Connect with us

বিবিধ

একই লাইনে ১ম ট্রেনে পা-পরের ট্রেনে মাথা কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু

Published

on

imageঅনলাইন ডেস্ক: রেলের চূড়ান্ত অমানবিক মুখটা ফের এক বার সামনে এল। প্রথমে ট্রেনের তলায় পড়ে দু’টো পা কাটা গিয়েছিল এক য়ুবকের। মিনিট ১৫ পরে একই লাইনে আসা অন্য এক ট্রেনের চাকায় কাটা পড়ল তাঁর মাথাও। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় লাল্টু পাল (৩৯) নামে এক যুবকের। ট্রেনের ধাক্কায় গুরুতর জখম ওই যুবককে দুই লাইনের পাশে বসিয়ে রেখে যখন স্ট্রেচার আনার চেষ্টা চলছে, সেই সময়ে ওই লাইনে ফের ট্রেন চলে আসা এবং সেই ট্রেনেই জখম ব্যক্তির মাথা কাটা পড়াকে রেলের গাফিলতি হিসেবেই দেখছেন যাত্রীরা। যদিও গোটা ঘটনার দায় নিজেদের কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলতে চেয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দাবি, এক বারই ধাক্কা লেগেছে এবং তাতেই প্রাণ হারিয়েছেন ওই ব্যক্তি। কিন্তু, প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানের সঙ্গে রেলের এই বক্তব্যের কোনও মিল নেই।
তবে শুধু রেল নয়, এ দিনের ঘটনায় প্রশ্নের মুখে সাধারণ যাত্রীদের ভূমিকাও। মিনিট দশেক ধরে ওই যুবক লাইনের ধারে পড়ে থেকে যখন কাতরাচ্ছিলেন, তখন বেশির ভাগ যাত্রীই দূর থেকে তা দেখছিলেন। কাছে এগিয়ে যাননি কেউই। বরং কেবিনম্যান এবং স্টেশন ম্যানেজারের ঘরে দৌড়াদৌড়ি করেছেন ঘটনার কথা জানানোর জন্য। তবে, পরে দু’এক জন জখম লাল্টুবাবুর কাছে যান। যদিও দুই লাইনে ফের ট্রেন চলে আসা মাত্র তাঁরাও তাঁকে ছেড়ে চলে যান। যাত্রীদের একটা অংশের মত, প্রথম বারেই যদি রেললাইন চত্বর থেকে লাল্টুবাবুকে বের করে নিয়ে যাওয়া হত, তবে হয়তো প্রাণে বেঁচে যেতেন ওই যুবক।
স্থানীয় সূত্রে খবর, সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ হালিশহর স্টেশনে দু’নম্বর প্ল্যাটফর্ম ঠিক যেখানে শেষ হয়েছে সেখান থেকে লাইন পার হচ্ছিলেন লাল্টুবাবু। সেই সময়ে ওই লাইনে ঢুকছিল শিয়ালদহমুখী ডাউন শান্তিপুর লোকাল। একেবারে শেষ মুহূর্তে ট্রেনটিকে ঢুকতে দেখেন তিনি। কোনও রকমে নিজেকে সরানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন লাল্টুবাবু। ট্রেনের ধাক্কায় তাঁর দেহ রেললাইনের বাইরে পড়লেও পা দুটো ঢুকে যায় লাইনের ভেতর। ট্রেনে কাটা পড়ে তাঁর শরীর থেকে আলাদা হয়ে যায় দু’টি পা-ই।
প্ল্যাটফর্মে মিনিট খানেক দাঁড়িয়ে চলে যায় শান্তিপুর লোকাল। অভিযোগ, সেই সময় কাউকেই লাল্টুবাবুর কাছে আসতে দেখা যায়নি। এক এবং দুই নম্বর প্ল্যাটফর্মের প্রায় সকলেই যেন ঘটনার দর্শক! প্রাথমিক বিহ্বলতা কাটার পরে তাঁদেরই কেউ কেউ ছুটে গেলেন স্টেশন ম্যানেজারের ঘরে। ঘটনার কথা জানাতে কেউ বা গেলেন কেবিনম্যানের ঘরে। দু’তিন জন পৌঁছলেন রক্তাক্ত লাল্টুবাবুর কাছেও। তাঁকে লাইনের একেবারে ধার থেকে এক এবং দু’নম্বর লাইনের মাঝে টেনে তুলে বসানো হয়। অপেক্ষা করা হয় স্ট্রেচারের।
তত ক্ষণে ওই একই লাইনে আসার খবর হয়ে গিয়েছে ডাউন গেদে লোকালের। যাত্রীদের একাংশ স্টেশন ম্যানেজার এবং কেবিনম্যানের কাছে অনুরোধ করেন, আহত ব্যাক্তিতে না সরানো পর্যন্ত যাতে ওই লাইনে কোনও ট্রেন না আসে। তাঁরা আশ্বাস দেন। লাল্টুবাবুকে সরানোর জন্য স্ট্রেচার আনতে যান কয়েক জন। এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে তত ক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে আপ কল্যাণী লোকাল। এমনকী, দূর থেকে দেখা যায় দু’নম্বর লাইন ধরে গেদে লোকালকেও এগিয়ে আসতে দেখা যায়। কিন্তু, সকলেই ভেবেছিলেন ট্রেন না ঢুকে প্ল্যাটফর্মের আগেই দাঁড়িয়ে যাবে। স্টেশনের রেলকর্মীরা তেমনটাই জানিয়েছিলেন। কিন্তু, গতি কমিয়েও শেষমেশ গেদে লোকাল হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়তে থাকে। এক দিকে কল্যাণী লোকাল, অন্য দিকে গেদে— ঘাবড়ে গিয়ে উদ্ধার করতে যাওয়া যাত্রীরা দুই লাইনের মাঝখানে লাল্টুবাবুকে রেখে লাইন পেরিয়ে যান। আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বেশ গতিতে থাকা গেদে লোকালের চাকার তলায় নিজের মাথাটা সামান্য ঝুঁকিয়ে দেন লাল্টুবাবু। মুহূর্তের মধ্যেই সকলের চোখের সামনে ধড় থেকে আলাদা হয়ে যায় মাথাটি। এর পরেই রেলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
লাইনের পাশে পা কাটা অবস্থায় এক যুবককে পড়ে থাকতে দেখেও কেন গেদে লোকালের চালক ট্রেন থামালেন না? যাত্রীদের কাছে ঘটনার কথা শুনেও কেন স্টেশন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিলেন না? কেন লাইনে জখম অবস্থায় পড়ে থাকা সত্ত্বেও ট্রেন ঢোকানো হল? রেল এ নিয়ে কোনও কথা বলতে চায়নি। তাদের দাবি, ওই জায়গা দিয়ে লাইন পারাপার করার কথা নয়। এবং প্রথম ট্রেনের ধাক্কাতেই ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। দ্বিতীয় বার ধাক্কার কোনও ঘটনা ঘটেনি।
লাল্টুবাবু হালিশহর পুরসভার অস্থায়ী কর্মী। সেই সঙ্গেই তিনি এলাকায় প্যাকেট দুধ সরবরাহের কাজ করতেন। স্থানীয় সুভাষ কলোনীতে তাঁর বাড়ি। ঘটনার পর এলাকায় শোকের ছায়া নেমেছে। এর পরই হালিশহর স্টেশনে রেল অবরোধ করা হয়।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *