Connect with us

দেশজুড়ে

সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র শেরপুরের রাজার পাহাড়

Published

on

Razer Pahar_1-3-16রেজাউল করিম বকুল, শেরপুর: বইছে ফাল্গুনী হাওয়া। মনটা যেন উরু উরু করছে। চলোনা ঘুরে আসি। কোথায়? রাজার পাহাড়ে। এমনটা যারা ভাবছেন তারা বন্ধু বান্ধবী নিয়ে আসতে পারেন এ নির্জনে। ভ্রমন পিপাসা মেটাতে অনেক উৎসুক মানুষ আসেন এখানে। তবে কেন আসে? এ প্রশ্ন আসবেই। পাহাড় আর নদী ঘেরা শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়। এর প্রত্যেকটি পাহাড় সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি। মেঘালয় ঘেঁষা অবারিত সবুজের সমারোহে গারো পাহাড়ের অবস্থান। এখানে রয়েছে ছোট বড় অসংখ্য টিলা। কত যে মনোমুগ্ধকর না দেখলে হয়তোবা বিশ্বাস হবেনা। যারা একবার দৃশ্যগুলো অবলোক করেছেন তারাই অনুভব করতে পেরেছেন। গারো পাহাড়ের অন্যতম আকর্ষনীয় সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র রাজার পাহাড়। একবার এলে বার বার আসতে মনকে নাড়া দেবে। প্রায় দেড়শ ফুট উচুঁ টিলা। সেখান থেকে দেখা যায় মেঘালয়ের অনেক কিছু। প্রতিদিন এখানে আবেগ তাড়িত শতশত মানুষের সমাগম ঘটে। জমে ওঠে সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র রাজার পাহাড়।
এ পাহাড় নিয়ে কিংবদন্তি রয়েছে। প্রাচীনকালে সম্ভ্রান্ত রাজ বংশের জনৈক এক রাজার অবস্থান ছিল এখানে। তার নামেই এখানকার নাম হয় রাজার পাহাড়। রাজার পাহাড়ের আগের সৌন্দর্য নেই। তবে এর বৈশিষ্ট্য আলাদা। প্রতিবেশি পাহাড় গুলোর তুলনায় ব্যাতিক্রমী। এখানে অনেক পাহাড়ের মধ্যে রাজার পাহাড়ের উচ্চতা সবচেয়ে বেশি। এর চূড়ায় শতাধিক হেক্টর জমির সমতল ভূমি। সবুজ আর নীলের সংমিশ্রন। যেন মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা আকাশ ছোঁয়া বিশাল পাহাড়। এর নৈশর্গিক দৃশ্য মনকে করে আবেগ তাড়িত। প্রাকৃতিকভাবেই গড়ে ওঠেছে এ পাহাড়। শীতকালে প্রতিদিন শতশত মানুষের ভিড়ে পাহাড় হয়ে ওঠে কোলাহলপূর্ন। এটি পর্যটন কেন্দ্র হলে ভ্রমন পিপাসুদের চাহিদা পূরনে যোগ হবে নতুন মাত্রা। দেশের পর্যটন শিল্প উন্নয়নের তালিকায় আসবে রাজার পাহাড়। এখান থেকে আয় হবে বছরে লাখ লাখ টাকা। প্রতিবেশি গ্রামের আদিবাসী বেকারদের জন্যে হবে কর্ম সংস্থানের নতুন পথ। দেশি বিদেশী পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হয়ে ওঠবে রাজার পাহাড়। এ ফালগুনে সরেজমিন গেলে কথা হয় এলাকাবাসী, ভ্রমন পিপাসু, পর্যটক, স্থানীয় জনপ্রনিধি ও প্রশাসনসহ বিভিন্ন সূত্রের সাথে। তারা তুলে ধরেন এমনি চিত্র।
শেরপুরের শ্রীবরদী পৌর শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে রাজার পাহাড়। এটি মানুষের জন্য বিনোদন স্পটে পরিচিত। শীত এলেই শহর থেকে রাজার পাহাড়ের নির্মল পরিবেশে বেড়াতে আসে অনেকে। পাশে আদিবাসী জনপদ বাবেলাকোনা। এটি যেন অসংখ্য উচু টিলায় ঘেরা অন্যবদ্য গ্রাম। প্রাচীন কাল থেকে এখানে গড়ে ওঠেছে জনবসতি। ঝোঁপ জঙ্গঁলে আবৃত্ত গ্রামটি কালের আবর্তনে পরিচিত। আজ প্রাকৃতিক শোভা মন্ডিত সবার কাছে পরিচিত রাজার পাহাড়। ১৯৮০ সালে পাগলা দারোগা নামে জনৈক এক ব্যাক্তি রাজার পাহাড়ের চূড়ায় বসবাস করেন। তিনি মারা গেছেন। তার ছেলে মেয়েরা রয়েছে এখানেই্। তারা টিলার এক কোনায় গড়ে তুলেন কাঠাল , লিচু ও কলার বাগান। অপূর্ব সৌন্দর্য মন্ডিত রাজার পাহাড়ের চারিদিকে আছে হরেক রকম প্রজাতির গাছ গাছালি। এর চূড়ায় বিশাল সমতল ভূমি। এখানে যেতে সুরু পথ আর অদ্ভুত নির্জন পরিবেশ। যাওয়ার আগেই আপনাকে মুগ্ধ করবেই।
রাজার পাহাড়ের পাশেই চান্দাপাড়া ও বাবেলাকোনা গ্রাম। এখানে গারো , হাজং, কোচ অধ্যুষিত আদিবাসীদের বসবাস। এদের সংস্কুতির ভিন্নমাত্রায় বৈচিত্রপূর্ন্য জীবনধারা। প্রাকৃতিক বিরুপতা। জংঙ্গল আর জন্তু জানোয়ারের মিতালী। যেন এ জনপদের চলমান জীবন সংগ্রামের বিরল দৃশ্য। আদিবাসীদের সংস্কৃতি, সংরক্ষন ও চর্চার কেন্দ্র হিসেবে রয়েছে বাবেলাকোনা কালচারাল একাডেমি, যাদুঘর, লাইব্রেরী, গবেষনা বিভাগ ও মিলনায়তন এর নিদর্শন। উপজাতীদের কারুকার্য মন্ডিত ধর্মীয় গীর্জা, মন্দির, উপাসনালয় ও অসংখ্য প্রাকৃতিক নির্দশনের সমাহার। এখান থেকে আদিবাসীদের সম্পর্কে জানা যায় অনেক কিছুই। মিশনারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ,সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় হচ্ছে এখানকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আদিবাসী স¤প্রদায়ের চালচলন, কথাবার্তা, ও জীবন প্রনালী দর্শনার্থীদের আরো আকৃষ্ট করে। ওদের সংস্কৃতিতে রয়েছে ভিন্নতা। জীবন যেন প্রবাহিত ভিন্ন এক ধারায়। বর্ষাকালে কর্নঝোড়া ঢেউফা নদীর জোয়ারে কানায় কানায় ভরে ওঠে। কিন্তু দিনের শেষে ভাটা পড়ে শুকিয়ে যায় নদীর পানি। এর বুক জুড়ে রয়েছে বিশাল বালুচর। যার নির্মানকাজে ব্যবহারের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে শহরে। এটি যেন পাহাড়ের কুল ঘেঁষা বিকল্প সমুদ্র সৈকত। এ পাহাড়ের পাশে রয়েছে ওয়ার্ল্ড ভিশন, বিডিআর ক্যাম্প, বিট অফিস, কারিতাস ও রাবার বাগান। রাজার পাহাড়ের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে এসে আদিবাসীদের জীবন যাত্রার নানা দিক জানতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন অনেকেই। ওইসব জানতে পেরে ভ্রমনের চাওয়ার চেয়ে আরো বেশি পেয়ে যান বলে মন্তব্য করেন পর্যটকরা।
রাজার পাহাড়ের পাশেই লাউচাপড়া অবসর কেন্দ্র। রয়েছে বনফুল নামে আরেকটি ব্যাক্তি মালিকানা পর্যটন কেন্দ্র বনফুল। বনফুলে রয়েছে আবাসিক। রাজার পাহাড় আর গারো পাহাড়ের মনোমুগ্ধকর স্থানগুলো অবলোকনের যেন অপূর্ব সুযোগ। যা মনে আলাদাভাবে স্থান করে নিবে ভ্রমন পিপাসুদের। এখানে যেকোনা যান বাহনে আসা যায়। তাহলে আর দেরি নয়। এবারের ফালগুনে ঘুরে আসুন গারো পাহাড়।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *