Connect with us

স্বাস্থ্য

হৃদরোগ বর্হিভূত বক্ষ ব্যথা

Published

on

1417194975380স্বাস্থ্য ডেস্ক:  বুকের ব্যাথার কথা উঠলেই অনেকে ভয় পেয়ে যান। তারা মনে করেন হৃদরোগ হয়েছে। এই ভয় অমূলক সে কথা আমরা বলব না । বরং আমরা বলতে চাই, হৃদরোগ হলে বুকে ব্যথা হতে পারে । তবে হৃৎরোগ ছাড়াও বুকে ব্যথা এবং প্রচন্ড ব্যথা হতে পারে। বক্ষ ব্যথা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনি প্রথমেই নিশ্চিত হয়ে নেন হৃদরোগের কারণে এমন ব্যথা হচ্ছে কিনা। হৃদরোগের সম্ভাবনা বাতিল করে দেয়ার পর চিকিৎসক বক্ষ ব্যথার কারণ খুঁজে বের করার এবং চিকিৎসার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

আমরা এই জাতীয় বক্ষ ব্যথা নিয়ে আলোচনা করেছি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত ইউনাইটেড হাসপাতালের গ্যাস্ট্রো এন্ট্রোলজি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মাহবুব আলমের সাথে। তিনি আমাদের জানালেন, নন কার্ডিয়াক বক্ষ ব্যথা সব বয়সের মানুষের হতে পারে । নারী বা পুরুষের বেলায় এ ধরণের ব্যাথা হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো পার্থক্য দেখা যায় না। এ ছাড়া যে কোনো সময় এই ব্যথা হতে পারে । দেখা গেছে কার্ডিয়াক চেস্ট পেইন নিয়ে যত রোগী আসে তার চেয়ে চারগুণ বেশি রোগী আসে নন কার্ডিয়াক চেস্ট পেইন নিয়ে । এ ধরণের ব্যাথার উপসর্গের কথা বলতে যেয়ে ডাক্তার মাহবুব আলম আমাদের জানালেন, মাঝে মাঝে ব্যথা হচ্ছে, বুকে ঠিক কোথায় ব্যাথা হচ্ছে তা সঠিক ভাবে রোগী বলতে পারছেন । এ ছাড়া এ ব্যথা ছড়িয়ে পড়ছে না। রোগী সাধারণ কাজ কর্ম করতে পারছেন। অর্থাৎ বুকে ব্যাথা থাকা সত্বেও রোগীদের সাধারণ কাজ কর্ম করতে কোনোই অসুবিধা হয় না। এ ধরণের রোগীরা ব্যাথা নিয়ে সাধারণ ভাবে প্রথমেই হার্ট স্পেশালিস্ট বা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যান বা তাদেরকে এ ধরণের চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। সাধারণ ভাবে এমনটি করা হয় এ কারণে যে বুকে যে ব্যথা হচ্ছে তা হৃদপিন্ড ঘটিত নাকি হৃৎরোগ বর্হিভূত তা রোগীর পক্ষে কখনোই বোঝা সম্ভব নয়। তাই নিরাপত্তার কথা ভেবে রোগীকে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের কাছে বা হাসপাতালে পাঠানো হয়। নানা কারণে বুকে এই ধরণের ব্যথা হতে পারে। বুকের মাংস পেশীর কোনো সংকটের কারণে এই ব্যথা হতে পারে । এই ব্যাথা হাড়ের কারণে হতে পারে। বুকে কোনো আঘাত পাওয়ার কারণে তা হওয়ার সর্ম্পক রয়েছে। এ ছাড়া পুরান ব্যথায় নতুন করে আঘাত পাওয়া কারণে বক্ষ ব্যথা দেখা দিতে পারে। কোনো কোনো ধরণের অষুধ খাওয়ার জন্য এমনকি ফুসফুসের সমস্যার জন্য বুকের ব্যাথা হতে পারে । তবে দেখা গেছে সাধারণ ভাবে খাদ্য নালীর নানা সমস্যার কারণেও বক্ষ ব্যথা দেখা দিতে পারে।আমাদের পাকস্থলীতে খাদ্য হজম করার জন্য এসিড থাকে – এ কথা আমরা সবাই জানি। কখনো কখনো এই এসিড খাদ্যনালীতে চলে আসে। ফলে বুক বা গলা জ্বালা করতে পারে। বুকের হাড়ের নিচে এ ব্যথা অনূভুত হতে পারে।

