Connect with us

জাতীয়

হেযবুত তওহীদের নারীরা

Published

on

ফাহমিদা পান্না:

রসুলাল্লাহর সময় নারীরা কেমন ছিলেন?

রসুলাল্লাহর সময় নারীরা মহানবীর সামনা সামনি বসে আলোচনা শুনতেন, শিক্ষাগ্রহণ করতেন, মহানবীকে প্রশ্ন করে জরুরি বিষয় জেনে নিতেন, অনেক জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরামর্শও দিতেন। এ সময় রসুলাল্লাহ ও মেয়েদের মাঝে কোনো কাপড় টাঙ্গানো ছিল এই ব্যাপারে কেউ কোনো দলিল দেখাতে পারবে না। নারীরা মসজিদের পাঁচ ওয়াক্ত জামাতে, জুমা’র সালাতে, দুই ঈদের জামাতে অংশগ্রহণ করতেন। তারা পুরুষের সঙ্গেই হজ্ব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতেন, যেটা এখনও চালু আছে; তারা কৃষিকাজে, শিল্পকার্যে, ব্যবসা-বাণিজ্যে অংশগ্রহণ করেছেন। এ সমস্ত কাজ তারা ইসলামের নির্দেশিত হেজাবের সাথেই করতেন। এমনকি রসুলাল্লাহর নারী সাহাবীরা পুরুষ সাহাবীদের সঙ্গে থেকে যুদ্ধ পর্যন্ত করেছেন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাষ্ট্রীয় কার্যাবলীতে সমানতালে অংশগ্রহণ করেছেন। মসজিদে নববীর এক পাশে তৈরি করা হয়েছিল যুদ্ধাহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা। এই বিশেষ চিকিৎসা ইউনিটে অধ্যক্ষ ছিলেন একজন নারী। অথচ আজ বিকৃত অতি পরহেজগার নারীদের এই ব্যাপারে কোন ধারণাই নেই। বর্তমান ইসলামে যে নারী যত আপাদমস্তক কালো কাপড়ে ঢেকে গৃহ-অভ্যন্তরে অবস্থান করবেন তিনি তত বড় পরহেজগার হিসেবে গণ্য হন।

হেযবুত তওহীদের নারীদের কর্মকাণ্ড:

হেযবুত তওহীদের মেয়েরা আন্দোলনের সমস্ত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। এমামুয্যামান সব সময় চেষ্টা করেছেন পুরুষদের পাশাপাশি যেন মেয়েরাও অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে। নারীরা মহানবীর সঙ্গে থেকে বিস্ময়কর বিপ্লব সম্পাদনে যে ভূমিকা রেখেছেন তা এমামুয্যামান হেযবুত তওহীদের মোজাহেদাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। হেযবুত তওহীদের মেয়েরা শহরে এবং প্রত্যন্ত এলাকায় বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে মানুষকে তওহীদের বালাগ দিয়েছেন। মেলায়, মার্কেটে গিয়ে বই বিক্রী করেছেন, হ্যান্ডবিল বিতরণ করেছেন। তওহীদের বালাগ দিতে গিয়ে পুরুষদের সাথে অনেক মেয়েও হাসিমুখে জেল, জুলুম, ধর্মব্যবসায়ী আলেম ওলামাদের অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করেছেন, ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ হয়েছেন, নিজের ঘরবাড়ি ও পরিবার থেকে বহি®কৃত হয়েছেন। অনেকে স্বামী, সন্তান, সংসার পর্যন্ত ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন যেটা মহানবীর অনেক নারী সাহাবীর ক্ষেত্রেও হয়েছিল। মানবজাতির কল্যাণের জন্য, মানবজীবনে সত্য প্রতিষ্ঠা করে সুবিচার ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেদের আরাম-আয়েশ ও বিলাসিতার জীবন ত্যাগ করে অনেক মেয়ে কঠিন সংগ্রামের কণ্টকাকীর্ণ পথ বরণ করে নিয়েছেন।

উপার্জনে মেয়েরা:

পুরুষরা ব্যস্ত ১৬ কোটি বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ করতে। দিন নেই, রাত নেই কেবলই সংগ্রাম, সত্য প্রতিষ্ঠা ও মিথ্যার বেসাতি ধ্বংসের সংগ্রাম। কিন্তু পরিবার চলবে কী করে? উপার্জন করবে কে? বেঁচে থাকতে হবে তো। কিছু উপায়-উপার্জন তো করতেই হবে। হ্যাঁ, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, এই উপার্জনের দায়িত্ব তখন কাঁধে তুলে নিয়েছেন হেযবুত তওহীদের নারীরা। পিঠা বিক্রি করে, দোকানে দোকানে, রাস্তা-ঘাটে, বাড়িতে বাড়িতে বই-পুস্তক বিক্রি করে, খেলনা বিক্রি করে, পত্রিকা-ম্যাগাজিন বিক্রি করে হলেও আল্লাহর রাস্তায় নিবেদিত স্বামী-সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিয়েছেন তারা। আল্লাহর রহমে অনেক সদস্যা পরিবারের খরচ যোগানোর পর তার নিজের উপার্জন থেকে আন্দোলনের ফান্ডেও অর্থপ্রদান করে সত্য প্রতিষ্ঠায় অবদান রেখেছেন। ধর্মীয় কুসংস্কারসহ অন্যান্য পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কারণে আমাদের সমাজে এখনও নারীদের আয়-উপার্জনকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয়। বিশেষ করে ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণিটি বাড়ির বাইরে গিয়ে নারীদের উপার্জনের বিরোধিতায় লিপ্ত। ধর্মের লেবাসধারী এই অধার্মিকরা জাতির অর্ধেক নারীকে কার্যত অক্ষম করে রাখতে চায়। তাই হেযবুত তওহীদের নারীদের জন্য কাজটি মোটেও সহজ ছিল না। অনেক স্থানেই ধর্মব্যবসায়ী ও তাদের দ্বারা প্রভাবিত কার্যত ধর্মান্ধরা হেযবুত তওহীদের নারীদেরকে নিয়ে কটূক্তি করেছে, এমনকি গালাগাল পর্যন্ত করেছে। কিন্তু হেযবুত তওহীদের মোজাহেদারা সত্যের ধারক, সত্যের বাহক, তাই সত্য কাজ নিয়ে কোনো হীনম্মন্যতা তাদের নেই। কে কী বলল, কে কী মনে করল তা না দেখে তারা আল্লাহর সন্তুষ্টিকেই পরম পাওয়া ভেবে নিশ্চিন্তে পুরুষদের পাশাপাশি উপার্জনে শরীক হয়েছেন।

জাতীয় অস্থিতিশীলতা নিরসনে দেশজুড়ে হেযবুত তওহীদের নারীরা:

বাংলাদেশের জনগণকে প্রায়শই রাজনৈতিক অচলাবস্থার মাঝে পড়তে হয়। ধ্বংস হয় কোটি কোটি টাকার সম্পদ, রুদ্ধ হয় ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বাভাবিক গতি। জ্বালাও-পোড়াও, অগ্নিসংযোগ, হরতাল, অবরোধের সর্বনাশা আগুনে জ্বলে ছাই হয় শত শত নিরাপরাধ প্রাণ। এই সবকিছুর প্রধান কারণ হলো জাতীয় অনৈক্য। তাই এ অবস্থা থেকে জাতিকে রক্ষা করতে চাইলে সর্বপ্রথম করণীয় হচ্ছে জাতিকে ন্যায়ের পক্ষে, সত্যের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ করা। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার এই সময়পোযোগী কাজেই নেমেছে হেযবুত তওহীদ, আর তাতে অন্যতম ভূমিকা পালন করছে আন্দোলনের নারী সদস্যরা। মুমূর্ষু এই জাতির জীবন ফিরে পাবার একমাত্র মহৌষধ নিয়ে পুরুষদের পাশাপাশি দেশজুড়ে ছুটে চলেছে হেযবুত তওহীদের নারীরা। তারা ছুটছে পথে-প্রান্তরে, নগরে-বন্দরে, মন্ত্রী-এমপি-পুলিশ প্রধানের কার্যালয় থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলার সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, অফিস-আদালত, সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, সংগঠন, শিক্ষক, সাহিত্যিক, ব্যবসায়ী, ছাত্র, সাংবাদিক, আইনজীবী, কৃষক, শ্রমিক পর্যন্ত সর্বস্তরের মানুষের কাছে। এমনকি গ্রাম পর্যায়ের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষগুলোর বাড়ি বাড়ি গিয়ে তারা সঙ্কট নিরসনে সকলকে সত্যের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান পৌঁছে দিচ্ছেন।
এর আগে ২০১৩ সালে দেশব্যাপী রাজনৈতিক সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করলে, ক্রমাগত হরতাল-অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও, অগ্নিসংযোগ, সংঘাত-সংঘর্ষ অসহনীয় মাত্রায় পৌঁছে গেলে সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা যখন নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় যেতে ভয় পাচ্ছিলেন, সরকারী দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা সহিংসতা দমনে ভূমিকা না রেখে উল্টো সাধারণ মানুষকে অসহায় অবস্থায় ফেলে রেখে গ্রাম ছাড়ছিলেন তখন দেশবাসীর বিপর্যয় ঘোঁচাতে হাত বাড়িয়েছিল হেযবুত তওহীদ। তখন হেযবুত তওহীদের মেয়েরা শান্তি প্রতিষ্ঠায় যে সাহসিকতার নজির স্থাপন করেছেন তা ইতিহাসে বিরল। তারা রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা শহর, হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাট, স্কুল-কলেজ ইত্যাদিতে গিয়ে হাজার হাজার বার জনসচেতনতামূলক ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করেছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন ও সংস্থা, প্রশাসনসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষের সাথে আলোচনা অনুষ্ঠান করে সকলের শর্তহীন সমর্থন পেয়েছেন। হেযবুত তওহীদের মেয়েদের দ্বারা এমন হাজার হাজার ডকুমেন্টারি প্রদর্শন ও আলোচনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে যেগুলোতে উপস্থিত লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের দু’হাত তুলে ঐক্যবদ্ধ হবার ঘোষণা দিয়েছেন। পরবর্তীতে সহিংসতা-সন্ত্রাস কমে আসার অন্যতম কারণ ছিল হেযবুত তওহীদের এই দেশব্যাপী প্রচার-প্রচারণা, যে কথা পরবর্তীতে অনেক রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরাই বলেছেন। সারা দেশ যখন আতঙ্কিত, অতি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাইরে বের হয় না, সরকারি দলের নেতাকর্মীরা এলাকায় যেতে ভয় পাচ্ছিল, প্রশাসনের গলদঘর্ম অবস্থা ঠিক সেই সময়ে হেযবুত তওহীদের মেয়েরা ষোল কোটি বাঙালির সামনে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। জীবনের পরোয়া না করে শুধুমাত্র মানুষের কল্যাণে, মানবতার কল্যাণে এমন উদ্যোগ কেবল হেযবুত তওহীদের মেয়েদের পক্ষেই নেওয়া সম্ভব। কারণ তারা যামানার এমামের অনুসারী, তারা ইসলামের সেই আকীদা পেয়েছেন যে আকীদা পেয়ে রসুলের নারী আসহাবরা তাঁবুর খুঁটি দিয়ে পিটিয়ে ফেতনাবাজ শত্র“সেনাকে পরাস্ত করেছিল।
এ ছাড়া দেশজুড়ে হেযবুত তওহীদ ও হেযবুত তওহীদের মিডিয়া পার্টনারের আয়োজনে যত সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে, তার অধিকাংশেরই উপস্থাপনা, অতিথি আপ্যায়ন ইত্যাদির দায়িত্ব পালন করেছেন মেয়েরা। অনেক সেমিনারে প্রধান বক্তা হিসেবেও বক্তব্য রেখেছেন আন্দোলনের নারী সদস্য। জাতির ক্রান্তিলগ্নে ভয়াবহ সঙ্কটের মুখে মানবতার কল্যাণে হেযবুত তওহীদের নারীদের এই আত্মনিবেদন মহান আল্লাহ অবশ্যই সফল করবেন।

আল্লাহর নির্দেশিত হিজাবের যথাযথ বাস্তবায়ন:

বর্তমানে বিকৃত পর্দাপ্রথার অজুহাতে আলেম-মোল্লারা মেয়েদেরকে গৃহকোণে বন্দি করে রাখতে চায়। তারা যে পদ্ধতিতে বোরকা দিয়ে মেয়েদেরকে মুড়ে রাখতে চায় তা আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী বৈধ নয়। সূরা নূরের ৩১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, মো’মেন নারীগণ যেন তাদের শরীরের সাধারণ প্রকাশমান অংশ ব্যতীত তাদের আভরণ বাইরে প্রকাশ না করে এবং তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ কাপড় দ্বারা আবৃত করে। সাধারণত প্রকাশমান বলতে এখানে হাত, মুখমণ্ডল, পায়ের গোড়ালী ইত্যাদি বোঝানো হয়েছে। তাই এমামুয্যামান হেযবুত তওহীদের নারীদেরকে এভাবেই হেজাব করতে নির্দেশ দিয়েছেন। সে মোতাবেক হেযবুত তওহীদের সকল মেয়েরাই আন্দোলনের কাজে বা ব্যক্তিগত কাজে বাইরে গেলে আল্লাহর নির্দেশিত পদ্ধতিতে হেজাব করার চেষ্টা করে। মুখমণ্ডল ঢেকে রাখলে মানুষকে চেনার উপায় থাকে না, তাই আল্লাহর নির্দেশমত না করে বাড়িয়ে বা কমিয়ে হেজাব করা আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করা।

আন্দোলনের আলোচনা-অনুষ্ঠানে নারীরা:

হেযবুত তওহীদের নারীরা শরিয়তের বিধান মেনে পুরুষদের সাথে বসেই মাননীয় এমামুয্যামানের আলোচনা শুনছেন

হেযবুত তওহীদের নারীরা শরিয়তের বিধান মেনে পুরুষদের সাথে বসেই মাননীয় এমামুয্যামানের আলোচনা শুনছেন

হেযবুত তওহীদের মেয়েরাও পুরুষদের সঙ্গে একত্রে এমামুয্যামানের আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন, সালাহ কায়েম করেছেন। কখনও কখনও শুধু মেয়েদেরকে নিয়েও এমামুয্যামান আলোচনা করেছেন, সেখানে মেয়েরা তাদের পারিবারিক নানা সমস্যার বিষয়ের সমাধান এমামের কাছ থেকে শুনেছেন, নিজেদের দীন সংক্রান্ত অনেক প্রশ্নের উত্তর জেনে নিয়েছেন। এ কথা ভুললে চলবে না যে, জাতির প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। একজন মানুষের একটি পা কেটে ফেলে দিলে সে যেমন চলতে পারে না, তেমনি এ জাতিটিও মেয়েদেরকে স্বেচ্ছায় গৃহনির্বাসন দিয়ে নিজেদের একটি পা-ই কেটে ফেলেছে। কবি নজরুল এজন্যই বলেছেন,
“সে গৌরবের গোর হয়ে গেছে আঁধারের বোরকায়
আঁধার হেরেমে বন্দিনী হলো সহসা আলোর মেয়ে,
সেইদিন হতে ইসলাম গেল গ্লানির কালিতে ছেয়ে
লক্ষ খালেদা আসিবে যদি এ নারীরা মুক্তি পায়।”
এছাড়া হেযবুত তওহীদের বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানে সমস্ত রান্না মেয়েরাই করে থাকে। কেউ অসুস্থ হলে তার চিকিৎসা, সেবাপ্রদান ইত্যাদি কাজেও মেয়েরা বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

লেখক: হেযবুত তওহীদের সদস্য।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *