Connect with us

দেশজুড়ে

১৬ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে সুন্দরবন, বছরে জেলেদের থেকে ৫০ কোটি টাকা আদায়

Avatar photo

Published

on

সুন্দরবন sundarbanএস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট: সুন্দরবনে বাগেরহাটের চাঁদপাই ও শরণখোলা, পশ্চিশ সুন্দরবনের খুলনা ও সাতীরা রেঞ্জে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ১৬টি বনদস্যু বাহিনী। এসব দস্যু বাহিনীর টোকেন ছাড়া জেলেদের মৎস্য আহরন সম্ভব হচ্ছে না। প্রতি বছর বনদস্যুরা প্রায় ২ লাখ জেলে ও বাওয়ালীদের কাছ থেকে মুক্তিপণের দাবিতে আদায় করছে ৫০ কোটি টাকা। আর টোকেন বিহিন জেলেদের চাঁদার দাবিতে অপহরন ও মুক্তিপন আদায় করা হচ্ছে। বর্তমানে দস্যু বাহিনীর এমন বেপরোয়া কর্মকান্ডে আতংকিত হয়ে পড়েছে উপকূলীয় অঞ্চলের জেলে ও তাদের পরিবারগুলো। সাপ্তাহিক, পাকি, মাসিক ও গোন এবং সিজিন হিসাবে ৫ থেকে ২০ হাজার টাকার বিনিময় দস্যুদের সরবরাহকৃত এ টোকেন নিতে হচ্ছে জেলেদের। তাছাড়া জাল, নৌকা, ডিজেল, চাল, ডাল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় মালামালও নিয়ে যাচ্ছে। এই বনদস্যু দলগুলোর হাতে মুক্তিপনের দাবীতে প্রায় প্রতিদিনই অপহৃত হচ্ছে হাজার- হাজার জেলে-বাওয়ালী।
গত ৩ বছরে র‌্যাব ও কোস্টগার্ডের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এসব বাহিনীর অন্তত ৯ জন বনদস্যু বাহিনী প্রধানসহ ৭৯ জন বনদস্যু আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে মারা গেলেও থামেনি দস্যুতা। পরে ওই সব বাহিনীর সেকেন্ডইন কমান্ডাররা পূনরায় বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তাদের নামে বাহিনী গড়ে পুরোদমে জেলে অপহরনসহ নানা অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়ে যেতে থাকে। এ কারনে কমছেনা সুন্দরবনের দস্যু বৃত্তি। ৩ বছরে বিভিন্ন দস্যু বাজিনীর হাতে নিহত হয়েছে প্রায় ২শ জেলে। আর এসব বাহিনীর হাতে প্রতিবছর গড়ে অপহৃত হয় ১ হাজার জেলে-বানজীবী। অপহৃতদের বেশির ভাগই মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মুক্তি পান।
সুন্দরবনের দুবলার ফিসার ম্যান গ্রুপের হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর বনদস্যুরা প্রায় ২ লাখ জেলে ও বাওয়ালীদের কাছ থেকে মুক্তিপণের দাবিতে আদায় করছে ৫০ কোটি টাকা। আর মুক্তিপণ না পেলে বনদস্যুদের হাতে প্রাণ হারাতে হচ্ছে অসংখ্য জেলে-বনজীবীদের।
আইন শৃংখলা রাকারী বাহিনী, সুন্দরবন বিভাগ ও জেলে-বাওয়ালীদের কাছ থেকে জানা গেছে, পূর্ব ও পশ্চিম সুন্দরবনের ৪টি রেঞ্জে বর্তমানে ১৬ টি বনদস্যু বাহিনী সক্রিয় রয়েছে। বাহিনীগুলো হলো, আমজাদ বাহিনী, ফরহাদ বাহিনী, শহিদুল বাহিনী, জাহাঙ্গীর বাহিনী, জাকির বাহিনী, রুবেল বাহিনী, বাকিবিলাহ বাহিনী, মুর্তজা বাহিনী, আনোয়ার বাহিনী, মাহবুব বাহিনী, তছলিম বাহিনী, নাসির বাহিনী, জিহাদ বাহিনী, জুলফিকার আলী গামা বাহিনী, দুই ভাই বাহিনী ও রেজাউল ওরফে শীর্ষ বাহিনী।সুন্দরবনে বনদস্যুদের মধ্যে বর্তমানে ৬টি বাহিনী বেশি শন্তিশালী অবস্থানে রযেছে।
এ বাহিনীগুলোর মধ্যে বাগেরহাটের চাঁদপাই রেঞ্জ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে মুর্তজা বাহিনী ও শরণখোলা রেঞ্জ অঞ্চল নিয়ন্ত্রন করে রেজাউল ওরফে শীর্ষ বাহিনী।সাতীরা রেঞ্জের উত্তর দিক নিয়ন্ত্রণ করে আমজাদ বাহিনী ও দণি দিক নিয়ন্ত্রণ করছে জাকির বাহিনী। খুলনা রেঞ্জের উত্তর এবং দণি পাশ নিয়ন্ত্রণ করে মাহবুব বাহিনী ও জাহাঙ্গীর বাহিনী।তবে আইনশৃংখলা রা বাহিনীর তথ্যানুযায়ী, সুন্দরবনে অর্ধশতাধিক সদস্য, দেশি-বিদেশী অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী শীর্ষ বাহিনী ও জাহাঙ্গীর বাহিনী। এ বাহিনীর সবচেয়ে বেশি তৎপরতা দেখা যায় বাগেরহাট ও খুলনা অঞ্চলে। এদের চাঁদা না দিলে সুন্দরবনে জেলেদের মাছ ও গোলপাতা সংগ্রহ করতে দেওয়া হয় না।
সুন্দরবনের বাঘ উপকূলবাসীর কাছে বনাঞ্চলের রাকবজ হিসেবে পরিচিত থাকলেও বর্তমানে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের কাছে বাঘ আতঙ্ক এখন গৌন হয়ে পড়েছে। বর্তমানে মূর্তিমান আতঙ্ক হিসাবে দেখা দিয়েছে বনদস্যু বাহিনী গুলো। সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগর এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে ওঠা দস্যুদের হামলা, লুটপাট, অপহরণে এখন অতিষ্ঠ পুরো দণি-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকা।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম জানান, সুন্দরবনরে বনরেিদর চেয়ে বনদস্যুদের রয়েছে অত্যাধুনিক দেশি-বিদেশী অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ।
সুন্দরবনের দুবলা ফিসার ম্যান গ্রুপের চেয়ারম্যান ও মুক্তিযুদ্ধ কালিন সুন্দরবন অঞ্চলের সাব সেক্টর কমান্ডার মেজর (অবঃ) জিয়াউদ্দিন জানান, তার কাছে তথ্য রয়েছে কয়েকটি বনদস্যু বাহিনী মৌলবাদি ও চরমপন্থীদের সাথে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। রাজনৈতিক পৃষ্টপোষকতায় থাকা এসব বনদস্যু বাহিনী গুলোর গটফাদারদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় না আনা গেলে সুন্দরবনের দস্যুবৃত্তি কখনই বন্ধ হবে না। উপকূল মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি মো. ইদ্রিস আলী জানান, প্রতিনিয়ত বিভিন্ন এলাকা কেন্দ্রিক দস্যুদের চাঁদা দিয়েই মাছ ধরতে যেতে হচ্ছে জেলেদের। আর চাঁদা দিতে অপারগ হলে মুক্তিপনের জন্য তাদের অপহরণ করা হচ্ছে।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

গাজীপুর

গাজীপুরে বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে পুনরায় রেস্টুরেন্ট চালু, আতঙ্কে স্থানীয়রা

Avatar photo

Published

on

গাজীপুর প্রতিনিধি:
গাজীপুরে বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত ভবনে অননুমোদিতভাবে পুনরায় রেস্টুরেন্ট চালু হওয়ার বিগত ৫ বছরেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। বেইলি রোড ট্র্যাজেডির পর রেস্টুরেন্টটিতে পুনরায় দুর্ঘটনার আশঙ্কায় রীতিমতো আতঙ্গে ভুগছেন প্রতিবেশীরা। রেস্টুরেন্ট মালিক বিস্ফোরণের ঘটনাকে ‘অগ্নিকাণ্ড’ উল্লেখ করে বীমা কোম্পানি থেকে কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ পেলেও আশপাশের ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আজও দাঁড়ায়নি কেউ। উন্মুক্ত আলো-বাতাস বিহীন ওই রেস্তোরাঁর বদ্ধ রান্নাঘরে এক ভয়াবহ বিস্ফোরণে ভবনের ভেসমেন্ট লন্ডভন্ড হয়ে যায় এবং কয়েকটি ভবনের মূল কলাম ভেঙ্গে পড়ে।

উল্লেখ্য বিগত ২০১৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর রাতে গাজীপুর মহানগরীর বোর্ড বাজারে অবস্থিত বাংলার রাঁধুনি রেস্তোরাঁয় সংঘটিত ওই বিস্ফোরণে ১ জন নিহত ও ১৭ জন আহত হয়। ব্যস্ততম বোর্ড বাজার বাসস্ট্যান্ডে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ঘেঁষেই মনসুর আলী সুপার মার্কেটের নীচ তলায় রেস্তোরাটি অবস্থিত। বিস্ফোরণে রেস্তোরাঁর ভেতরে থাকা লোকজন ছাড়াও পথচারিরাও আহত হয়। মহাসড়কের বিপরীত পাশে বোর্ডবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে গিয়েও বিস্ফোরিত বস্তু আঘাত আনে। মসজিদের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ আজও ওই ভয়াবহ বিস্ফোরণের সাক্ষী হয়ে আছে।

স্থানীয়দের প্রশ্ন, আর কত ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও প্রাণ ঝরলে কর্তৃপক্ষ সজাগ হবে। ওই ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। এ ঘটনায় গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট জমা দেয়া পর্যন্তই সবার দায়িত্ব শেষ। পরবর্তীতে রেস্তোরাঁ বা ভবনটির কার্যক্রম সম্পর্কে আর কেউ খবর রাখেনি। এ সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির প্রস্তাবনা-নির্দেশনাও আর বাস্তবায়ন হয়নি। বরং যথাযথ নিয়ম কানুন প্রতিপালন ছাড়াই চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটিতে আগের জায়গায় রেস্তোরাঁ চালুসহ সব ধরনের কার্যক্রম চলছে আরো জোরেশোরে। এতো বড় একটা দুর্ঘটনার পরও যেনতেনভাবে সেই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পুনরায় রেস্টুরেন্ট চালু হওয়ায় বিস্ময়ে অবাক স্থানীয়রা। ভবনটি সংস্কার বা পুনঃনির্মাণে রাজউকের অনুমোদন ও ফায়ার সার্ভিসের অনাপত্তি সনদও নেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি রেস্তোরাঁ ও ভবন মালিকপক্ষ।ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটিতে কীভাবে আগের মতই সব কার্যক্রম চলছে তা যাচাই করে দেখারও সময় হয়নি সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের।

পাশের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও ভবন মালিকরা জানান, বিস্ফোরণে ক্ষয়ক্ষতি হলেও রেস্টুরেন্ট মালিক ‘অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বাবদ’ বীমা কোম্পানি থেকে এক কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ লাভ করেন। অথচ ওই রেস্তোরাঁ মালিকের কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের কাউকেই একটি টাকাও ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি। বিগত ২০২১ সালের ২৭ জুন রাজধানীর মগবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ৭ জন নিহত হওয়ার পর দিনই প্রতিবেশী আতঙ্কগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বাংলার রাঁধুনি রেস্তোরাঁর কার্যক্রম পরিচালনা প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক, পুলিশ কমিশনার এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরে আবেদন করেন। প্রায় তিন বছর পেরিয়ে গেলেও আজও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ব‍্যবস্থা গ্রহণ করেননি। সম্প্রতি রাজধানীর বেইলি রোডের একটি ভবনে রেস্টুরেন্টে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রায় অর্ধশত প্রাণহানির ঘটনায় গাজীপুর বোর্ড বাজারের আলোচিত বাংলার রাঁধুিন রেস্তোরাঁ সংলগ্ন ব্যবসায়ীদের মধ্যে এখন রীতিমতো আতঙ্ক বিরাজ করছে।

স্থানীয়দের প্রশ্ন, বাংলার রাঁধুনির জরুরি বর্হিনির্গমন ব্যবস্থা না থাকা ভবনের ভেতরে আটকে থাকা মানুষগুলোর পরিণতি যদি নতুন কোনো বেইলি রোড ট্র্যাজেডি তৈরি করে তাহলে তার দায়ভার কে নিবে? বিগত ২০১৯ সালের দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোরই বা কি হবে যারা পূর্বের দুর্ঘটনার ঋণের বোঝা এখনো বয়ে বেরাচ্ছেন। রাঁধুনি রেস্তোরাঁর মালিক হাবিব কিন্তু ঠিকই ইন্সূরেন্সের টাকা দিয়ে তার ক্ষতি পুষিয়ে নিবেন। রাশেদের মতো সন্তান হারানো মায়ের কোল ভরিয়ে দিবে কে?

এদিকে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বাংলার রাঁধুনি রেস্তোরাঁর মালিক হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ভবনটি যথাযথভাবে সংস্কার করেই আমরা পুনরায় রেস্তোরাটি চালু করেছি। এখন আর কোন ঝুঁকি নেই।

Continue Reading

গাজীপুর

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের মেমোরিয়াল ডে-২০২৪ উদযাপন

Avatar photo

Published

on

কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যের স্মরণে “পুলিশ মেমোরিয়াল ডে-২০২৪” উদযাপন করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ।

‘কর্তব্যের তরে, করে গেলে যাঁরা,আত্মবলিদান-প্রতিক্ষণে স্মরি, রাখিব ধরি, তোমাদের সম্মান’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে শনিবার এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোঃ মাহবুব আলম বিপিএম পিপিএম(বার)।

অনুষ্ঠানের শুরুতে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার। পরে ১ মিনিট নীরবতা পালন ও কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যদের রুহের মাগফেরাত কামনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারবর্গ ও গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

Continue Reading

গাজীপুর

মাদক দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ কোনাবাড়ি থানার এএসআইয়ের বিরুদ্ধে

Avatar photo

Published

on

গাজীপুর প্রতিনিধি :

ঘুষ না দেয়ায় মাদক মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কোনাবাড়ি থানা পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে। তিনি কোনাবাড়ির বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক অন্যায় করে বেড়াচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে রয়েছে বেশকিছু অভিযোগ।

এ সংক্রান্ত বিষয়ে নিয়ে ওই এএসআই রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীর দাদা মোঃ লাল মিয়া (৬২) নামে এক ব্যক্তি গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি অপরাধ (উত্তর) বিভাগে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখিত অভিযোগ করেছেন। তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এএসআই রুহুল আমিন।

লিখিত অভিযোগে লাল মিয়া জানায়, গেল ৪-ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা অনুমান সাড়ে ৫টার দিকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন কোনাবাড়ি থানা পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এসএআই) রুহুল আমিন ও তার সঙ্গী ফর্মা (সোর্স) মিলে লাল মিয়ার নাতী ইমনকে আমবাগ লালঘাট ব্রিজের কাছে থেকে আটক করে।

পরে তাকে ধরে নিয়ে মিতালী ক্লাব সংলগ্ন ভুক্তভোগীর বর্তমান ঠিকানার ভাড়াবাসায় এসে মাদকদ্রব্যের কথা বলে ঘরে প্রবেশ করেন ওই দারোগা এবং তার সোর্স মোঃ শরিফ মিয়া। এ সময় তাদের ঘরে থাকা বিভিন্ন আসবাবপত্র বিছানা, আলমারি, সুকেশ তল্লাশি করেন তারা। তল্লাশিরকালে ইমনদের বাসায় মাদকদ্রব্য সংক্রান্ত কোনো কিছুই পায়নি ওই পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক।

এ পর্যায়ে তাদের ঘর তল্লাশি শেষে কিছু না পেয়ে এএসআই রুহুল আমিন ও তার সঙ্গে ফর্মা (সোর্স) ঘরে থাকা স্টিলের আলমারি থেকে নগদ তিন হাজার টাকা, সুকেশ এর ড্রয়ার থেকে আট আনা স্বর্ণের একটি চেইন, আট আনা ওজনের একজোড়া স্বর্ণের কানের দুল, তিন আনা ওজনের একটি আংটি এবং ব্যবহৃত অপ্পো ব্রান্ডের পুরাতন মোবাইল সেট নিয়ে নেয়।

পরে পুলিশের সঙ্গে থাকা সোর্স শরিফ এবং চাঁন মিয়া অভিযোগকারীর নাতী ইমনকে মারধর করে এবং টাকা দিতে বলে। টাকা না দিলে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে বলে ইমনের মাকে হুমকী দিয়ে ইমনকে নিয়ে চলে যায়।

লিখিত অভিযোগকারী ইমনের দাদা লাল মিয়া বলেন, এরপর ৫-ফেব্রুয়ারি অনুমানিক রাত দেড়টার দিকে এএসআই রুহুল তার সোর্স মোঃ শরিফ (২০বাসায় পাঠায় এবং ১নং আসামি ইমনের মা রাশেদা বেগমের কাছে (৫০) পঞ্চাশ হাজার টাকা দিতে বলে। ৫০ হাজার টাকা দিলে থানা থেকে তার ছেলে ইমনকে ছেড়ে দেয়া হবে।

অভিযোগকারী লাল মিয়া জানায়, তার ছেলে নুর আলম নাতী ইমনসহ পরিবার নিয়ে বর্তমান ঠিকানায় দুই বছর যাবৎ বসবাস করছেন। ইমনের বাবা নুর আলম নছের মার্কেট এলাকায় ভিভিন্ন ঝুটগুদামে ডেইলী লেবারের কাজ করেন। আর নাতী ইমন বাসায় থেকে সুইং মেশিন চালিয়ে প্যান্ট ও গেঞ্জির কাজ করে সংসার চালিয়ে আসছে। আমি এবং আমার পরিবারের কেউই কখনো মাদকদ্রব্য সেবন, গ্রহণ এবং ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে সম্পৃত্ততা নেই এমন কি এলাকার কেউ বলতে পারবে না যে, আমার নাতী ইমন মাদকের সংঙ্গে জড়িত।
অথচ দারোগা রুহুল সন্দেহ বশত্ব রাস্তা থেকে আমার নাতীকে গ্রেপ্তার করেন। ওই পুলিশ কর্মকর্তা টাকা চেয়েছিল, মূলত টাকা না দেয়ার কারণে আমার নাতিকে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়ে জেলে প্রেরণ করেছেন রুহুল দারোগা। এই বিষয়ে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য আমার বর্তমান ঠিকানা ভাড়া বাসার সামনে স্থাপনকৃত সিসি ক্যামেরায় সংরক্ষিত সব ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। ওই ভিডিও ফুটেজে এএসআই রুহুল আমিনসহ সোর্সদের দেখা গেছে ইমনের বাসায় ঢুকতে। ভিডিও ফুটেজে ইমনকে মারপিট করার শব্দও শোনা গেছে।

ইমনের বাবা নুর আলম বলেন, আমার ছেলে ইমনের সঙ্গে মিতালী ক্লাব উত্তরপাড়া এলাকার নয়ন (১৯) কেও গ্রেপ্তার করে হয়। নয়নকে ১৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট আর আমার ছেলেকে ২৫পিস ইয়াবা চালান করা হয়েছে।

তিনি বলেন, রুহুল নয়নের পরিবারের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা নিয়ে নয়নকে ১৫পিস ট্যাবলেট দিয়েছে।

ইমনের বাবা বলেন, আমি গরীব মানুষ বিভিন্ন ঝুট-গুদামে লেবারের কাজ করে কোনো মতে সংসার চালায়। আমার ছেলেকে যেদিন গ্রেপ্তার করা হয় সেদিন বরিশালে পীরের দরবারে ছিলাম। বাসায় এসে শুনি আমার ছেলে ইমনকে মাদক মামলায় গ্রেপ্তার করে জেলে দেয়া হয়েছে। আমি মেয়ের জন্য আস্তে আস্তে কিছু স্বর্ণের জিনিস করেছিলাম সেগুলোও ওই পুলিশ নিয়ে গেছেন। সোর্স ওবায়দুল ওই গয়না গুলো খুলে নেন। টাকা দিতে পারিনি বিধায় আমার ছেলেকে মাদক মামলায় জড়ানো হয়েছে।

ভুক্তভোগী পরিবার জানায়, ইমনকে মাদক মামলায় ফাঁসানোর পরে তারা খুব মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছে। এর প্রতিকার চেয়ে দারোগা রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে বর্ণিত বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তের দাবী করে লিখিত অভিযোগ করেছি।

তবে এসব অভিযোগ এএসআই রুহুল আমিন অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে তারা মিথ্যা অভিযোগ করছেন।

জিএমপি কোনাবাড়ি থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ মহিউদ্দিন ফারুক জানান, অন্যায় করতে পছন্দ করি না, কেউ যদি অন্যায় করে সমর্থনও করি না, পুলিশের কেউ যদি এমন অপরাধ করে থাকে তাহলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আছেন তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিবে।

Continue Reading