Connect with us

বিশেষ নিবন্ধ

মিডিয়ায় ভুল তথ্য পরিবেশন: সংঘর্ষ নয়, বর্বরোচিত হামলা; গ্রামবাসী নয়, চিহ্নিত ধর্মব্যবসায়ী

Published

on

3

রিয়াদুল হাসান
গত সোমবার নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে হেযবুত তওহীদের সদস্যদের সাথে গ্রামবাসীর সংঘর্ষে ৩ জন নিহত হওয়ার যে সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তাতে কিছু গুরুতর তথ্যবিকৃতি লক্ষ করা গেছে। এমনও খবর প্রচার করা হয়েছে যে, গ্রামবাসীর উপর হেযবুত তওহীদ হামলা করে। আবার কিছু গণমাধ্যমে গ্রামবাসীর আক্রমণের কারণ হিসাবে বলা হয়- হেযবুত তওহীদ উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছে। অধিকাংশ মিডিয়াতে হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতার নাম উল্লেখ করা হয়েছে হুমায়ূন খান পন্নী। এই তথ্যগুলো সঠিক নয়। গণমাধ্যমে এমন ভুল তথ্য উপস্থাপন অত্যন্ত দুঃখজনক।
প্রথমত, এটা কোনো সংঘর্ষ ছিল না। এটা ছিল পূর্বপরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলা। মিডিয়াতে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে সবাই দেখেছে যে, হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিমের বাড়ি ঘেরাও করে নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটিয়ে বাড়ি লুট করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। হামলাকারীদের হাতে দেশীয় অস্ত্রও দেখা গেছে বেশকিছু টেলিভিশন সংবাদে। একজন মানুষের বাড়িতে আক্রমণ করে বাড়ি লুট ও ভাংচুর করে তিনজনকে জবাই দিয়ে হত্যা করা হলো, তারপর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হলো সেই নিথর দেহ ও দুইটা বাড়ি- এমন একটি একপাক্ষিক সন্ত্রাসী হামলাকে যারা সংঘর্ষ বলে চালিয়ে দিচ্ছে তারা কি মানুষ পুড়িয়ে এভাবে অঙ্গার বানানো, বসত-বাড়ি লুট করে জ্বালিয়ে দেওয়ার মতো এই ঘৃণ্য অপরাধকে আড়াল করতে চাচ্ছে?
দ্বিতীয়ত, জঘন্য নৃশংস এই হামলার মূল হোতাদের আড়াল করার জন্য আক্রমণের দায়টা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে গ্রামবাসীর উপর, যা ডাহা মিথ্যা কথা। যে কোনো ঘটনা গ্রামবাসী, দেশবাসী, এলাকাবাসী, স্থানীয় জনতা ইত্যাদি নামে চালানো একটা প্রতারণা ছাড়া কিছু নয়। এমন প্রশ্ন কি কারো মাথায় এলো না যে, এত বড় ঘটনার পরিকল্পনাকারী আসলে কারা, এতগুলো মানুষকে সংগঠিত করল কারা, প্ররোচিত করল কারা? রাস্তা অবরোধ করে রাখলো যেন র‌্যাব-পুলিশের গাড়ি আসতে না পারে, তারপর একযোগে কয়েক হাজার মানুষ আক্রমণ করল নির্দিষ্ট বাড়িতে, লুট করে ভাংচুর করল, আগুন দিয়ে ভস্মীভূত করল দুইটি বাড়ি ও মসজিদ, নৃশংভাবে পিটিয়ে আহত করে জবাই করা হলো, পায়ের রগ কাটা হলো তারপর গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হলো হেযবুত তওহীদের দুই সদস্যকে। তারপর পুলিশ যখন হেযবুত তওহীদের আহত ও মুমূর্ষু সদস্যদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল তখন সেই পুলিশের গাড়ি অবরোধ করে বারবার হামলা করা হলো, সবশেষে থানায় হামলা চালানো হলো যা বেশকিছু ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কল্যাণে অনেকেই দেখতে সক্ষম হয়েছেন। এই ঘটনাগুলোই বলে দেয় এটা কাদের কাজ। রগ কাটা, গলা কাটা, আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করা, গাছ ফেলে পুলিশের গাড়ি অবরোধ করা- এগুলো গ্রামবাসীর কাজ নয়, এগুলো জামায়াত-শিবির ও হেফাজতের কাজ। গ্রামবাসী হলে হেযবুত তওহীদের সদস্যদের সর্বোচ্চ হত্যা করতে পারতো কিন্তু এভাবে রগ কেটে, জবাই করে, চোখ উপড়ে, গায়ে পেট্রোল ঢেলে আবার তার ভিডিও ফেসবুকে প্রচার করতে পারত না। তাছাড়া ষড়যন্ত্রকারীদেরকে আমরা ব্যক্তিগতভাবেও চিনি, তাদের বিরুদ্ধে জিডিও করা হয়েছিল। মূলত এই ঘটনা সংঘটনের অসৎ উদ্দেশ্যে গত ১১ মার্চ ১৬ খ্রি. তারিখে জামায়াত-হেফাজতের কিছু কর্মী জুম’আর সময় পোরকরা গ্রামের মসজিদে মসজিদে মুসল্লীদের মাঝে নাম-ঠিকানা বিহীন “হেযবুত তওহীদ একটি কুফরি সংগঠন” শিরোনামের এক উড়ো হ্যান্ডবিল বিলি করে। তারপর হেযবুত তওহীদ সদস্যদের উক্ত গ্রাম থেকে উচ্ছেদ করার জন্য উসকানিমূলক বক্তব্য ও বে-আইনী ফতোয়া দিয়ে মুসল্লীদের উত্তেজিত করে তোলে জামায়াত ও হেফাজতের কিছু ইমাম। এর পর থেকেই জামায়াত-হেফাজতের নেতাকর্মীরা হেযবুত তওহীদের কর্মীদেরকে কাফের খ্রিষ্টান ইত্যাদি ফতোয়া দিয়ে তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার জন্য জনগণকে উসকানি দিতে থাকে। এই পরিস্থিতি প্রশাসনকে কয়েকদিন ধরে বারবার অবগত করার পরও প্রশাসনের চোখের সামনে, তাদের নিষ্ক্রিয় নির্লিপ্ততার সুযোগেই তারা এমন ধ্বংসযজ্ঞ ঘটায়।
উল্লেখ্য যে, ২০০৯ সনেও তারা হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে এমনই মিথ্যা ফতোয়াবাজি করে সাধারণ মুসল্লিদের ধর্মবিশ্বাসকে ভুল খাতে প্রবাহিত করে আমাদের ৮ টি বাড়ি লুট করে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে ভস্মীভূত করে দিয়েছিল, যে কাজটা বিভিন্ন ইস্যুতে তারা সারা দেশেই করে। এর পুনরাবৃত্তি ঘটালো আজ। কোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে হলে পূর্বপরিকল্পনা ছাড়া সম্ভব হয় না।
তৃতীয়ত, কিছু মিডিয়াতে এসেছে- হেযবুত তওহীদ গ্রামবাসীর উপর আক্রমণ করে। এমন সংবাদ কেবল নির্বোধ মানুষই বিশ্বাস করতে পারে। ঘটনায় আশপাশের প্রায় পাঁচ-ছয়টি গ্রামের হেফাজত ও জামায়াতপন্থী জনগণ ও তাদের মিথ্যা প্রচারণায় প্ররোচিত হয়ে কিছু সাধারণ মানুষও অংশ নেয়। আক্রমণকারীরা ছিল কয়েক হাজার, তাদের অধিকাংশের হাতে দেখা গেছে কাঁচা বাশের লাঠি ও বেশ কিছু মানুষের হাতে দেশীয় অস্ত্র। আর হেযবুত তওহীদের নারী-শিশুসহ সর্বমোট ১১২ জন সেখানে উপস্থিত ছিল, যারা সকলেই ছিল নিরস্ত্র। যাদের অধিকাংশ ঐ গ্রামেরই বাসিন্দা আর কিছু মানুষ আশেপাশের জেলা থেকে মসজিদ নির্মাণে স্বেচ্ছাশ্রম দিতে আসা হেযবুত তওহীদের সদস্য। এমন প্রশ্ন কি এ সমস্ত সংবাদদাতার মনে জাগেনি যে, হেযবুত তওহীদ যদি আক্রমণ করে তবে ঘটনাটি তাদের বাড়িতে কীভাবে ঘটল, তাদের মানুষ নিহত হলো কীভাবে, তাদের বাড়ি লুট, ভাংচুর ও আগুনে ভস্মীভূত হলো কীভাবে? সামান্য কিছু মানুষ নিয়ে হাজার হাজার মানুষের উপর আক্রমণ বা তাদের সাথে সংঘর্ষ কীভাবে হয়? কীভাবে ৫-৬ টি গ্রামের মানুষ একত্রিত হয়ে গেল? কীভাবে অধিকাংশের হাতে নতুন বানানো লাঠি আসলো, দেশীয় অস্ত্র আসলো?
চতুর্থত, কিছু গণমাধ্যমে এসেছে- হেযবুত তওহীদ উসকানিমূলক বক্তব্য দিলে এ ঘটনার সূত্রপাত হয়। এটা সবারই জানা কথা যে উসকানি দিয়ে সাধারণ মানুষকে কারো বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া হয়। হেযবুত তওহীদ যদি উসকানি দিত তবে তো সাধারণ মানুষ হেযবুত তওহীদের উসকানিতে প্ররোচিত হয়ে হেফাজত-জামায়াতের বাড়িতে আক্রমণ করত, তাদের মানুষ হত্যা করে বাড়িঘর লুট করত। কিন্তু উল্টো ঘটনা কীভাবে ঘটল?
পঞ্চমত, অনেকগুলো মিডিয়া প্রচার করেছে হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা হুমায়ূন খান পন্নী। এই তথ্য থেকে এটা প্রমাণিত হয় যে, ঐ সংবাদকর্মীরা সংবাদ সংগ্রহে কতটা অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠা করেছেন টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী পন্নী পরিবারের সন্তান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী। যে কোনো সদস্যকে প্রশ্ন করলেই এই তথ্যটি তারা পেতে পারতেন। কিন্তু যারা আক্রমণ করে ভাংচুর করেছে তাদের কাছে গিয়েই যদি প্রশ্ন করা হয় এই ঘটনার বৃত্তান্ত কী তবে ঘটনার সঠিক ও নির্মোহ বর্ণনা পাওয়া যাবে না এটাই স্বাভাবিক।
গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে আমাদের আহ্বান আপনারা এভাবে আর মিথ্য তথ্য পরিবেশন করে সাধারণ মানুষকে সত্য থেকে বঞ্চিত করবেন না, মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন না। আর সাধারণ মানুষকে বলব, আপনারা যে কোনো সংবাদ পড়ে নিজের জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়ে একটু যাচাই করে দেখবেন, তাহলে আপনার বিবেক কিছু সত্য এমনিতেই উদ্ঘাটন করে আনবে। লেখক: সাহিত্য সম্পাদক, হেযবুত তওহীদ।

আরো পড়ুন: 

ছবিতে হেযবুত তওহীদ সদস্যদের উপর জামায়াত-হেফাজতের তান্ডব চিত্র

নোয়াখালীর ঘটনার প্রতিবাদে হেযবুত তওহীদের সংবাদ সম্মেলন

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *