Connect with us

দেশজুড়ে

যে ঈমান পৃথিবীতে মানুষের কল্যাণে আসে না সে ঈমান জান্নাতেও নিতে পারবে না -রুফায়দাহ পন্নী

Published

on

নিজস্ব প্রতিনিধি: যে ঈমান পৃথিবীতে মানুষের কল্যাণে আসে না সে ঈমান পরকালে জান্নাতেও নিতে পারবে না- শনিবার নোয়াখালীর চৌমুহনী গণমিলনায়তনে হেযবুত তওহীদ কর্তৃক আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে দৈনিক বজ্রশক্তির উপদেষ্টা ও দৈনিক দেশেরপত্রের সাবেক সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, আমাদের ঈমানকে বারবার ভুল পথে পরিচালিত করা হয়েছে। সরল ধর্মপ্রাণ, ঈমানদার মানুষের ঈমানকে মানবতার কল্যাণ, দেশের উন্নতি, সমৃদ্ধি, জাতীয় প্রগতির পরিবর্তে বারবার ধ্বংসাত্মক কাজে, জাতির অকল্যাণের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। ধ্বংসাত্মক কাজে ব্যবহৃত এই ঈমান জান্নাত নয় বরং জাহান্নামের কারণ হবে। কেউ বলছে- ওখানে বোমা মার তাহলে তুমি জান্নাতে যাবে, কেউ বলছে আমাদের ভোট দাও তুমি জান্নাতে যাবে, কেউ বলছে আমাকে টাকা দাও, হাশরের ময়দানে তোমার হাতে জান্নাতের টিকিট ধরিয়ে দেব। অর্থাৎ মানুষের ঈমানকে ভুল পথে কাজে লাগানো হচ্ছে। এ জন্য ঈমান এখন মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ মুসলমান, এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর ধর্মবিশ্বাসকে কোনোভাবেই অবজ্ঞা করার বা খাটো করে দেখার উপায় নেই। রাজনীতিতেও ধর্ম এখন এক নম্বর ইস্যু। তাই এটাকে অবজ্ঞা করে ফেলে রাখলে বারবার স্বার্থবাদীদের হাতে পড়ে জাতির অকল্যাণে ব্যবহৃত হবে।
তিনি একটি উদাহারণ পেশ করে বলেন, কিছুদিন আগে ব্লগে আল্লাহ রসুলকে গালাগালি করেছে, ফলে ঈমানদার জনতার, মুসলিম জনতার বিক্ষোভ আমরা দেখেছি। রাস্তা ঘাট ভাঙচুর করেছে, গাড়ি ভাঙচুর করেছে, গাছ কেটেছে, আমরা সবাই সেগুলো দেখেছি। আমি একজন গুনাহগার হতে পারি, কিন্তু রসুলাল্লাহর পদতলে আমার মস্তক সমর্পিত। রসুলের উম্মত পরিচয় দিতে আমি গৌরব বোধ করি। আমার রসুলকে যদি কেউ গালাগাল করে আমি সহ্য করব না, কোনো মু’মিনই মেনে নেবে না। কিন্তু এই যে প্রতিবাদ করতে গিয়ে ভাংচুর করা হলো, সংঘর্ষ করা হলো, গাড়ি-অফিস-আদালতে আগুন লাগানো হলো, গাছ কাটা হলো, এতে কার ক্ষতি হলো? কার বিরুদ্ধে লড়াই হলো? নিজের দেশের বিরুদ্ধে, নিজের মানুষের বিরুদ্ধে। যারা গালাগালি করল তারা তো ধরাছোঁয়ার বাইরে, তারা তো দেশে থাকে না। এই যে গালাগালি করেছে, এই পরিস্থিতিতে আমাদের কর্মপন্থা কী হওয়া উচিত? এমন ক্ষেত্রে আল্লাহর রসুল কী করেছেন? রসুলাল্লাহ তাঁর আসহাবদের সঙ্গে নিয়ে সত্যের প্রতি অটল থেকে সত্যের প্রতি দাওয়াত দিয়ে গেছেন। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, একদিন যারা গালাগালি করেছে, হুজুরকে অত্যাচার করেছে, কিছুদিন পর তারাই সত্যকে গ্রহণ করে নিয়েছে। আর যারা সত্যকে গ্রহণ করে নি, তাদের নাম মুছে গেছে।
কথা হলো- এই যে আমাদের দেশে একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হলো, বারবার সৃষ্টি করা হচ্ছে এসব কারা করছে? করছে স্বার্থবাদী সেই শ্রেণি যারা ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত করে। এটাকেই আমরা বলছি ধর্মকে স্বার্থের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার। ফলে পশ্চিমা ভাবাদর্শে উজ্জীবিত তথাকথিত চিন্তাশীল এক শ্রেণির মানুষ ইসলামকে আক্রমণ করে বলছে যে, ধর্ম কূপমণ্ডূকতা, ধর্ম প্রগতিবিরোধী, ইসলাম সন্ত্রাসের ধর্ম, জঙ্গিবাদের স্রষ্টা ইত্যাদি কাজেই ধর্মকে বাদ দাও। এভাবে ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে, সমাজ থেকে বাদ দিয়ে বর্তমানে এটি কেবল মসজিদ-মাদ্রাসার ভেতরে অবস্থান করছে। এখন ধর্মপ্রাণ মানুষগুলি কোনঠাসা হয়ে আছে। এদের অপকর্মের কারণে শান্তির ধর্ম ইসলাম আক্রান্ত হচ্ছে। এরা মানুষের ঈমানের স্পিরিট ধ্বংস করে দিয়েছে। এই জন্য হাশরের দিন আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
আমাদের কথা হলো- এই মহামূল্যবান ঈমানকে আমরা মানুষের কল্যাণের পথে কাজে লাগাতে পারি। সে প্রস্তাবনাই নিয়ে এসেছি আমরা। মানুষের ঈমান যেন অকল্যাণের পথে ব্যবহৃত না হয়, কোনো স্বার্থবাদী যেন মানুষকে ভুল পথে প্রবাহিত করতে না পারে সে জন্য মানুষকে প্রকৃত ধর্মের শিক্ষা প্রদান করা আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জাতীয় উন্নয়নের নারীদের ভূমিকা তুলে ধরে তিনি বলেন, নারীদের ব্যাপারে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা আজ আমাদেরকে দেওয়া হয় না। ধর্মব্যবসায়ী কূপকণ্ডূক একটি শ্রেণি ইসলামের দোহাই দিয়ে নারীদেরকে চার দেওয়ালের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখতে চায়। তারা মিথ্যা ফতোয়ার শিকলে নারী সমাজকে বেঁধে রাখতে চায়। কিন্তু জাতির অর্ধেক শক্তি নারী- তারা জাতির উন্নতিতে কোনো ভূমিকা রাখতে না পারলে আমরা অগ্রসর হতে পারব না। ফলে আমাদের মুক্তির ধর্ম ইসলাম, প্রগতির ধর্ম ইসলামকে বলা হবে কূপমন্ডূক, প্রগতিবিরোধী ইত্যাদি। এখন এ শিক্ষাটি দেওয়া দরকার হয়ে পড়েছে যে, প্রকৃত ইসলাম নারীদেরকে রুদ্ধ করে না। নারীরা রসুলের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন, আহতদের সেবা করেছেন, নিহতদের দাফন করেছেন, বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করেছেন। তারা হুজুরের সামনা-সামনি বসে আলোচনা শুনতেন, সেখানে কোনো পর্দা টাঙ্গানো ছিল বলে উল্লেখ পাওয়া যায় না। নারী-পুরুষ একসঙ্গে হজ্ব করেছেন এবং আজও করছেন। তারা মসজিদে একসঙ্গে সালাহ কায়েম করেছেন। সমস্ত জাতীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নারী-পুরুষ সমান তালে করতেন। তাহলে আজ আমাদের নারীদেরকে এরকম প্যাকেটবন্দী করে রাখার কারণ কী? আমরা বলতে চাই- এই শিক্ষাটা আমাদের নারীদের দিতে চাই। তোমরা শোনো। শালীনতার মধ্যে থেকে তোমাদের ঈমানকে, তোমাদের বিশ্বাসকে তোমরা জাতির উন্নতি-প্রগতির কাজে লাগাও। ধর্ম তোমাদের বাধা দেয় নাই। ইসলাম হলো আকাশের মতো উদার ও সমুদ্রের মতো বিশাল একটি জীবনব্যবস্থা। এই ইসলাম থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে তোমরা জাতির উন্নতির কাজে লাগতে