বিবিধ
৩০ জুন থেকে তৈরি হবে স্মার্ট আইডি কার্ড
স্মার্ট আইডি কার্ড তৈরি প্রকল্পে সহায়তা দিচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক। এ ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয় আজ সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে।
‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সড অ্যাকসেস টু সার্ভিস’ (আইডিয়া) প্রকল্পের আওতায় প্রস্তুত ও বিতরণ হবে অত্যাধুনিক এসব স্মার্ট আইডি কার্ড। প্রকল্পের মাধ্যমে মোট নয় কোটি স্মার্ট আইডি কার্ড তৈরি করা হবে।
প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে এক হাজার ৩৭৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারকে ১৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার ঋণ সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ হয় প্রায় এক হাজার ৫৬০ কোটি টাকা।
সংস্থার ঢাকা কার্যালয়ের মুখপাত্র মেহরিন এ মাহবুব জানান, এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো সব নাগরিকের জন্য নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবস্থা চালু এবং অধিকতর দক্ষ ও স্বচ্ছ সেবা প্রদানে কাজ করা। এ ছাড়া অধিকতর নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নিশ্চিত করার জন্য আটটি ইন্টারন্যাশনাল সার্টিফিকেশন ও স্ট্যান্ডার্ড নিশ্চিত করা হয়েছে।
এদিকে নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায় স্মার্ট এনআইডি কার্ডে তিনটি স্তরে ২৫টির মতো নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য থাকবে। প্রথম বার বিনা মূল্যে দেয়া হবে এই কার্ড। তবে পরবর্তী সময়ে সংশোধন করতে বা হারিয়ে গেলে নতুন কার্ড পেতে ২০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত ফি দিতে হবে।
১০ বছর পর পর প্রতিটি কার্ড ১০০ টাকা ফি দিয়ে নবায়ন করতে হবে। এ কারণে এটি প্রস্তুতের আগেই যাঁদের পরিচয়পত্রে ভুল তথ্য রয়েছে তাঁদের অনলাইনে তা সংশোধনের জন্য সুযোগ দেওয়া হবে। এ বিষয়ে নিয়মাবলি শিগগির বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে।
কমিশন মনে করে, বর্তমানে যে পরিচয়পত্র ব্যবহার হচ্ছে সেটি জাল করার প্রবণতা দেখা গেছে। কিন্তু স্মার্ট কার্ডের ক্ষেত্রে সেটি সম্ভব হবে না। স্মার্ট কার্ডের মধ্যে যে মাইক্রোচিপস দেওয়া হবে তার মধ্যে একজন নাগরিকের সব তথ্য থাকবে।
সরকারি বিভিন্ন সেবা, চাকরির জন্য আবেদন, ভোটার শনাক্তকরণ, ব্যাংক হিসাব খোলা, পাসপোর্ট তৈরি, ই-গভর্নেন্স ও ই-পাসপোর্ট সেবাসহ মোট ২৫টি সেবা প্রাথমিকভাবে পাওয়া যাবে এই স্মার্ট এনআইডি কাডের্র মাধ্যমে। তবে এ সেবার পরিধি আরো বাড়তে পারে। এ ছাড়া স্মার্ট কার্ড অনলাইনে ও অফ লাইনে দুভাবেই ভেরিফিকেশন করা যাবে। এতে নাগরিকের সব তথ্যসংবলিত মাইক্রোচিপস থাকবে।
তবে সব নাগরিকের হাতে কার্ড না পৌঁছানো পর্যন্ত এর ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হবে না। সব উপযুক্ত নাগরিক কার্ড হাতে পেলে এর ব্যবহার বাধ্যতামূলক হবে।
যেমন হবে এই উন্নত জাতীয় পরিচয়পত্র: কার্ডের সামনের দিকে থাকবে বাংলাদেশ সরকারের লোগো। উপরিভাগে থাকবে জাতীয় ফুল শাপলা, একটি জলছাপ ও ঘোস্ট ইমেজ। পটভূমি হিসেবে থাকবে বাংলাদেশের পতাকা। হলোগ্রাম ও সিএলআইয়ে নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য দৃশ্যমান থাকবে এবং বায়োমেট্রিক্স তথ্যসহ বাকি সব তথ্য মেমরি চিপে সংযোজিত থাকবে।
জাতীয় পরিচয়পত্র নাগরিকদের শনাক্ত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এর যাচাই সেবা কার্যকর করা হলে ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম রোধ করা সম্ভব হবে। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দেওয়া নাগরিক সুবিধা যেমন: বয়স্ক ভাতা, ভর্তুকি, সহায়তা, ঋণ (বিশেষ করে প্রান্তিক কৃষকদের)- এসব সঠিক টার্গেটে পৌঁছানো সহজ হবে। জমিজমা সংক্রান্ত মামলা হ্রাস ও এ ক্ষেত্রে জালিয়াতি প্রতিরোধ সহজ হবে।
এছাড়া এর ব্যবহার সুশাসন ও ই-গভর্নেন্সকে ত্বরান্বিত করবে। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মসূচিগুলোর মধ্যে প্রয়োজনীয় সমন্বয় সহজতর হবে। বিভিন্ন ধরনের ই-সেবা বাস্তবায়নের দ্বার উন্মুক্ত হবে এবং সেবা কার্যক্রম ট্র্যাকিং করাকে সহজসাধ্য করে তুলবে। দুর্নীতি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। বাল্যবিবাহ রোধে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সহায়ক হবে। পাবলিক ও প্রাইভেট সেবার ক্ষেত্রে জবাবদিহি নিশ্চিত করবে। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব রাখবে।
চাহিদা : ইতিমধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিলে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, পাসপোর্ট অধিদপ্তর এই পরিচয়পত্র যাচাই সেবা গ্রহণ করেছে। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বীমা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারের এ-টুওয়ান প্রকল্প, সমাজসেবা অধিদপ্তর, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বিদেশি মিশন- তাদের সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে নাগরিকদের শনাক্ত করার জন্য এই পরিচয়পত্রের পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু করেছে। বিভিন্ন টেলকো অপারেটরসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এই পরিচয়পত্রের চাহিদা বাড়ছে।
প্রসঙ্গত, ফ্রান্সের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) চুক্তি সম্পন্ন হয়। এরপর গত ফেব্রুয়ারিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে একটি পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিহ হয়। এর আগে ২০১১ সালের ২১ জুলাই বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে কমিশন ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করে।