আবারো ট্রেন দুর্ঘটনা, নিহত ৪
স্টাফ রিপোর্টার:
রাজধানীর কারওয়ানবাজারে রেললাইনের ওপর মাছের বাজার আর পাশের জায়গা দখল করে দোকান গড়ে তোলার কারণেই বার বার রেল দুর্ঘটনা ঘটছে সেখানে। প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল দশটা পর্যন্ত পুরো রেললাইনের ওপর বসে মাছের আড়ৎ আর রেললাইনের দুই পাশে দোকান থাকার কারণে ট্রেন আসা যাওয়ার মুহুর্তে লোকজন নিরাপদ দূরত্বে যেতে পারেন না। যার ফলে বার বার দুর্ঘটনার শিকার হতে হয় সাধারণ লোকজনকে। গতকাল সকালে কারওয়ানবাজারে রেললাইনে দুর্ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দা, পুলিশ ও গেটম্যানদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
কারওয়ানবাজারের রেললাইনে গতকাল সকাল পৌনে ৯টার এ দুর্ঘটনায় ট্রেনে কাটা পড়ে তিন যুবক নিহত ও নারীসহ ছয়জন আহত হয়েছেন। সে সময় দুই দিক থেকে দু’টি ট্রেন কারওয়ানবাজার এলাকা অতিক্রম করছিল। হতাহতরা দুই ট্রেনের মধ্যে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হন। জিআরপি পুলিশ বলছে, বার বার রেললাইন ও পাশের জায়গায় বাজার-দোকানের বিষয়ে তাগিদ দেওয়ার পরও ব্যবসায়ীরা কোনো কথা শোনে না। তারা রেললাইনের ওপর নির্দ্বিধায় করছেন মাছের ব্যবসা।
স্থানীয় বাসিন্দা আবু বকর বলেন, রেললাইনের ওপর মাছের আড়ৎ বসে। ভোর থেকে অনেক লোকজন জমা হন সেখানে। যখন কোনো ট্রেন আসে বা যায় তখন যে মানুষ নিরাপদ দূরত্বে যাবেন, তার কোনো জায়গা থাকে না। দুই পাশের রাস্তায়ই রয়েছে অসংখ্য দোকান। এ কারণে প্রায় প্রতিনিয়তই এখানে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে। আবু বকর অভিযোগ করে বলেন, এ বিষয়ে আমরা বার বার প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। রেল পুলিশকে মাছ বাজারের পক্ষ থেকে বড় সুবিধা দেওয়া হয়। যার কারণে তারা কিছুই বলেন না। আবু বকর বলেন, গতকাল সকাল পৌনে ৯টার দিকে ঢাকা থেকে কর্ণফুলী এক্সপ্রেস চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাচ্ছিল এবং ময়মনসিংহের তারাকান্দি থেকে যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেন ঢাকায় আসছিল। যখন দুই ট্রেন পাশাপাশি আসা-যাওয়া করছিল, তখন মানুষ দুই দিকে ছোটাছুটি করতে থাকেন। কিন্তু তাদের সরে যাওয়ার মতো রাস্তা ছিল না। যার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, ট্রেন আসলে সরে যাওয়ার আর রাস্তা থাকে না। যার কারণে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। রেলক্রসিংয়ে দুই শিফটে মোট ৮ জন গেটম্যান দায়িত্ব পালন করে থাকেন। গতকাল সকালে দায়িত্ব পালন করছিলেন মতিউর রহমান, রুবেল হোসেন, আবু আহমেদ ও রবিউল ইসলাম। মতিউর রহমান বলেন, ট্রেন আসার সময় এখানে যে পরিমাণ লোকজন থাকেন, তারা আর যেতে পারেন না। যার ফলে দুর্ঘটনা ঘটে।
তিনি বলেন, এখানকার দুর্ঘটনা রোধ করতে হলে রেললাইনের ওপর যে মাছ বাজার বসে তা উঠিয়ে দিতে হবে। একই সঙ্গে আর যারা রেললাইনের পাশের রাস্তা দখল করে দোকান করে আছেন তাদের সরিয়ে দিতে হবে। তাহলে এখানে অনেক জায়গা বেরিয়ে আসবে। তিনি বলেন, জায়গা বের হলে ট্রেন আসা-যাওয়ার মুহূর্তে মানুষ নিরাপদ দূরত্বে সরে যেতে পারবে এ স্থানের লোকজনেরা। সেক্ষেত্রে কোনো দুর্ঘটনা ঘটবে না।
এদিকে দুর্ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে আসেন কমলাপুর জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মজিদ, তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজাহারুল ইসলাম ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহ উদ্দীন আহমেদ। জিআরপি থানার ওসি আব্দুল মজিদ বলেন, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছিল ট্রেন কর্ণফুলী এক্সপ্রেস এবং তারাকান্দি থেকে ঢাকায় আসছিল যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেন। দু’টি ট্রেন ক্রস করার সময় এ ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন, আমি বার বার রেললাইনের ওপর মাছের বাজার না বসার জন্য বলেছি। তারপরও তারা শোনে না। তিনি বলেন, শিগগিরই রেললাইনের পাশের যেসব জায়গা দখল করে দোকান গড়া হয়েছে, সেগুলো দখলমুক্ত করতে অভিযান চালানো হবে। তেজগাঁও থানার ওসি মাজাহারুল ইসলাম বলেন, এটি রেলের জায়গা, প্রধানত দায়িত্ব তাদের। মূলত এখানে বাজার বসার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন, জায়গাটি দখলমুক্ত করা গেলে দুর্ঘটনা কমে আসবে। শিল্পাঞ্চল থানার ওসি সালাহ উদ্দীন আহমেদও একই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, দুর্ঘটনা ঘটলেই আমাদের আসা লাগে। কিন্তু আগে থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে এখানে আর দুর্ঘটনা ঘটবে না। ইস্রাফিল আলম নামের এক মাছ ব্যবসায়ী বলেন, শুধু যে রেললাইনের ওপর বাজার বসে তা নয়। ভোর থেকে এই পুরো এলাকায়ই বাজার বসে। সামনের দিকে জায়গা না থাকার কারণে রেললাইনের ওপর বসে এ বাজার। তিনি বলেন, আসলে এ বিষয়ে সচেতনতার প্রয়োজন। সবাই যদি সচেতন হয় তাহলে এ ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।