পার। তোমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তোমাদেরকে ঘরে বন্দী করে রাখা হয়েছে। শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে পরিপূর্ণ শিক্ষা দেওয়া হয় নি, এটি আংশিক শিক্ষাব্যবস্থা। ব্রিটিশরা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে দুইভাগ করে, মাদ্রাসা শিক্ষা ও সাধারণ শিক্ষা- এই শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে ইসলামের মূল স্পিরিটটি দেয়া হয় নি। মানুষের কল্যাণে কাজ করাই যে মানুষের ধর্ম সেটাকে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ধর্ম-কর্মকে সংকীর্ণতার মধ্যে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। আর অপরদিকে সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মকে বাদ দেওয়া হয়েছে, তাদের জন্য ধর্মই রাখা হয় নি। ফলে ওখান থেকে মানুষের জন্য, দেশের জন্য নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমিক বের হয় না। ওখান থেকে বের হয়ে এসে তারা ধর্মকে গালাগাল করে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার এই গোড়ার ত্র“টি আজও রয়ে গেছে- এটা অস্বীকার করার উপায় নেই।
আজ জাতির সম্পদ ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে, জাতির ঐক্য নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে এ ব্যাপারে তারা কিছু বলে না। ঐক্য নষ্ট করা যে কুফর সে ব্যাপারে তাদের কোনো কথা বেরোয় না। কাজেই আসুন, আমরা এই সত্যটিই তুলে ধরছি। কিন্তু আমাদের এই কথাটিই যারা ধর্মের নামে রাজনীতি করে তারা আমাদের বক্তব্যকে বিকৃত করে মানুষের সামনে উপস্থাপন করেছে। আমাদের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো হয়েছে, আমরা নাকি খ্রিষ্টান হয়ে গেছি। ধর্মব্যবসায়ীরা আমাদের বাড়ি-ঘরে হামলা করেছে, এমনকি বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, ছেলে-মেয়েসহ আমাদেরকে জেল খাটিয়েছে। কিন্তু পরে প্রমাণিত হয়েছে আমরা নির্দোষ, নিরপরাধ। আমরা ধর্মের সেই দিক নিয়ে কথা বলি যেই দিককে প্রতিষ্ঠা করার জন্য রসুল এসেছিলেন। আমরা ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করি না, রাজনীতি করি না, মানুষকে বিভ্রান্ত করি না। আমরা সর্বদাই সত্যকে উপস্থাপন করি। আমরা ধর্মের নামে তাণ্ডব চালানোর পক্ষপাতি নই। সে জন্য বলা হয়েছে আমরা নাকি খ্রিষ্টান হয়ে গেছি।
কাজেই আপনারা যারা এখানে এসেছেন আপনারা আমাদের কথা শুনুন, আমাদেরকে জানুন। আমাদের কথায় যদি ভুল কিছু পান তাহলে আমাদেরকে পরামর্শ দিন। আমাদের ভুল ধরিয়ে দিন। আমরাও মানুষ। আমাদের ভুল হতে পারে। কিন্তু মানসিকভাবে আমরা প্রস্তুত আছি তেমন কোনো ভুল থাকলে তা শুধরে নিতে। কিন্তু আমরা যে উদ্দেশ্যে সংগ্রাম করছি সেটাকে ভুল বুঝবেন না, ধর্মব্যবসায়ীদের দ্বারা প্রভাবিত হবেন না। আমরা আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশকে বাঁচাতে চাই। দেশ যদি ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে আমাদের কারোরই পরিচয় থাকবে না।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *