Connecting You with the Truth

অভিষেকেই অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক ঔজ্জ্বল্য ছড়িয়েছেন

mm
মোসাদ্দেককে কাল ওয়ানডে অভিষেকের টুপিটা পরিয়ে দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। দুই ‘ম’-এর বাড়ি ময়মনসিংহ। নাম আর বাড়িতেই শুধু তাঁদের মিল নয়, দলে নিজেদের ভূমিকাও অনেকটা এক. মিডল অর্ডারে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি অফ স্পিন বোলিং। তবে কি মাহমুদউল্লাহর পর ময়মনসিংহ থেকে আরেকজন অলরাউন্ডার পেল বাংলাদেশ?
উত্তরটা সময়ই বলে দেবে। তবে অভিষেকেই মোসাদ্দেক যেভাবে ঔজ্জ্বল্য ছড়িয়েছেন, তাঁকে নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখতেই পারে বাংলাদেশ। অবশ্য তাঁকে আবেগ ছুঁয়ে যেতে পারে বাবার অসম্পূর্ণ স্বপ্নটা পূরণ হওয়ায়।
গত বছর জাতীয় লিগে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে রেকর্ড ৩টি ডাবলসহ ৬টি সেঞ্চুরির পর মোসাদ্দেক বলেছিলেন বুকের গহিনে জমিয়ে রাখার স্বপ্নের কথাটা, ‘বাবা মারা যাওয়ার পর মাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। পড়াশোনায় ঠিকভাবে মনোযোগ দিতে পারিনি। ভবিষ্যতে কী করব—নানা চিন্তা ছিল মাথায়। তবে মায়ের পুরোপুরি সমর্থন ছিল বলেই ক্রিকেট চালিয়ে যেতে পেরেছি। অথচ একটা সময় তিনি চাইতেন না আমি খেলাধুলা করি। বাবা মারা যাওয়ার পরই তাঁর ভাবনায় পরিবর্তন এসেছে। তিনি এখন চান বাবার অসম্পূর্ণ স্বপ্নটা যেন পূরণ করি।’
বাবা আবুল কাশেম ছিলেন ময়মনসিংহ জেলা ক্রীড়া সংস্থায়। মোসাদ্দেকের জীবনে মানুষটির প্রভাব প্রবল। মূলত বাবার উত্সাহে তাঁর ক্রিকেটে হাতেখড়ি। যখন কুঁড়িটা ক্রমেই বড় হচ্ছে, তখনই পাশ থেকে সরে গেছে ভরসার ছায়া। নয় বছর আগে বাবা মারা যাওয়ার পর বিরাট হোঁচটই খেতে হয় মোসাদ্দেককে। পরে এগিয়ে যাওয়ার পথটা দেখিয়ে দেন মা। সেই পথ ধরেই মোসাদ্দেকের এত দূরে আসা।
শৈশব থেকেই জীবনের কঠিন একটা লড়াইয়ে বাবার ছায়া পাননি বলেই হয়তো কঠিনতম পরিস্থিতিতেও এমন অবিচল থাকতে পারেন। শৈশবেই জেনে গিয়েছিলেন, জীবনটা অনেক বড়। জীবনের লড়াইটা অনেক কঠিন। জীবনসমুদ্রে ক্রিকেটের ২২ গজ সেখানে ছোট্ট একটা পুকুরমাত্র। জীবনের উত্তাল সমুদ্রে যে সাঁতরাতে জানে, তার কাছে পুকুরের নিস্তরঙ্গ ঢেউ তো কিছুই না!
বাংলাদেশের হয়ে অবশ্য অভিষেক মোসাদ্দেকের আগেই হয়ে গেছে। গত জানুয়ারিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একটি টি-টোয়েন্টি খেলেছিলেন। কিন্তু তাঁর প্রিয় সংস্করণ ওয়ানডে। কদিন আগেই জানিয়েছেন, ভীষণ অপেক্ষায় আছেন ওয়ানডে অভিষেকের।
এনামুল হক, সৌম্য সরকার, লিটন দাস, মোস্তাফিজুর রহমান, জুবায়ের হোসেনদের সঙ্গে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলেছেন মোসাদ্দেক। জাতীয় দলে আসতে তাঁর একটু দেরিই হয়েছে। তবে আফগানিস্তান সিরিজে মোসাদ্দেক খেলবেন, বোঝা যাচ্ছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। ঘরোয়া ক্রিকেটে তাঁর দুর্দান্ত পারফরম্যান্সই জানান দিচ্ছিল তিনি আসছেন। গত বছর প্রথম শ্রেণিতে অসাধারণ পাফরম্যান্সের পর সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আবাহনীর হয়ে মোসাদ্দেক আলো ছড়িয়েছেন দোর্দণ্ড প্রতাপেই।
বোলিংয়েও জাদু দেখিয়েছেন মোসাদ্দেক, নিয়েছেন ১৫ উইকেট।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে ৭৬ রান করার পর মোসাদ্দেকের অভিষেক মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার। সেটিও হয়ে গেছে কাল। অভিষেকটাও হয়েছে রঙিন। ভীষণ চাপে খেলেছেন অপরাজিত ৪৫ রানের দারুণ এক ইনিংস। ওয়ানডে ইতিহাসে ২৪তম বোলার হিসেবে অভিষেকে প্রথম বলেই পেয়েছেন উইকেট! মোসাদ্দেক একবার বলেছিলেন, ‘ক্রিকেটে আমার সব অর্জন বাবাকে উত্সর্গ করি। আফসোস, তিনি কোনো অর্জনই দেখতে পাবেন না। এ আক্ষেপ বয়ে বেড়াতে হবে আজীবন।’
কাল নিজের অভিষেকে বাংলাদেশ জিততে না পারায় মোসাদ্দেকের জীবনে হয়তো যোগ হলো আরও একটি আক্ষেপ।

Comments
Loading...