বুক জ্বালা থেকে যে ধরণের বক্ষ ব্যথা দেখা দেয় তা সাধারণ ভাবে খাওয়ার পর দেখা দিতে পারে। এ ধরণের ব্যথা বেশ কয়েক ঘন্টা স্থায়ী হতে পারে। ভয় বা আতংক থেকেও অনেকের বুক ব্যাথা করতে পারে । এ ধরণের বুকের ব্যাথার সাথে ঘন ঘন নিঃশ্বাস নেয়ার উপসর্গ দেখা দিতে পারে। প্রচন্ড ঘাম হতে পারে। বুক ধড়পড় করতে পারে অর্থাৎ হৃদপিন্ডের কাজ বেড়ে যেতে পারে।

খাদ্য নালীতে বেশ কয়েক ধরণের সমস্যার কারণে কখনো কখনো খাদ্য গিলতে অসুবিধা হয় এবং একই সাথে প্রচন্ড ব্যাথা দেখা দেয়। আমরা খাদ্য গেলা পর খাদ্য নালীর মাংসপেশী খাদ্যকে নিচের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু কোনো কোনো মানুষের ক্ষেত্রে খাদ্য নালী এই সমন্বয় হারিয়ে ফেলে । আর এর ফলে বুকে প্রচন্ড ব্যথা হতে পারে । এই ব্যথা নাইট্রোগ্লিসারিন নামের একটি অষুধ মুখে দিলে ভালো হয়ে যায়। হৃৎরোগ সংক্রান্ত ব্যথা কমাতেও একই অষুধ ব্যবহার করা হয় বলে এ ধরণের ব্যথা কখনো কখনো মারাত্মক ভ্রান্তির সৃষ্টি করে । নন কার্ডিয়াক চেষ্ট পেইন বা হৃদরোগ বর্হিভূত বক্ষ ব্যথা শিশুদেরও হতে পারে। দুগ্ধপোষ্য শিশুদেরও এমন ব্যথা হতে পারে, আর তা হতে পারে নানা কারণে। তবে সাধারণ ভাবে হৃদযন্ত্রের আশে পাশে যে সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ রয়েছে সেগুলোর কোনটায় কোনো ধরণের সমস্যা দেখা দিলে তার ফলে এ জাতীয় বক্ষ ব্যথা দেখা দিতে পারে। জন্মগত ভাবে অনেক শিশুর খাদ্যনালী প্রয়োজনের তুলনায় ছোট থাকে এবং এ সব শিশুর বুকে ব্যথা হতে পারে ।

রুজ্জুকে সর্প ভ্রমের বা রশিকে সাপ হিসেবে ভুল করার একটা কথা বাংলা প্রবাদে বলা হয়। এ ধরণের ভুল হলে তা কোনো ক্ষতির কোনো কারণ হবে না। কিন্তু উল্টোটা যদি হয় অর্থাৎ সাপকে যদি দড়ি বা রশি হিসেবে ভুল করা হয় তা হলে তা বিপদের কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে। একই ভাবে যে কোনো বক্ষ ব্যথাকে হৃদরোগ থেকে সৃষ্ট ব্যথা বলে ধরে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে কিংবা হাসপাতালে ছুটে গেলে দোষের কিছু নেই। কিন্তু হৃদরোগ থেকে ব্যাথা হচ্ছে অথচ ডাক্তারের কাছে কিংবা হাসপাতালে কেউ গেলেন না তাতে মহা বিপদ হতে পারে। আর ব্যথাটি হৃদরোগ ঘটিত বা হৃদরোগ ঘটিত নয় তা বোঝার অন্যতম উপায় হলো, হৃদরোগ বর্হিভূত ব্যথা বুকের এক জায়গায় থাকে। আঙ্গুল দিয়ে রোগী বলতে পারে ঠিক কোন স্থানে ব্যথা হচ্ছে। এই ধরণের ব্যথা সমস্ত বুক ঘাড় বা বাম হাত বা দেহের বাম পাশে ছড়িয়ে পড়ে না। নন কার্ডিয়াক চেষ্ট পেইন বা হৃদরোগ বর্হিভূত বক্ষ ব্যথা সাধারণ ভাবে কোনো ধরণের বিপদের কারণ হয়ে দেখা দেয় না। এ ছাড়া এ ধরণের ব্যথা হলে প্রথমে কারণ কি তা বের করতে হবে এবং সে কারণ অনুযায়ী চিকিৎসা করা হলে রোগী আরোগ্য লাভ করে থাকেন।

বাংলাদেশেরপত্র/এডি/আর

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *