Connect with us

জাতীয়

মহান বিজয় দিবস আজ

Published

on

নিজস্ব প্রতিবেদক:
১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১। দীর্ঘ নয় মাস পাক বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে রক্ষক্ষয়ী সংগ্রামের পর অর্জিত হয় বাংলার স্বাধীনতা। কালান্তরে আবারো ফিরে এসেছে গৌরবের সেই দিন। বিজয়ের এই দিনে উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে গোটা জাতি। বাঙালি জাতির ইতিহাসে অনন্য গৌরবময় এই দিনটি অর্জনের পিছনে রয়েছে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত। পশ্চিম পকিস্তানের সামরিক জান্তাদের শোষণ-বঞ্চনা এবং বিমাতাসুলভ আচরণের শিকার হয়ে আসছিলো বাংলার মানুষ।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ ও আপসহীন নেতৃত্বে ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ৬-দফা, ৬৯’র ১১-দফা ও গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত হয়ে ওঠে বাঙালি জাতি। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগষ্ঠিরতা অর্জন করে। ফলে বৈধ ভিত্তি পায় বাঙালির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা।
বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন, স্বাধীনতা অর্জন ছাড়া বাঙালি জাতির ওপর অত্যাচার, নির্যাতন ও বঞ্চনার অবসান হবে না। তাই তিনি ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা দেন স্বাধীনতার।
‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’- ১৮ মিনিটের ভারষণে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে মূলত সেদিন থেকেই শুরু হয় স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত অধ্যায়। বঙ্গবন্ধুর এই ডাকে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। চলতে থাকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিও। এরই ধারাবাহিকতায় সংগঠিত হতে থাকে বাংলার মানুষ।
প্রতিবাদী বাঙালিকে দমাতে পাকিস্তান বাহিনী একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে পূর্ব পাকিস্তানে চালায় নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। ‘অপারেশ সার্চ লাইট’ নামে পরিচালিত ওই অভিযানে নিরস্ত্র মানুষকে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়। এর পরপরই রাতের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এরপর শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। বাংলাদেশের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ১০ই এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারি করেন। বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন করা হয়। এই সরকার ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে শপথ গ্রহণ করে এবং মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে।
বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ও নেতৃত্বে দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয় ১৬ ডিসেম্বর। এই দিনে যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছিল। সেদিন ঢাকার কেন্দ্রস্থলে রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানের পক্ষে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন জেনারেল জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি। তিনি যৌথবাহিনীর প্রধান জেনারেল জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পণ করেন। জাতি পায় স্বাধীন রাষ্ট্র, নিজস্ব পতাকা ও জাতীয় সংগীত। বঙ্গবন্ধুর অপরিসীম ত্যাগ ও আপসহীন নেতৃত্বে পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম নেয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। ত্রিশ লাখ শহীদ এবং দুই লক্ষ মা-বোনের অসামান্য আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ। আর হাটি হাটি পা পা করে স্বাধীনতার ৪৭তম দিবসে এসেছি আমরা।
দীর্ঘ ৪৬ বছরে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার পথ মসৃণ ছিল না। বাংলাদেশ যখন ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছিলো, ঠিক সেই মুহূর্তে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তার দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে দেশে সামরিক স্বৈরশাসন ও অগণতান্ত্রিক সরকারের উত্থান ঘটে। শেখ হাসিনা দীর্ঘ নির্বাসন শেষে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে প্রত্যাবর্তন করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আন্দোলন শুরু করেন।
দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৯৬ সালে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে। পরে ক্ষমতার পালাবদলে আসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। এরপর আবারো বাঙালি জাতি দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসীন হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে পুনরায় বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ।
শেখ হাসিনা সরকারের যুগোপযোগী পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের ফলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রয়েছে নানা সাফল্য। সরকার সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে ‘ভিশন ২০২১’ ও ‘ভিশন ২০৪১’ঘোষণা করেছে। আর্থসামাজিক নানাখাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি আজ বিশ্ব দরবারে ‘রোলমডেল’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
শ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীনতার জন্য বাঙালি জাতি বিনম্র চিত্তে পরম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে বঙ্গবন্ধুসহ মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহিদদের, যাঁদের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা।
স্বাধীনতার বার্ষিকী এবার উদযাপিত হচ্ছে ভিন্ন আঙ্গিকে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে করণীয় বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ গত ৩০ অক্টোবর ইউনেস্কো ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্য’ ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টার-এ অন্তর্ভুক্ত করে ‘বিশ্বপ্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের জন্য গর্বের।
লাখো শহীদের আত্মত্যাগে অর্জিত স্বাধীনতাকে আরো অর্থবহ করতে দলমতনির্বিশেষে সম্মিলিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য। তাই তো আহ্বান এসেছে- মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও চেতনা বাস্তবায়নে দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিয়ে গড়ে উঠবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *