বাবুগঞ্জ প্রতিনিধি, বরিশাল:
মা ও শিশু মৃত্যুহার হ্রাস করাসহ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোঁড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে সরকার সারাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করলেও অব্যবস্থাপনার কারণে অনেক জায়গায়ই কাক্সিক্ষত লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে এসব ক্লিনিক। কিন্তু স্থানীয় ব্যবস্থাপনা কমিটি উদ্যোগী ও আন্তরিক হলে এসব কমিউনিটি ক্লিনিকের দ্বারা স্বাস্থ্যসেবায় যে শতভাগ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব তারই উজ্জ্বল ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাবুগঞ্জের ক্লাবগঞ্জ কমিউনিটি ক্লিনিক। ক্লিনিকটি সচল করার মাধ্যমে শতভাগ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করেই ক্ষান্ত হননি তারা। উপরন্তু নিজেদের দায়িত্ববোধ থেকে রাস্তা নির্মাণসহ নিজেরাই চাঁদা দিয়ে ক্লিনিকের নামে ব্যাংক হিসাব খুলেছেন ক্লাবগঞ্জ কমিউনিটি ক্লিনিক ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা। ক্লিনিকের আনুষঙ্গিক খরচ মেটানোর পরেও সেখানে উদ্বৃত্ত জমা হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বেসরকারি সংস্থা চন্দ্রদ্বীপ ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির (সিডিএস) উদ্যোগে ক্লাবগঞ্জের কমিউনিটি ক্লিনিক ম্যানেজমেন্ট কমিটি (সিসিএমসি) পুনর্গঠনের মাধ্যমেই ঘটে এই আমূল বৈপ্লবিক পরিবর্তন। কর্ড এইড দ্যা নেদারল্যান্ডস্ ও ভিলেজ এডুকেশন রিসোর্স সেন্টারের সহায়তায় ক্লাবগঞ্জ কমিউনিটি ক্লিনিক ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের প্রথমে তাদের দায়-দায়িত্ব ও করণীয় সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান করে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সিডিএস। “ইস্ট্যাবলিশ রাইটস্ টু হেলথ্ সার্ভিসেস থ্রু এ্যাডভোকেসী” প্রকল্পের মাধ্যমে একই সময়ে তাদের স্বাস্থ্য পরিচর্যা বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই কমিটির সদস্যদের চোখের সামনে মানবসেবার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয় বলে জানান সিসিএমসি’র সভাপতি ফজিলাতুন্নেছা বেগম। তিনি জানান, ওই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কমিটির সদস্যরা তাদের দায়িত্ববোধ সম্পর্কে সচেতন ও অনুপ্রাণিত হন। নিজেদের উদ্যোগেই ক্লিনিকের সেবা কার্যক্রম সচল করেন। ক্লিনিকের সেবার মানবৃদ্ধিতে নিয়মিত মাসিক মিটিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করেন এবং মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান করেন। এছাড়াও কমিউনিটি ক্লিনিক ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা চাঁদা তুলে ক্লিনিকে আসা সেবাগ্রহীতাদের বসার জন্য চেয়ারসহ আসবাবপত্র কেনা, টিউবওয়েল মেরামত ও আয়ার বেতনসহ ক্লিনিকের বিভিন্ন ব্যয় নির্বাহ করে আসছেন। চাঁদা তুলে এভাবে প্রায় ১৪ হাজার ৪০০ টাকা সংগ্রহ করে আপদকালীন সঞ্চয় হিসেবে ক্লিনিকের নামে ওই টাকা কৃষি ব্যাংকের বাবুগঞ্জ শাখায় জমা রেখেছেন বলে জানান সিসিএমসি সভাপতি ফজিলাতুন্নেছা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই ক্লাবগঞ্জ কমিউনিটি ক্লিনিকে যাতায়াতের রাস্তাটিও সম্প্রতি মাটি কেটে পুনরায় নির্মাণ করা হয়েছে। কথা প্রসঙ্গে ক্লিনিকের চিকিৎসক (সিএইচসিপি) হালিমা বেগম ও প্যারামেডিক ডাক্তার রোমানা ইয়াসমিন জানান, শুক্রবার ব্যতীত প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ক্লাবগঞ্জ কমিউনিটি ক্লিনিকে আসা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। রোগীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য স্থানীয় কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের টিআর প্রকল্পের ৬০০ কেজি চাল বরাদ্দের মাধ্যমে ৬০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৮ ফুট প্রস্থের ওই রাস্তাটি পুনঃনির্মাণের ব্যবস্থা করেন কমিউনিটি ক্লিনিক ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা। কমিটির এই সফল কর্মযজ্ঞের নেপথ্য কারিগর সিডিএর’র প্রধান সমন্বয়কারী মো. আলী জীবন বলেন, উদ্যোগ ও আন্তরিকতা থাকলে কোন সমস্যাই যে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না ক্লাবগঞ্জ কমিউনিটি ক্লিনিক ব্যবস্থাপনা কমিটি তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এদিকে এ ক্লিনিককে রোল মডেল হিসেবে চিহ্নিত করে এর অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রফিকুল ইসলাম দীপু।