থানা পুলিশ মাঝে মধ্যে মাদকসহ সেবনকারীদের আটক করলেও মুল পাচারকারীরা থেকে যাচ্ছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। যে কারণে কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না মাদক বেচাকেনা। বিশেষ করে সর্বনাশা ইয়াবার ব্যাপক বিস্তৃৃতির কারনে এখানকার সচেতন অভিভাবক মহল তাদের সন্তানদের নিয়ে শংকিত হয়ে পড়েছেন। সরেজমিনে নড়াইলের কিছু শিক্ষার্থী ও যুকবদের সঙ্গে কথা বলে ইয়াবা বিক্রির সত্যতা নিশ্চিত করা গেছে। প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তাসহ এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি নিয়ন্ত্রণ করে নড়াইলের মাদক সাম্রজ্য। জানা যায়, গত ছয় মাসে শত শত শিক্ষার্থী ইয়াবায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। নষ্ট হচ্ছে একটি জাতির মূল চালিকাশক্তি। ইয়াবার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী ও সাহিত্যিক ডা. মোহিত কামাল বলেন, নিয়মিত ইয়াবা সেবনে রক্তচাপ বৃদ্ধি, হার্ট অ্যাটাক, ঘুমের ব্যাঘাত, অস্বস্তিকর মানসিক অবস্থা, কিডনি বিকল, চিরস্থায়ী যৌন অক্ষমতা, ফুসফুসের প্রদাহসহ ফুসফুসে টিউমার ও ক্যান্সার হতে পারে। অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রশাসনসহ সমাজের কিছু উচুঁ স্তরের কিছু মানুষ অর্থের লোভে এই বে-আইনী মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। নড়াইল জেলা পুলিশের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, শুধুমাত্র পুলিশের পক্ষে মাদক বেচাকেনা নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব নয়। বেআইনি মাদকদ্রব্য উদ্ধারে জন সচেতনতা না বাড়ালে মাদকের ব্যবহার বন্ধ করা যাবে না। পুলিশের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে মাদক বেচাকেনা বন্ধে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে’।
চলবে……..

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *