Connect with us

ঢাকা বিভাগ

স্মরণে বীর মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিকর রহমান চৌধুরী

Published

on

ফরিদপুর প্রতিনিধি ঃ
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কাউন্সিলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলা ফুলসূতি গ্রামের মরহুম খালেক চৌধুরীর সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিকুর রহমান চৌধুরীর ১ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ মঙ্গলবার। মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে ৯ নং সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিলের অধীনে বৃহত্তর ফরিদপুরের বৃহৎ অংশে তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা হেমায়েত উদ্দিন তালুকদার বীর বিক্রম’র নেৃতৃত্বে কোটালিপাড়াস্থ জহরেরকান্দি হাই স্কুলে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ শেষে একটানা দীর্ঘ ২ মাস গেরিলা ট্রেনিং নেন। এরপর কোটালীপাড়ার রাজাপুর মুক্তিবাহিনী ক্যাম্পে অবস্থান করে গেরিলা কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে যুদ্ধে যোগদান করেন। জীবন বাজি রেখে বীরত্বপূর্ণ অবদানের সাথে যুদ্ধ করে একাত্তরের ২৪ নবেম্বর তিনি কোটলীপাড়ায় শত্র“বাহিনীর সাথে সম্মুখযুদ্ধে বুলেটবিদ্ধ হন। বীর মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিকুর রহমান চৌধুরীর রাষ্ট্রীয় সনদ নং- ম/৮৭৫৫১ গেজেট নং- ২৫৯৬। তিনি ঢাকা মহানগর আওয়ামীলীগের ত্রাণ কমিটির সদস্য এবং বর্তমান ৯ ও পুরাতন ৫২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। মরহুমের ১ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে পরিবারের পক্ষ হতে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
সংক্ষিপ্ত পরিচিতিঃ । ১৯৪৭ সালের ২ ডিসেম্বর ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা থানার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিকুর রহমান চৌধুরী। ফুলসুতী গ্রামের চৌধুরী বাড়ীর (বড় বাড়ী) মরহুম আঃ খালেক চৌধুরীর মেঝো ছেলে ছিলেন তিনি। খুব ছোট থেকেই তিনি ছিলেন একজন সাহসী, সদা হাস্যোজ্জ্বল, মিষ্ট ভাষী ও প্রগতিশীল মনের অধিকারী। পরোপকারী ও সাদা মনের মানুষ সিদ্দিকুর রহমান চৌধুরী ছিলেন অফুরাণ প্রাণশক্তির অধিকারী। যুদ্ধ পরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশের সমাজ গঠনেও তিনি ছিলেন সাহসী এক বীর। পেশায় তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী ছিলেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিকুর রহমান চৌধুরীর রাষ্ট্রীয় সনদ নং- ম/৮৭৫৫১ গেজেট নং- ২৫৯৬। তিনি ঢাকা মহানগর আওয়ামীলীগের ত্রাণ কমিটির সদস্য এবং বর্তমান ৯ ও পুরাতন ৫২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন।
রণাঙ্গনে ৯ নং সেক্টরের মেজর এম.এম. জলিল এর অধীনে যে কয়েক’শ মুক্তিযোদ্ধা বৃহত্তর ফরিদপুরের বৃহৎ অংশে জীবন বাজি রেখে বীরত্বপূর্ণ অবদানের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন, তাদের মধ্যে মরহুম মোঃ সিদ্দিকুর রহমান চৌধুরী ছিলেন অন্যতম।
মুক্তিযুদ্ধের সময় সিদ্দিকুর রহমান ছিলেন ২৪ বছরের টগবগে এক যুবক। উত্তাল মার্চে ঢাকা শহরের মতো সারা দেশেই শুরু হয় পাক সেনাদের তাণ্ডব। পাকিস্তানি আর্মি ব্যাপক গণহত্যার পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি ঘরে অগ্নিকান্ড চালিয়ে, যুবকদের ধরে বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে হত্যা করে শুরু করে পৈশাচিক উল্লাস। আতঙ্কিত মানুষ শহর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে কেউ ভারতে পাড়ি জমায়। কেউ গ্রামে আশ্রয় নেয়। নিরস্ত্র এসব জনতার নিরাপত্তাহীনতা দেখে যুবক সিদ্দিকুর রহমানের মনে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। বাড়ীর কাউকে না জানিয়ে কাশিয়ানি থানার সংখ্যার হাট গ্রামের সহপাঠী সহযোদ্ধা শেখ নিজামুদ্দিন কে সঙ্গে নিয়ে তিনি রওনা হন গোপালগহ্জের উদ্দেশে।
একাত্তরের সেই ভরা যুদ্ধের মাঝেই পায়ে হেটে ২৩ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে ২৮ জুন পৌছে যান গোপালগঞ্জ থানার কমান্ডার বীর হেমায়েত উদ্দিন বীর বিক্রম’র অধীনস্থ কোটালিপাডার জহরেরকান্দি হাই স্কুলে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে।
সেখানে একটানা দীর্ঘ ২ মাস গেরিলা ট্রেনিং শেষে কোটালীপাড়ার রাজাপুর মুক্তিবাহিনী ক্যাম্পে অবস্থান করে গেরিলা কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেন। ২৪ নবেম্বর তিনি কোটলীপাড়ায় শত্র“বাহিনীর সাথে সম্মুখযুদ্ধে বুলেটবিদ্ধ হন।
দেশমাতৃকার প্রতি তার অসীম দ্বায়িত্ববোধ ও স্বজাতির প্রতি গভীর মমত্ববোধ থেকে তিনি বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ সৈনিক হেমায়েত উদ্দিন তালুকদার বীর বিক্রমের সাথে সরাসরি অস্ত্র নিয়ে বিভিন্ন স্থানে সম্মুখ সমরে ঝাঁপিয়ে পড়েন। একেক’টি খন্ডযুদ্ধ তখন কেড়ে নিচ্ছিল দু-তিনজন সহ-যোদ্ধাদের তাজা প্রাণ। তবুও তিনি দমে যাননি। তেজোদীপ্ত বারুদের মতো জ্বলে উঠে তিনি সফলতার সাথে ফরিদপুরের কালকিনি, পয়সারহাট, কাশিয়ানি, গোপালগঞ্জ এবং মাদারীপুরের পশ্চিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলকে হানাদারমুক্ত করতে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ৭১ এর ২৪ নভেম্বর বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান কোটালীপাড়ায় মুক্তযোদ্ধাদের সাথে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ হয়। দু’পক্ষের তুমুল যুদ্ধ চলাকালে শত্র“পক্ষের মেশিনগানের বুলেটে বাম পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক জখম হন তিনি। পরে সহ যোদ্ধাদের সহায়তায় আহত সিদ্দিকুর রহমানকে লেবুবাড়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিকিৎসা ক্যাম্পে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। যুদ্ধ পরবর্তী স্বাধীনতার পরে আঘাত প্রাপ্ত জখমে ইনফেকশন হওয়ায় ১৯৭২ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার সফল অপারেশন হয়। এরপর তিনি সুস্থ্যতা লাভ করেন।
সিদ্দিকুর রহমানের স্ত্রী শেফালী রহমান চৌধুরী ও তার মেয়ে লুবনা আক্তার এখন সিদ্দিকুর রহমান চৌধুরীর এই বীরত্বকে গভীর সম্মান ও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম হিসেবে এক সাক্ষাৎকারে মেয়ে লুবনা বলেন, আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। তবে সে যুদ্ধের বীরদের কথা জেনেছি। যতোই শুনেছি ততোই মুগ্ধ হয়েছি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অকে বেশি বিস্তৃত। এর সামান্যই আমরা জেনেছি। স্বাধীনতার জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে ‘অরক্ষিত’ রাখা চলে না। তাই আগামী প্রজন্মকে এই বীরসেনাদের ইতিহাস সঠিকভাবে জানানো প্রয়োজন।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *