Connect with us

বিবিধ

বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনে বিতর্ক কেন?

Avatar photo

Published

on

nocredit

বিডিপি ডেস্ক: বায়োমেট্রিক্স পদ্ধতিতে সিম যাচাই করতে মোবাইল কোম্পানির কাছে আঙ্গুলের ছাপ দেয়াকে ঝুকিপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করে এ পদ্ধতির নিয়ে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এর বিরোধিতা করছেন অনেকে। গত ডিসেম্বর মাস থেকে আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে ১৩ কোটির বেশি সিম নিবন্ধন যাচাই শুরু হয়েছে। বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত দেড়কোটির বেশি মানুষ বায়োমেট্রিক্স পদ্ধতিতে সিম যাচাই করে নিয়েছেন।
এপ্রিলের মধ্যেই এভাবে আরো ১১ কোটির বেশি সিম নিবন্ধন করতে হবে। সাধারণ ব্যবহারকারীরা সরকারি এ নির্দেশনার ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাবই দেখাচ্ছেন।সিম নিবন্ধন শেষে একটি কাস্টমার কেয়ার সেন্টার থেকে বেরিয়ে অনন্যা মুন্নী বলছিলেন, “ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে সিমটা নেয়া খুবই ভাল একটা জিনিস। যারা আগে জানতো না তারা নিতোনা, এখন উদ্যোগটা নিয়েছে এটা ভাল কাজ”।
মিজানুর রহমান নামে আরেকজন বলছিলেন “ক্রিমিনালকে ধরতে খুব সহজ হবে। আমি মনে করি এটা ভাল জিনিস। এটা অন্য দেশে নেই, অন্য দেশে ক্রিমিনালের ধরন আর আমাদের দেশের ক্রিমিনালের ধরন এক না”। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার স্বার্থে আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে সিম নিবন্ধনের বিরোধিতা দেখা যাচ্ছে।
কেউ কেউ ব্লগে এমনকি অনলাইন সংবাদপত্রে মতামত লিখে উদ্বেগ জানাচ্ছেন। বহুজাতিক কোম্পানির কাছে আঙ্গুলের ছাপ দেয়ার ঘোর বিরোধী একজন আরিফুজ্জামান। তিনি বলেন, “আমাদের এখানে হাতের আঙ্গুলের ছাপ বাইরে চলে যেতে পারে এবং আমি আমার আঙ্গুলের ছাপ বাইরে দিবনা এরকম পরিমাণ বোধ বা অ্যাওয়ারনেস কিন্তু আমাদের অধিকাংশ মানুষের মধ্যে গড়ে ওঠে নাই। কিন্তু আমি কোনোভাবেই চাইবনা যে আমার হাতের আঙ্গুলের ছাপ আমি একটি বেসরকারি কোম্পানির কোনো কর্মকর্তার উপস্থিতিতে বা তার ডিভাইসে আঙ্গুলের ছাপ দিব। কারণ এই আঙ্গুলের ছাপ নানান ভাবেই ব্যবহার হতে পারে”।
খোঁজ নিয়ে দেখা যাচ্ছে আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে মোবাইল সিম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করেছে প্রথমে পাকিস্তান। বাংলাদেশে এটি শুরু হয়েছে এবং সর্বশেষ সৌদি আরবেও এ নিয়ম চালুর খবর পাওয়া গেছে। ব্যক্তিগত গোপানীয়তা এবং স্পর্ষকাতর এসব তথ্যের নিরাপত্তার কারণে উন্নত রাষ্ট্র এনং সেখানকার নাগরিক অধিকার কর্মীরা সোচ্চার থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে নাগরিক অধিকারের স্পর্ষকাতর এসব দিক অনেকটা উপেক্ষিত আছে বলে মনে করেন আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক।
“সংবিধানে যেটা বলা আছে আমার এই ব্যক্তিগত সবকিছুর গোপনীয়তা আছে। তবে সরকার দেশের স্বার্থে আইন করে এর ব্যতিক্রম করতে পারে। তো এইখানে তো কোনো আইন নাই। আর আমরাও আমাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন না বলে আমরাও দিয়ে যাচ্ছি। তো আমি বলবো যে চিন্তা করেন পরে হকার বা বাসে উঠতে বা দুধ কিনতে গেলে যদি ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে হয়, তখন কিন্তু আমরা ব্যপারটা বুঝতে পারবো যে এটা কত উদ্ভট কাজ হচ্ছে।
বাংলাদেশে এখন থেকে নতুন সিম কেনা কিংবা সংযোগ বন্ধ করতেও আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে যাচাই করতে হবে। উদ্বেগ এবং বিতর্কের সূত্র ধরে জানতে চাই বায়োমেট্রিক তথ্য যাচাই প্রক্রিয়া কিভাবে হচ্ছে।দেশটির অন্যতম একটি বড় অপারেটর বাংলালিংকের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শিহাব আহমাদ বলেন, “যে তথ্যগুলো আসে সব তথ্যই এখানে সংরক্ষণ করা হচ্ছে যতক্ষণ পর্যন্ত এটা ভেরিফাই করা না হচ্ছে।
ভেরিফাই হওয়ার পরে বিটিআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী এগুলো হয় সংরক্ষণ করা হবে অথবা আমরা এটা পরবর্তীতে অন্য কোনো পদ্ধতিতে ডিলিট করে দিব”। গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা দিয়ে থাকেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংরক্ষণ না করে ভেরিফাই করা সম্ভব না।“গ্রাহকদের সম্পূর্ণ তথ্য পরিপূর্ণভাবে সংরক্ষণ করা হয় এবং ওইটা প্রটেকশন দেয়া হয়। এবং আমাদের সার্ভার থেক এটা বাইরে যাবার কোনো সম্ভাবনা নাই”
মানুষের আঙ্গুলের ছাপ, চোখের রেটিনা এবং ডিএনএ তথ্য একান্ত ব্যক্তিগত সম্পদ। প্রযুক্তিবিদ জাকারিয়া স্বপন বলেন, এ তথ্য রাষ্ট্র ছাড়া কারো কাছে থাকাই নিরাপদ নয়। “রাষ্ট্র শুধু এটা প্রটেক্ট করতে পারে বা স্টোর করতে পারে। ওই ডেটাবেজ থেকে যদি কেউ পেয়ে যায় তাহলেতো ডেফিনেটলি ক্রাইম।
এনশিওর করতে হবে যে গর্ভমেন্ট ছাড়া আর কেউ কোনো পাবলিক ইনফরমেশন স্টোর করছে না কোনো অপারেটর বা যারা এরমধ্যে কাজ করছে, ইভেন মিডলে যারা আছে। কারণ এই ফিঙ্গার প্রিন্টের প্রসেসটা কিন্তু থার্ড পার্টিরা ইমপ্লিমেন্ট করে দিয়েছে”। স্বপন বলেন, আঙ্গুলের ছাপ তৃতীয় পক্ষের কাছে চলে গেলে নানারকম অপব্যবহার হতে পারে-
“রিস্কটা হলো অন্য একটা পার্সন আমাকে ইমপার্সনেট করতে পারে সে প্রিটেন্ড করতে পারে যে আমি জাকারিয়া স্বপন।
আমার অনুমতি ছাড়াই করতে পারে।
বেসিকালি আমার যত যায়গায় ডিজিটাল ইনফরমেশন আছে স্টোর করা আছে সব অ্যাকাউন্ট চাইলে সে নিয়ে নিতে পারে। এ রিস্ক কিন্তু শুধু আমার আপনার না সবার ক্ষেত্রে হতে পারে। ইভেন একজন কৃষকেরও হতে পারে। দেখা যাবে উনি লোন নিয়ে বসে আছেন উনি যানেনই না”।
এদিকে বিটিআরসির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এমদাদ উল বারী বলেন, রিটেইলার লেভেলে সংরক্ষণ করার কোনো সুযোগই রাখা হয়নি। “টেকনিক্যালি ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংরক্ষণ করা সম্ভব না। কারণ এটা রিয়েল টাইম মিলিয়ে দেখা হয়। তবে অপারেটর লেভেলে এটা সম্ভব হতে পারে যদি আলাদা করে কেউ করে। বাট আমরা অপারেটরদেরকে নির্দেশ দিয়েছি যেন এটা তারা না করে”।
এদিকে আঙ্গুলের ছাপ বিতর্ক নিয়ে ১৯শে ফেব্রুয়ারি প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম তার ফেইসবুক পাতায় লিখেছেন মোবাইল কোম্পানির কাছে আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষণের কোনো প্রযুক্তিও নেই। এদিকে মোবাইল অপারেটরদের পক্ষ থেকে জানা গেছে কোনো পর্যায়ে বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষণ করা যাবে না বিটিআরসি এই নির্দেশনা দিয়েছে ২৩ ফেব্রুয়ারি। বিবিসি বাংলা।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিবিধ

চিফ হিট অফিসার এর দায়িত্ব কি?

Avatar photo

Published

on

উইকিপিডিয়া অনুসারে, চিফ হিট অফিসার (Chief Heat Officer), বা সিএইচও (CHO) হলেন একজন পৌরসভার সেবক, যিনি চরম উচ্চ তাপদাহ মোকাবেলা এবং শহুরে তাপের প্রভাব হ্রাস করার বিষয়ে কাজ করেন। বেশিরভাগ প্রধান তাপ কর্মকর্তাদের শহর, দেশ এবং স্থানীয় সরকারের অন্যান্য কার্যালয় দ্বারা নিয়োগ করা হয়। ২০২০ এর সালের গোড়ার দিকে এই পদটির আবির্ভাব ঘটে। ওই বছর গরম জলবায়ুর বেশ কয়েকটি শহরে ছায়া বৃদ্ধি, শীতলকরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থা , গাছ লাগানো এবং তাপ-বিরোধী কাজের সমন্বয়ের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব প্রশমিত করার চেষ্টা করার জন্য প্রধান তাপ কর্মকর্তা নিয়োগ করে। এর মধ্যে লস অ্যাঞ্জেলেস, মিয়ামি-ডেড কাউন্টি, মেলবোর্ন, এথেন্স এবং ফ্রিটাউনে প্রাথমিক হিট অফিসার পদ তৈরি করা হয়েছিল। পদটি তৈরির উদ্যোগটি আটলান্টিক কাউন্সিল দ্বারা সংগঠিত হয়েছিল অ্যাড্রিয়েন আর্শট – রকফেলার ফাউন্ডেশনের রিজিলিয়েন্স সেন্টারে।

Continue Reading

বিবিধ

সিদ্দিক বাজার বিস্ফোরণ ২০২৩

Avatar photo

Published

on

সিদ্দিক বাজার দুর্ঘটনা ২০২৩

২০২৩ সালের ৭ মার্চ ঢাকার সিদ্দিক বাজারের একটি ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এই দুর্ঘটনায় ১৬ জন মানুষের মৃত্যু হয়। আহত হয় শতাধিক ব্যাক্তি। বিস্ফোরণে পাশাপাশি দুটি বহুতল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একটি ভবন সাততলা এবং আরেকটি ভবন পাঁচতলা। এর মধ্যে সাততলা ভবনের বেসমেন্ট, প্রথম ও দ্বিতীয় তলা বিধ্বস্ত হয়। আর পাঁচতলা ভবনের নিচতলাও বিধ্বস্ত হয়। এই ভবনের দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত ব্র্যাক ব্যাংকের কার্যালয়। বিস্ফোরণের পর ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানান রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা। ওই ভবনে গ্যাসের লাইনের ছিদ্র থেকে গ্যাস জমেছিল। সেটা থেকে বিস্ফোরণ হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।[1][2][3]

ঘটনা প্রবাহ-
৭ মার্চ ২০২৩ মঙ্গলবার বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে নর্থ সাউথ রোডের ১৮০/১ হোল্ডিংয়ে ওই সাত তলা ভবনে বিস্ফোরণ ঘটে। ভবনটি গুলিস্তানে বিআরটিসির বাস কাউন্টারের পাশে। বিস্ফোরণের পরপরই চারপাশ ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। বিকট আওয়াজে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা এসে উদ্ধারকাজ শুরু করেন। একে একে বাড়তে থাকে ইউনিটের সংখ্যা। সাথে যোগ দেন স্থানীয়রাও। ফায়ারসার্ভিসের মোট ১১টি ইউনিট এসে উদ্ধার কাজ চালায়।[4]

প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় গুলিস্তানের বিস্ফোরণ-
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মো. শাহজালাল বলেন, বিকাল সাড়ে চারটার দিকে হঠাৎ বিকট একটি শব্দ হয়। এসে দেখি মানুষ পড়ে আছে, চিল্লাচিল্লি করছে। লোহার গেট, ভবনের দেওয়াল ভেঙে রাস্তায় পড়েছে। একটা বাস ওই ভবনের সামনে ছিল। বাসের যাত্রীদের অনেকেই আহত হয়েছেন। কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন। [2]

স্থানীয় একটি দোকানের কর্মচারী সম্রাট ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেন, ‘কস্তুরী হোটেল থেকে খাবার খেয়ে আমি মাত্র বের হয়েছি। তারপরই বিকট শব্দে ধোঁয়া শুরু হয়। ১০০ জনের ওপরে মানুষ আহত হয়েছে। মনে হয় ফিল্ম দেখতাছিলাম। মানুষ উইড়া উইড়া যাচ্ছে চারদিকে। ওপর থেকে যখন গ্লাসগুলো আসতেছে, তখন মনে হয় শুটিংয়ে যেভাবে মানুষের শরীরে ঢুকে যায়, ঠিক সে রকম পরিস্থিতি দেখছিলাম।’[2]

বিস্ফোরণ থেকে বেঁচে গেছেন ওই ভবনটির নিচতলার বাদশা ট্রেডিংয়ের শ্রমিক আনোয়ার হোসেন। তার ভাষ্য, দোকানের ম্যানেজার কথায় চা আনতে বাইরে গিয়েছিলেন তিনি। হঠাৎ বিস্ফোরণে বিকট আওয়াজে তিনি চেতনা হারান। বিস্ফোরণের আগে দোকানের ভেতরে অন্তত তিনজন ছিলেন এবং দোকানের বাইরে ছিলেন স্যানিটারি দোকানের ৭-৮ জন শ্রমিক। চেতনা ফেরার পর দোকানের বাইরে থাকা শ্রমিকদের হাসপাতালে নিতে দেখলেও ভেতরে থাকা মহাজন ও বাকিদের বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান বাদশা।[4]

ওই ভবনের সামনে রাস্তার ওপর ভ্যানে করে বেল বিক্রি করছিলেন দিলীপ দাস। বিস্ফোরণে তিনিও আহত হয়েছেন। দিলীপ বলেন, বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে যায় আশপাশের এলাকা। পথচারীদের ওপর বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে পড়তে দেখেছেন তিনি। বিস্ফোরণে তার এক ক্রেতাও আহত হয়েছেন।[4]

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী সামনের বিল্ডিংয়ে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন বলেন, আমি প্যান্ট পড়তেছিলাম, শব্দ শুনে এসে দেখি সব ধোঁয়া ধোঁয়া, সব অন্ধকার।[5]

ঘটনার পর বিস্ফোরণ হওয়া ভবনের বিপরীতে সামনের বিল্ডিংয়ে থাকা একজন প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বিকট শব্দ শুনে অফিস থেকে বাইরে এসে দেখি সব অন্ধকার। অনেক মানুষ আহত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। অনেকে মারাও গেছেন। পরে আমরা ধরাধরি করে ৫-৬ জনকে একটি পিকআপে তুলে দিয়েছি। তাদের মেডিকেলে নিয়ে গেছে।[5]

অপর একজন বলেন, আমি প্যান্ট পড়তেছিলাম, শব্দ শুনে এসে দেখি সব অন্ধকার। চারিদিকে রক্ত আর রক্ত।[5]

Page Source : সিদ্দিক বাজার বিস্ফোরণ ২০২৩

Continue Reading

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম নিয়ে যেভাবে সতর্ক থাকবেন

Avatar photo

Published

on

টেক এক্সপ্রেস ডেস্ক:
গত ২০ বছর ধরে ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিমাণ বেড়েছে, একইসঙ্গে বিকাশ ঘটেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের। বিনোদনের অংশ হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার শুরু হলেও, বিগত এক দশকেরও বেশি সময়ে এটি বিনোদনকে ছাড়িয়ে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই জায়গা করে নিয়েছে। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর মানুষ ব্যাপক হারে ডিজিটাল যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে শুরু করে; ফলে, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিরাপত্তা বিষয়ক উদ্বেগের পরিমাণও বেড়ে যায়।

বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যায়, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে সাইবার অপরাধের পরিমাণও বেড়েছে আনুপাতিক হারে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ডিজিটাল যোগাযোগ প্ল্যাটফর্মগুলো সক্রিয়ভাবে এসব অপরাধীদের শনাক্ত করতে কাজ করছে এবং নিরাপদ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে সুরক্ষা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করছে।

তবে, বর্তমান হাইপার-কানেক্টেড ও সবসময় অনলাইনে সংযুক্ত থাকা বিশ্বে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অনেক চ্যালেঞ্জিং একটি বিষয়। আজকাল অপরাধীরা বিভিন্নভাবে তরুণদের প্রলুব্ধ করে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করে এবং দুর্ভাগ্যবশত অনেক তরুণরাই অপরাধীদের এসব ফাঁদে পা দিয়ে প্রায়শই দুর্ভাগ্যজনক পরিণতির সম্মুখীন হয়। তাই, ব্যবহারকারীদের জন্য অপরিহার্য হচ্ছে তারা যেন কোনো অপরিচিত অ্যাকাউন্টের ব্যাক্তির সাথে যোগাযোগ না করে এবং ব্যক্তিগত কোনো তথ্য শেয়ার না করে। পাশাপাশি, ব্যবহারকারীদের অবশ্যই কমিউনিটি গাইডলাইন বা ডিজিটাল যোগাযোগ প্ল্যাটফর্মের গোপনীয়তা নীতিগুলো ভালোভাবে পড়ে, মেনে চলতে হবে। কমিউনিটি গাইডলাইন হচ্ছে ব্যবহারকারীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এসব ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর প্রথম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। যেহেতু, সবার সাথে কানেক্টেড থাকার জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো চমৎকার একটি উপায়, তাই আমাদের উচিত এ প্ল্যাটফর্মগুলো নিরাপত্তা নিশ্চিতে কী কী ব্যবস্থা রেখেছে সে সম্পর্কে অবহিত থাকা।

ডিজিটাল মাধ্যমগুলো ব্যবহারের সময় আমাদের উচিত শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা এবং ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) কারো সঙ্গে শেয়ার না করা। হ্যাকাররা পাসওয়ার্ড বা ওটিপি পেয়ে গেলে যে কারো অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে পারে এবং অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার করতে পারে। সম্প্রতি, ইমো’র মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা বাড়াতে ফ্ল্যাশ কল ফিচার চালু করেছে। নিজের অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখতে সবসময় আপনার অ্যাকাউন্ট আর অন্য কোনো ডিভাইসে লগ-ইন করা আছে কিনা তা চেক করুন; উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আপনি আপনার ব্যবহৃত অ্যাপের সেটিং অপশনে গিয়ে ‘ম্যানেজ ডিভাইস’ অপশনে ক্লিক করে আপনার অ্যাকাউন্ট আর অন্য কোনো ডিভাইসে লগ-ইন করা আছে কিনা তা দেখতে পারেন (দেখে আপনার ডিভাইস ছাড়া অন্য সব ডিভাইস থেকে অ্যাকাউন্ট সাইন আউট করে ফেলুন)। ইতোমধ্যে, এমন একটি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে যে, অপরাধীরা ব্যবহারকারীদের ফোন দিয়ে নিকট আত্মীয়ের ভান করে টাকা চায় এবং ভুক্তভোগীদেরকে বিপদে ফেলে। তাই, এ ধরণের বিষয়ে পুনরায় সেই আত্মীয়কে ফোন দিয়ে বা অন্য কোনো মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে নেয়া উচিত বা যাচাই করে নেওয়া উচিত যে আসলেই ফোনকারী আত্মীয় কিনা। দুর্ঘটনার বিষয়ে কোনো ফোনকল পেলে প্রথমেই সত্যতা যাচাই করে নিবেন যে সে ঘটনা ঘটেছে কিনা। কেউ যদি কোনো দুর্ঘটনা সম্পর্কে জানানোর জন্য আপনাকে কল করে, তাহলে আপনার আত্মীয় বা পরিচিতদের কল করে ঘটনাটি যাচাই করার চেষ্টা করুন এবং খবরটি বিশ্বাসযোগ্য কিনা তা পরীক্ষা করুন।

এ সম্পর্কে জনপ্রিয় তাৎক্ষণিক ডিজিটাল যোগাযোগ মাধ্যম ইমো’র প্রোডাক্ট ডিরেক্টর গেরেট বলেন, ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চমৎকার সুবিধার পাশাপাশি সতর্ক না থাকলে কিছু সমস্যারও সম্মুখীন হতে হয়। এ বাস্তবতাকে বিবেচনায় রেখে ইমোতে আমরা ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে এ সমস্যা মোকাবেলায় প্রতিনিয়ত ব্যবস্থা নিয়ে যাচ্ছি। আমরা ইতোমধ্যেই জালিয়াতি বিরোধী এবং নিরাপত্তা বিষয়ক বিভিন্ন পদ্ধতি চালু করেছি, যেমন এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন সহ “সিক্রেট চ্যাট” ফিচার যা ব্যাবহারকারীদের তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এছাড়াও আমরা ব্যাবহারকারীদের আমাদের কমিউনিটি গাইডলাইন মেনে চলার ব্যাপারে উৎসাহিত করছি এবং ব্যবহারের সুবিধা গ্রহণের সময় নিরাপদ থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা আদায়ের উপায় সম্পর্কে ব্যবহারকারীদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছি। বিভিন্ন খাতের অন্যান্য অনেক ব্র্যান্ডও এমন ব্যবস্থা নিচ্ছে দেখে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত”।

আমাদেরকে বিচক্ষণতার সঙ্গে দুরদর্শী চিন্তার মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়া ও ডিজিটাল কমিউনিকেশন প্ল্যাটফর্মগুলোর উপকারিতা ও সুবিধাগুলো বুঝতে হবে এবং এর মাধ্যমে সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত বিরূপ প্রভাব প্রতিরোধ করতে হবে। সুস্থধারার অনলাইন পরিবেশ বজায় রাখতে বাবা-মা, অভিভাবক ও শিক্ষকদের উচিত শিশু ও তরুণদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ও কথাবার্তা বজায় রাখা। পাশাপাশি, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর উচিত ব্যবহারকারীদের জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, যাতে তারা শঙ্কিত না হয়ে তাদের কার্যক্রমের সাথে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে এবং পরিবর্তিত সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে। আমাদেরকে এসব বিষয়ে আরো জানতে হবে এবং সচেতন হতে হবে এবং সেই অনুযায়ী এগিয়ে যেতে হবে।

Continue Reading