বিবিধ
যদি গণপরিবহনে উঠতেই হয়, এই নিয়মগুলো মনে রাখুন
বেশ কয়েকদিন আগে তীব্র উৎকন্ঠা নিয়ে গণ পরিবহনে উঠলাম। পেট্রোল বোমায় একই বাসে সাতজন পুড়ে মরার ঘটনা তখনো টাটকা। গত একমাসে প্রায় ৮০ জন মারা গেলেন। এ শুধু মানুষের পুড়ে মরার পরিসংখ্যান নয়, তারচেয়ে বেশি কিছু। লাশগুলো ততক্ষণে মর্গ ছেড়ে দূর দুরান্তে বাড়ির উদ্দেশ্যে, কবরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। মর্গগুলো নতুন লাশের অপেক্ষায়। একবার মরে গেলে আর ভাবনা থাকেনা। আক্রান্ত ও মৃত এক বালিকার কাল্পনিক চিঠি ফেসবুকের ওয়ালে ওয়ালে ঘুরছে। মৃতদের কোন বক্তব্যও থাকেনা। ভাবনাটা জীবিতদের। নিুলিখিত সতর্কতাগুলো তাই জীবিতদের জন্য। ইন্টারনেটে অনেক খুঁজছিলাম, পেট্রোল বোমা থেকে সুরক্ষিত থাকার উপায়। নেই। পেট্রোল বোমা তৈরির অনেক রেসিপি আছে। কিন্তু পেট্রোল বোমা থেকে বাঁচার উপায় কোথাও নেই তাই পাঠকদের সুবিদার্থে আমি লিখছি। বিষয়গুলো মনে রাখার চেষ্টা করুন। ০১. অপ্রয়োজনীয় চলাচল আপাতত বন্ধ রাখুন: রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত অপ্রয়োজনীয় চলাচল বন্ধ রাখুন। যে কাজটি কয়েক সপ্তাহ পরে করলে হবে অথবা এখন না করলেও সমস্যা নেই সে কাজের জন্য আপাতত বাইরে না যাওয়াই উত্তম।
০২. গণপরিবহন এড়িয়ে চলুন: যদি বাইরে বের হতে হয়, তাহলে গণপরিবহন এড়িয়ে চলুন। রিকশা বা সাইকেল এই মুহূর্তে ভালো কাজে দিবে। হরতালের কারণে রাজপথগুলো রিকশার দখলে। রিকশা চলাচলের দূরুত্বের বাইরে না যাওয়াই আপাতত ভালো।
০৩. গণপরিবহনে যদি উঠতেই হয়: গণপরিবহনে উঠতে হলে তাড়াহুড়ো না করে স্থির হয়ে সতর্কতার সাথে কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে।
ক. বাসের সব জানালা আছে কিনা দেখে নিন। ঢাকা শহরের অধিকাংশ বাসের জানালা ঠিকঠাক নেই। আর বোমাগুলো ছোড়া হচ্ছে এই পথ দিয়ে। তাই বাসে চড়ার সময় এই সতর্কতা টুকুই আপনার প্রাণ বাচিয়ে দিতে পারে।
খ. বাসের জানালা সব সময় বন্ধ রাখুন। তবে কিছু সহযাত্রীকে দেখবেন কিছুটা জানালা খুলে রাখছেন, বাতাসের জন্য। যদিও এটি অনিরাপদ তবে সহযাত্রীটি সতর্ক হলে অসুবিধা নেই। এই খোলা জানালাটি যদি আপনার কাছাকাছি হয়, তাহলে সেই সতর্ক যাত্রী কোন স্টপেজে নেমে গেলে-নিজ দায়িত্বে জানালাটি লাগিয়ে দিন। কেননা ঐ স্থানে আসন গ্রহণকারী পরের যাত্রীটি আগের জনের মতো সতর্ক নাও হতে পারেন।ঘ. বাসের দরজার আশেপাশের সিটগুলোকে এড়িয়ে বসার চেষ্টা করুন।
ঙ. লোকাল বাসগুলোতে নারীদের জন্য ড্রাইভারের পাশে যে আসন- সেগুলোতে জানালার দিকে পিঠ দিয়ে বসতে হয়।
ফলে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় থাকেন নারীরা। এই কদিন তারা এই সিটগুলো এড়িয়ে চলতে পারেন। আর বসলেও জানালাগুলো বন্ধ করে নিতে হবে। সেদিন বাসে কয়েকজন সতর্কপুরুষ দেখলেও নারীদেরকে খোলা জানালার পাশে বেশ নিশ্চিন্ত দেখলাম। স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের দেশের নারীরা রাজনীতি, সহিংসতা ও সংবাদ- এগুলোকে এড়িয়ে চলেন। ফলে তাদের ভেতরে সচেতনতাটা তৈরি হয়নি। তাই রাস্তায় চলাচলকারী আপনার স্ত্রী বা কন্যা সন্তান বা বোনকে সাধারণ সতর্কতাগুলো বুঝিয়ে দিন।
চ. যানবাহনে চলার সময়টুকু পুরো মাত্রায় সতর্ক থাকুন। একদিনের জন্য গণপরিবহনে চড়ে ফেসবুকিং, কানে হেডফোন দিয়ে গান শোনা বা অন্য মনস্ক হয়ে থাকা বন্ধ রাখুন। এ সময়টা চারপাশে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন।
ছ. গত এক মাসের হামলাগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ফাঁকা এবং অতিরিক্ত ভিড়ের জায়গাগুলো অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। বাস এমন স্থানে এলে সতর্কতার মাত্রা বাড়িয়ে দিন।
যদি আক্রান্ত হন:
যদি আক্রান্ত হন তাহলে কয়েকটি বিষয় আগেভাগেই জেনে রাখুন:
আগুনের ত্রিভুজ সূত্র: একটি আগুনের জন্য তিনটি বিষয়ের প্রয়োজন। ১. জ্বালানি ২. অক্সিজেন ৩. তাপ । যখন কোথাও আগুন ধরে তখন একটি চেইন রিএ্যাকশনের মাধ্যমে এগুলোর যোগান তৈরি হয় এবং পুড়ে শেষ না হওয়া পর্যন্ত এটা চলতে থাকে। তাই আগুন নেভাতে গেলে তিনটির যেকোন একটির অনুপস্থিতি ঘটাতে হবে।
নিজে আক্রান্ত হলে করণীয়: আপনার শরীরের কোথাও আগুন লাগলে যদি আপনি প্যানিক হয়ে দৌঁড়াতে শুরু করেন, তাহলে আগুনে অক্সিজেন যুক্ত হবে, আগুনের মাত্রা বেড়ে যাবে। তাই খালি হাতে আগুনের সাথে লড়াই করার সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে দুহাতে মুখ ঢেকে মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়া। এভাবে কয়েকবার গড়িয়ে আপনি নিজেই নিজের আগুন নিভিয়ে ফেলতে পারবেন।
আক্রান্ত হতে দেখলে করনীয়: পেট্রোল পানির চেয়ে হালকা অর্থাৎ পানিতে ভাসে এবং পানিতেও অক্সিজেন থাকে। তাই পেট্রোলের আগুনে পানি দিলে আগুন নেভানো যায় না। বরং বেড়ে যেতে পারে। এ কারণে আক্রান্ত ব্যক্তির গায়ে পানি না ঢেলে মোটা কাপড় দিয়ে জড়িয়ে ধরতে হবে।
সকলের জন্য:
দুটি নম্বর এখনই আপনার মোবাইলে সেইভ করে রাখুন। এ দুটি ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের কন্ট্রোল রুমের নম্বর। টিন্ডটি- ০২-৯৫৫৫ ৫৫৫ এবং ০১৭৩০৩৩৬৬৯৯। তবে আমার মনে হয়, আক্রান্ত হবার মুহূর্তে আপনার ফায়ার সার্ভিসের চেয়ে এ্যাম্বুলেন্স এর প্রয়োজন হবে। তাই ঢাকা অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের নম্বর গুলো সংরক্ষণ করে রাখুন। সাহস হারাবেন না। সতর্ক থাকুন।