জাতীয়
মানবতাহীন ধর্ম শিকড়হীন বৃক্ষের ন্যায় -রুফায়দাহ পন্নী
মানবতাহীন ধর্ম শিকড়হীন বৃক্ষের ন্যায়। প্রতিটা ধর্মের মূল উদ্দেশ্যই হলো শান্তি প্রতিষ্ঠা করা, মানবতা প্রতিষ্ঠা করা। ধর্ম থেকে যখন মানবতাই হারিয়ে যায় তখন তা জলহীন তপ্ত মরুভূমিতে শিকড়হীন বৃক্ষ তথা মৃত কাষ্ঠের ন্যায় হয়ে যায়। কাউকে শান্তির ছায়া দিতে পারে না। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় অরাজনীতিক আন্দোলন হেযবুত তওহীদের উদ্যোগে ঢাকার তেজগাঁও কলেজ মিলনায়তনে ‘মানবতার কল্যাণে ধর্ম – শান্তির জন্য সংস্কৃতি’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক হিসাবে দৈনিক বজ্রশক্তির উপদেষ্টা দৈনিক দেশেরপত্রের সাবেক সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী এ কথা বলেন। তিনি অনুষ্ঠানের প্রতিপাদ্য “মানবতার জন্য ধর্ম, শান্তির জন্য সংস্কৃতি” সম্পর্কে কিছু কথা বলেন। তিনি বলেন ধর্ম এসেছে মানবতার কল্যাণে কিন্তু এক শ্রেণির ধর্মব্যবসায়ী ধর্মকে রুটি-রুজির হাতিয়ারে পরিণত করেছে। ফলে যেটা ধর্ম নয় তাও ধর্মের নামে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে ধর্ম তার প্রকৃত রূপ হারিয়ে ফেলে যে ধর্মবিশ্বাস দিয়ে সাধারণ জনতা সুখ-শান্তি লাভ করত সেই ধর্মই হয়ে দাঁড়িয়েছে যাবতীয় উন্নতি প্রগতির অন্তরায়। আমাদের প্রিয় ধর্ম ইসলাম। এর অর্থ শান্তি। শান্তি প্রতিষ্ঠাই ইসলামের মূল লক্ষ্য। সেই শান্তির ধর্মের ধ্বজাধারী সেজে থাকা স্বার্থবাজ একটি শ্রেণি বিগত কয়েক দশক ধরে সহজ-সরল সেরাতুল মোস্তাকিমকে বিভিন্ন ফেরকা-মাজহাবের জটিল জালে আবদ্ধ করে জাতিটিকে খণ্ডবিখণ্ড করে দিয়েছে অন্যদিকে বিকৃত আধ্যাত্মবাদ প্রবেশ করে প্রচণ্ড গতিশীল (ফুহধসরপ), প্রগতিশীল ইসলামকে স্থবির, অনড়, নির্জীব করে দিয়েছে। এই উভয় শ্রেণির কাজের ফলে একদা লৌহ কঠিন ঐক্যবদ্ধ দুর্বার, প্রচণ্ড গতিশীল, জ্ঞানে বিজ্ঞানে সামরিক শক্তিতে বলিয়ান জাতিটিকে খণ্ডবিখণ্ড, ঐক্যহীন, স্থবির, গতিহীন করে দেওয়া হয়েছে। এরপর যখন ইউরোপীয়ানরা আক্রমণ করল তখন এরা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না। তাদের গোলামে পরিণত হলো। বৃটিশরা একটা বুদ্ধি করল। তারা মাদ্রাসা স্থাপন করল সেখানে এমন একটা ইসলাম শিক্ষা দেওয়া হলো যেখানে শরীয়তের সূক্ষাতিসূক্ষ বিশ্লেষণ শিখানো হলো কিন্তু মানবতা শিখানো হলো না, বিবি তালাকের ফতোয়া, পর্দা, লেবাস, সুর করে ওয়াজ শেখানো হলো কিন্তু অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শিখানো হলো না। সেখানে থেকে বেরিয়ে এসে তারা ইসলামকে বিক্রি করে জীবন ধারণ করা শিখল। আজ পৃথিবীময় ইসলাম ধর্মের নাম করে ধর্মব্যবসায়ীরা যেটা বিক্রি করে খাচ্ছে সেটা আদৌ আল্লাহ-রসুলের ইসলাম নয়। এই মহাসত্য তুলে ধরেছেন হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা এমামুয্যামান আমার মহামান্য পিতা জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী।
প্রকৃত ইসলামের রূপটা কেমন ছিল সেটাই আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরার প্রয়াস পাচ্ছি।
নারীদের সম্পর্কে তিনি বলেন- মেয়েরা যুদ্ধ করেছে, আহতকে সেবা দিয়েছে, নিহতদের দাফন করেছে। প্রকৃত ইসলামের যুগে হাসপাতালের পরিচালক ছিলেন একজন নারী রুফায়দাহ (রা.)। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর ফারুক (রা.) এর সময়ে বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতেন শেফা (রা.), তিনিও একজন নারী। নারীরা যুদ্ধ ফেরতদের গান গেয়ে শুনাতেন। মহানবীর সামনা-সামনি বসে আলোচনা শুনতেন, শিক্ষা অর্জন করতেন। নারী-পুরুষ এক সাথে নামাজ পড়তেন, হজ্ব করতেন। তাহলে আজ ধর্মের দোহাই দিয়ে নারীকে চার দেয়ালে আটকে রাখার দুরভিসন্ধী কেন করা হচ্ছে? জাতির অর্ধেক শক্তি যদি নির্জীব, অকর্মন্য হয় তবে সে জাতি উন্নতি করবে কীভাবে?
অন্য নারীরা যখন বৈমানিক হয়, সেনাবাহিনীর চৌকশ অফিসার হয়, যুদ্ধ জাহাজের ক্যাপটেইন হয়, মহাকাশের নভোচারী হয় তখন আমাদের নারী কালো বোরকায় আপাদমস্তক ঢেকে ঘরের চার দেয়ালের ভেতরে তসবীহর দানা গুনে দিন কাটিয়ে দেয়। এই শিক্ষা দেওয়া হয়েছে এ জাতির নারীদের। কিন্তু আমরা মনে করি এই পৃথিবীর নির্যাতিত, নিগৃহীত মানুষকে শান্তি দেওয়ার মধ্যেই জান্নাত রয়েছে। যে ব্যক্তি মানবতার কল্যাণে, অন্য মানুষের সুখ সমৃদ্ধির জন্য চেষ্টা, সংগ্রাম করে না তার কোনো আমল কবুল হবে না, কারণ সে তো স্বার্থপর। স্বার্থপরের নামাজ নাই, সমাজ নাই, জান্নাত নাই। বিশ্বের কোটি কোটি নারী যেখানে অধিকারবঞ্চিত সেখানে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার সংগ্রাম না করে ব্যক্তিগতভাবে মোত্তাকী হওয়ার এই স্বার্থবাদী শিক্ষা তাদের কে দিল? এই ধর্মব্যবসায়ীরা। কাজেই এদের মুখোশ সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের সামনে উন্মোচন করতে হবে। না হলে এই ঘোর অমানিশা কাটবে না। নারী মহান আল্লাহর এক অসাধারণ সৃষ্টি। যারা অন্যায়, অসত্যে আর অধর্মের বিরুদ্ধে নিজের পিতা, ভাই স্বামী সন্তানকে উদ্বুদ্ধ করে এবং শেষে নিজে বীরদর্পে ময়দানে লড়াইতে অবতীর্ণ হয়।
কাজেই আজ নারীদেরকে তার সঠিক আকিদা বুঝে নেওয়ার সময় এসেছে।