Connect with us

জাতীয়

যুক্তরাষ্ট্রে নিহত আলাউদ্দিনের বাড়িতে শোকের মাতম; ৯০ বছর বয়সী মা জানে না ছেলে মৃত

Published

on

Alauddin (1)মাওলানা আলাউদ্দিন আখঞ্জী

চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি: মাওলানা আলাউদ্দিন আখঞ্জী ২০১১ সালে স্ব-পরিবারে পাড়ি দিয়েছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। ৯০ বছর বয়সের তার মা জননী থাকতেন চুনারুটের গোছাপাড়া গ্রামে। অসুস্থ মাকে দেখার জন্য ৩১শে আগস্ট দেশে ফেরার কথা ছিল তার। মা জননীর সঙ্গেই পবিত্র ঈদুল আজহা পালনের ইচ্ছা ছিল। এখনও মা জননী জানেন না তার ছেলে যে মৃত। অপেক্ষায় বসে আছেন পথ চেয়ে খবে আসবে আমার ছেলে আলাউদ্দিন। দুর্বৃত্তের গুলিতে তার মৃত্যুর খবর এখনও জানেন না বৃদ্ধ মা।
শনিবার ইউ.এস.এ স্থানীয় সময় বেলা ১টা ৫০ মিনিটে কুইন্সের ওজন পার্কে আল ফুরকান জামে মসজিদ থেকে জোহরের নামাজ শেষে বাসার উদ্দেশ্যে ফেরার পথে এলাকার ৭৮ নং রোড়ের কাছে গুলি করে হত্যা করা হয় ওই আলেম ও তার সহকারীকে। মাওলানা আলাউদ্দিনের মৃত্যুতে চুনারুঘাট উপজেলার আমুরোড বাজার সংলগ্ন গোছাপাড়া গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে। স্বজনরা তার মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। মরহুমের ভাইদের মধ্যে শাহ্ মহিউদ্দিন আখনঞ্জী, মাওলানা শাহ্ জালাল আহমদ আখঞ্জী, মাওলানা নাছির উদ্দিন আখঞ্জী মরহুমের লাশ দেশে আনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন।
মাওলানা আলাউদ্দিন আখঞ্জী চুনারুঘাটের আমুরোড গোছাপাড়া গ্রামের সম্ভ্রান্ত আলেম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতা সুফি-সাহিত্যিক মরহুম মাওলানা শাহ সামছুদ্দিন আখঞ্জী আমুরোড জামে মসজিদের সাবেক খতিব। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে তিনি হবিগঞ্জের বিশিষ্ট আলেম হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি প্রথমে শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জামে মসজিদ, ইনাতগঞ্জের নাদামপুর জামে মসজিদ ও পরে হবিগঞ্জ চৌধুরী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করেন। তার মেয়ে জান্নাতুন নাঈম আখঞ্জী (নাইমা) ও তার মেয়ের জামাতা নাইমার স্বামীর প্রচেষ্টায় ২০১১ সালে তাকে সপরিবারে আমেরিকা নিয়ে যান।

মাওলানা আলাউদ্দিন আখঞ্জী

প্রথমে একটি সাধারন মসজিদে ইমাম হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন পরবর্তীতে সেখানকার কুইন্স ওজনপার্কে অবস্থিত আল ফুরকান জামে মসজিদে তিনি খতিব ও ইমামতি করতেন। হবিগঞ্জের সাবেক ছাত্রনেতা ও নিউ ইয়র্ক প্রবাসী আবুল কালাম জানান, আলাউদ্দিন আখঞ্জীকে সবাই ভালোবাসত। তিনি ন্যায়পরায়ণ, সৎ ও নিরীহ ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্র হবিগঞ্জ জেলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নোমান বলেন, মাওলানা আলাউদ্দিনের মৃত্যুতে প্রবাসীদের মনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এই হত্যাকান্ডের পর প্রবাসীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আলাউদ্দিন আখঞ্জীর ভাই হবিগঞ্জ টাউন মসজিদের ইমাম মাওলানা নাছির উদ্দিন আখঞ্জী বলেন, তার ভাই অত্যন্ত নিরীহ মানুষ ছিলেন। তিনি কখনো একটা মাছিকেও আঘাত করেননি। তিনি অত্যন্ত ধার্মিক এবং সবার কাছে শ্রদ্ধাভাজন ছিলেন।
হবিগঞ্জ চৌধুরী বাজার জামে মসজিদের বর্তমান খতিব মাওলানা আবদুল মজিদ বলেন, আলাউদ্দিন আখঞ্জী বিদেশে থাকলেও এই মসজিদের মুসল্লিরা সব সময় তাঁকে স্মরণ করতেন।
তার মৃত্যুতে এই মসজিদের মুসল্লিরা শোকাহত। মাওলানা আলাউদ্দিন আখঞ্জীর ছেলে ফয়েজ উদ্দিন আখঞ্জী বলেন, তার দাদি আমিনা খাতুন খুবই অসুস্থ এবং বৃদ্ধ। মূলত তাকে দেখা এবং মাকে নিয়ে ঈদুল আযহা করার কথা ছিল তার। মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান আজাদ বলেন, তাদের পরিবারের সবাই ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত এবং বিভিন্ন মসজিদে ইমামের দায়িত্ব পালনসহ অনেক ভাইয়েরা চাকরী করছেন।
আলাউদ্দিন আখঞ্জীর বড় ছেলে ফয়েজ উদ্দিন আখঞ্জী জানান, তার দাদি আমিনা খাতুনের বয়স ৯০ বছর। তিনি এখনও জানেন না তার ছেলে মারা গেছেন। মাওলানা আলাউদ্দিন তিনি চট্রগ্রামের ষোল শহর নামক স্থানের জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসা থেকে টাইটেল পাসসহ ইসলামের বিভিন্ন শাখায় সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেন।
তার বাবা সুফি-সাহিত্যিক শাহ শামসুদ্দিন আখঞ্জি ছিলেন এলাকার প্রখ্যাত আলেম ও পীর। তাদের বাড়িতে প্রতি বছর উরশসহ বিভিন্ন ইসলামী জলসা হয়। তার বাবার নামে বাড়িতেই রয়েছে ইমাম আহমদ রেযা-শাহ শামছুদ্দিন আখঞ্জী দাখিল মাদ্রাসা ও ইসলামী একাডেমি। মাওলানার স্ত্রী মিনারা খাতুন, ছেলে শাহ সাইফুদ্দিন আখঞ্জী, নাইম উদ্দিন আখঞ্জী, তাজউদ্দিন আখঞ্জী, ইমামউদ্দিন আখঞ্জী, মেয়ে জান্নাতুল নাইম আখঞ্জী (নাইমা) ও রিমা আখঞ্জীকে নিয়ে তিনি আমেরিকায় বাস করতেন।
আলাউদ্দিনের মৃত্যুতে হবিগঞ্জ-৪ সংসদীয় আসনের এমপি অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী, উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, চুনারুঘাট প্রেস ক্লাব, চুনারুঘাট রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী শোক প্রকাশ করেছেন। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ হবিগঞ্জ জেলা ও চুনারুঘাট উপজেলা শাখার নেতৃবৃন্দ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন তার মৃত্যুতে।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *