আসছে তিন লাখ কোটি টাকার বাজেট-অর্থমন্ত্রী
আগামী ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের বাজেটের আকার বাড়বে। এর আকার তিন লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি হবে। তবে বাজেটে কালো টাকা সাদা করার বিশেষ সুযোগ থাকছে না। আর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে রেলওয়ে খাতে।
রোববার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে অর্থনীতিবিদ ও বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ কথা বলেন।
বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক কে এস এ মোর্শেদ, রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, অর্থনীতিবিদ ড. বিনায়ক সেন, অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আশরাফ আলি, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জামান, অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনজুর ও বিআইডিএস’র নাজনীন আখতার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আগামী অর্থবছরের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, মোবাইলে এক শতাংশ হারে যে অতিরিক্ত সারচার্জ আদায় হবে তা ব্যয় করা হবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকারি যেসব প্রতিষ্ঠানের অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা না দিয়ে নিজস্ব একাউন্টে জমা রাখে তাদের জেল জরিমানা হওয়া উচিৎ। সঞ্চয়পত্র সুদের হার এখনও অনেক বেশি। আলোচনার মাধ্যমে এটা কমানো হবে।
বাজেটে কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘দেয়ার ইজ নো কালো টাকা ইন দিস বাজেট। গত বাজেটেও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ ছিল না, এ বাজেটেও সুযোগ থাকছে না। তবে নরমাল যে সুবিধা সেটা থাকছে।’
অর্থমন্ত্রী আবারো প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বৈঠকে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডিসেম্বরে দেশের অর্থনীতির যে অবস্থা ছিল তাতে আমরা আশাবাদী ছিলাম এবার সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। কিন্তু গত তিন মাসে যে ঝামেলা চলেছে তাতে লক্ষ্য পূরণ নিয়ে সংশয় আছে।
বৈঠকে ড. বিনায়ক সেন বলেন, মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি) অর্জন বিষয়ে একটি প্রতিবেদন বাজেটে থাকতে পারে। এমডিজির বিষয়ে নির্দেশনা থাকতে পারে। ২০২১ সালের মধ্যে অতিদারিদ্র্য শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে হবে। তিনি রেল ও শহরাঞ্চলে চলাচলকারী পাবলিক বাস সেবা উন্নত করার পরামর্শ দেন।
বিআইডিএস মহাপরিচালক কেএসএ মোর্শেদ বলেন, জ্ঞানের দক্ষতা বাড়াতে হবে। জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তুলতে না পারলে আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে না। এ জন্য উচ্চশিক্ষায় দক্ষতা ও গবেষণা বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আশরাফ বলেন, এবারের বাজেট অন্য প্রেক্ষাপটে হচ্ছে। রাজনৈতিক ও সামাজিক সমস্যার কারণে সরবরাহ চেইনে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সবাই চায় সহায়তা পেতে। এক্ষেত্রে লবিভিত্তিক প্রণোদনা না দিয়ে তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রণোদনা দেওয়া উচিৎ। ব্যাংকগুলোর ঋণ ব্যবস্থা নিয়ে বিশেষ নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জামান বলেন, ‘বিনিয়োগ বোর্ডকে ঢেলে সাজাতে হবে। সরকারের রাজস্ব আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ভ্যাট আইন কার্যকর করার দিকে নজর দিতে হবে।’
প্রসঙ্গত, বাজেটের আগে প্রস্তাবিত ১১টি বৈঠকের একটি সময়সূচি ও স্থান চূড়ান্ত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সূচি অনুযায়ী একই স্থানে এনজিও প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা হবে ৭ এপ্রিল।
প্রসঙ্গত, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটের আকার দুই লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। আর ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল দুই লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা।