Connecting You with the Truth

ইসির আর্থিক কার্যক্রমে নজরদারি!

EC-logoস্টাফ রিপোর্টার:
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের দিক থেকে স্বাধীন হলেও এখন থেকে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) যে কোনো ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি হিসাব স¤পর্কিত স্থায়ী কমিটি ইসির সব আর্থিক কর্মকাণ্ড নজরদারি করবে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে চারটি প্রকল্প ও থোক বরাদ্দ নিয়ে আর্থিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে ইসি। এর মধ্যে স্মার্টকার্ড সরবাহের জন্য আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) প্রকল্পটি সবচেয়ে বড়। বিশ্বব্যাংকের দেওয়া ঋণ নিয়ে এ প্রকল্পের অর্থনৈতিক আকার দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩৭৯ কোটি ১৯ লাখ টাকায়। এছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের জন্য হাতে নেওয়া হয়েছে রিজিওনাল সার্ভার স্টেশন ফর ইলেক্টোরাল ডাটাবেজ (সিএসএসইডি) প্রকল্প। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে, ৩৬২ কোটি ২০ লাখ টাকা। এদিকে, ইসির নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য চলমান রয়েছে ইলেকশন রিসোর্স সেন্টার (ইআরসি) প্রকল্প। এতে ব্যয় হবে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। আবার নির্বাচনী ব্যবস্থা শক্তিশালী করার জন্য হাতে নেওয়া হয়েছে এসইএমবি প্রকল্প। এ প্রকল্প থেকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ব্যয় নির্বাহ করা হয়। এর আকার হচ্ছে ১৪১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
অন্যদিকে, বিভিন্ন নির্বাচন স¤পন্ন করতে ও উন্নয়ন খাতে বাজেট বরাদ্দ রয়েছে যথাক্রমে ২১৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা ও ৫২৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে বর্তমানে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার কাজ নিয়ে এগুচ্ছে ইসি। ইসি সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠার পরে এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন বিগত কমিশনের সময়ে আর্থিক স্বাধীনতা লাভ করে ইসি। সে সময় থেকে ইসিকে আর সরকারের কাছ থেকে পাওয়া বরাদ্দকৃত অর্থ পুনর্বার অনুমোদন নিয়ে কাজ করতে হয় না। অর্থাৎ ২০০৯ সালের আগে যে কোনো বড় কাজ করতে গেলে অর্থ ছাড়ের জন্য ইসিকে ফের সরকারের অনুমোদন নিতে হতো। তবে কখনও ইসির করা ব্যয়ের ওপর নজরদারি করার হতো না বা জবাবদিহিতা নিশ্চিতের জন্য সংসদীয় কমিটি থেকে নির্দেশ দেওয়া হতো না।
এই প্রথম জবাবদিহিতা নিশ্চিতের জন্য কোনো নির্দেশনা এলো, যখন উপজেলা নির্বাচনে অস্বাভাবিক হারে ব্যয় বেড়ে গেছে। অন্যদিকে, প্রশিক্ষণের নামে হরিলুট চলছে বলে সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। একই সঙ্গে ঢিমেতালে চলছে প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি। ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম বরাবর সরকারি হিসাব স¤পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর স্বাক্ষরিত দেওয়া ওই নির্দেশনা থেকে দেখা যায়, নির্বাচন কমিশনকে ৫টি বিষয় নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- প্রতিটি ব্যয়ের ক্ষেত্রে আর্থিক বিধিবিধান যথাযথভাবে অনুসরণ নিশ্চিতকরণ, স্ব স্ব কার্যালয়ের নামে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, প্রতিটি ক্রয়ে স্বচ্ছতা ও সাশ্রয়ী ব্যয়ের মনোভাব প্রতিষ্ঠাকরণ, আর্থিক ব্যয়ের রেকর্ডপত্র নিরীক্ষা কার্য স¤পাদন না হওয়া পর্যন্ত যথাযথভাবে তা সংরক্ষণের পদক্ষেপ গ্রহণ ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের শৈথিল্য ও গাফিলতি বিবেচনা না করা। নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নের জন্য গত বৃহ¯পতিবার সব প্রকল্প পরিচালক, আঞ্চলিক, জেলা ও থানা নির্বাচন কর্মকর্তাকে আদেশও দিয়েছে ইসি। মহীউদ্দীন খান আলমগীর একটি আধাসরকারি পত্রের (ডিও লেটার) মাধ্যমে ইসি সচিবকে এ নির্দেশনা দিয়েছেন, যার স্মারক নম্বর-সহিসক/আধা.স/পত্র-০২(৭১)। এতে তিনি বলেছেন, সরকারের প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয়ের বা বিভাগের সচিব, সরকারী আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে মূখ্য হিসাব কর্মকর্তা বা প্রিন্সিপাল একাউন্টস অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এ কারণে সরকারের সচিবদের কর্মের স্বচ্ছতা, উন্নত ব্যবস্থাপনা, সাশ্রয়ী ব্যয় এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তারা (সচিবরা) এই কমিটির কাছে দায়বদ্ধ। নির্দেশনায় বরাদ্দকৃত অর্থ স্বচ্ছতার সঙ্গে শতভাগ বাস্তবায়ন অপরিহার্য বলে উল্লেখ করে স্থায়ী কমিটিকে সহায়তা করার কথাও বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে ইসির উপ-সচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, স্থায়ী কমিটি কর্তৃক এরূপ নজরদারির বিষয়টি আগে কখনো সামনে আসেনি। ইসির সব ব্যয়ের অডিট সব সময় হয়। কেন স্থায়ী কমিটি এরূপ নির্দেশনা দিয়েছে, তা বলা যাচ্ছে না। তবে এর মাধ্যমে ব্যয়ের বিষয়টি আরো সুরক্ষিত হবে।

Comments
Loading...