Connect with us

Highlights

ঈশ্বরগঞ্জে হেযবুত তওহীদ সদস্যদের বাড়িঘরে সশস্ত্র হামলা, আহত ১০, গুরুতর ৪

Published

on

বুধবার দুপুরে হেযবুত তওহীদের সদস্যদের বাড়িঘরে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে হামলা ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় হেযবুত তওহীদের দশ জন সদস্য আহত হয়। চারজনের অবস্থা গুরুতর। কয়েকদফা হামলার ফলে গোটা এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

জানা যায়, ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ থানাধীন উচাখিলা ইউনিয়নে অরাজনৈতিক আন্দোলন হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন থেকে একটি উগ্রবাদী চিহ্নিত ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠী অপপ্রচার গুজব প্রচার এবং উস্কানি দিয়ে আসছিল। এরা কখনও ইত্তেফাকুল ওলামা পরিষদ, কখনও তওহীদী জনতা, ঈমান আকিদা সংরক্ষণ পরিষদ ইত্যাদি নামে-বেনামে হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়ে আসছিল। এলাকার সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে অশান্ত করে তোলার জন্য তারা ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে একটি মিথ্যা হ্যান্ডবিল উচাখোলা বাজারে কিছু শিশু কিশোরদের হাতে দিয়ে এলাকায় ছড়িয়ে দেয়। হ্যান্ডবিলটিতে হেযবুত তওহীদের নামে কিছু ধর্মীয় স্পর্শকাতর কথা চালিয়ে দেওয়া হয় যা আদৌ হেযবুত তওহীদের বক্তব্য নয়। উচাখিলা বাজারে বিভিন্ন দোকানপাটের দেওয়ালে হ্যান্ডবিলটি পোস্টার হিসাবে লাগাতে থাকে।

এলাকায় এ বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। বিষয়টি গুরুতর বিবেচনায় হেযবুত তওহীদের সদস্যরা দ্রুত ঈশ্বরগঞ্জ থানায় অবগত করে এবং উক্ত ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করে একটি সাধারণ ডায়েরি করে। অভিযুক্তরা হচ্ছে মো. আলী আক্তার মুন্সী (৪৫), আব্দুস সাত্তার পীর (৬৫), মো. মকবুল হোসেন (৩৫) সঙ্গীয় ৩০/৩৫ জন। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুস্তাফিনুর রহমানকে বিষয়টির ভয়াবহতা কতদূর যেতে পারে তা বুঝিয়ে বলা হয়। এ ধরনের ষড়যন্ত্র করেই অতীতে দেশের বিভিন্ন স্থানে হেযবুত তওহীদের সদস্যদের উপর হামলা করা হয় ও পাঁচজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবে বলে আশ্বস্ত করে। কিন্তু ওরা কী ভয়াবহ ঘটনা ঘটাতে পারে পুলিশ সম্ভবত তা অনুধাবন করতে পারে নি।

গত মঙ্গলবার সাড়ে এগারোটায় দিকে ‘উচাখিলা পরিবার’ নামক একটি ফেসবুক গ্রুপে একটি ব্যানার পোস্ট করা হয় যাতে বুধবারে হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে একটি বিক্ষোভ মিছিলে যোগদানের জন্য আহ্বান করা হয়। ব্যানারটিতে আয়োজনকারী হিসাবে ‘ইত্তেফাকুল ওলামা, উচাখিলা’ এর নাম উল্লেখ করা হয়। থানায় বিষয়টি অবগত করা হলে থানা থেকে তাদেরকে মিছিল করতে নিষেধ করা হয় না। বলা হয় যে তারা শুধু শান্তিপূর্ণ মিছিল করবে, কোনো সমস্যা হবে না।

প্রকৃতপক্ষে এই সমাবেশটি ছিল হামলা করার প্রস্তুতিমূলক সমাবেশ। হামলাকারীরা নির্দিষ্ট সময়ে জড় হয়ে হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিতে থাকে এবং লোকদেরকে আক্রমণের জন্য চরমভাবে উত্তেজিত করতে থাকে। একটা পর্যায়ে জিডিতে উল্লেখিত ব্যক্তিদের নেতৃত্বে হেযবুত তওহীদ সদস্য হেলালুদ্দিনের বাড়ির দিকে মিছিল নিয়ে যেতে থাকে আর শ্লোগান দিতে থাকে- হেযবুত তওহীদের আস্তানা গুড়িয়ে দাও পুড়িয়ে দাও। মিছিলে প্রায় দুই থেকে আড়াইশো উগ্রবাদী যোগ দেয়। ঘটনাস্থলে পুলিশের একজন দারোগা উপস্থিত থাকলেও তাকে হামলাকারীরা পাত্তাই দেয় না।

এরই মধ্যে আক্রমণ শুরু হয়। আক্রমণে তারা রাম দা, কিরিচ, রড, লাঠি ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বাড়িতে অবস্থানরত হেযবুত তওহীদের নির্দোষ নিরপরাধ নিরস্ত্র ও সদস্যদের উপর নৃশংসভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে। উল্লেখ্য, হামলাটি সম্পূর্ণ বিনা উস্কানিতে করা হয়। এর পটভূমি রচনা করা হয় পনেরো দিন আগে থেকেই। হেযবুত তওহীদের সদস্যরা নিজেদের আত্মরক্ষার চেষ্টা করলেও অন্তত দশজন আহত হন। এর মধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর। তারা সবাই হাসপাতাল ভর্তি। তাদের প্রত্যেকের শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাত। পরবর্তীতে ধর্মব্যবসায়ীরা আরো কয়েকদফা হামলা চালায়। তারা বাড়িতে থাকা কয়েকটি মোটর সাইকেল ও আসবাবপত্র লুটপাট করে নিয়ে যায়। হেযবুত তওহীদের সদস্যরা নিরুপায় হয়ে ৯৯৯ নাম্বারে ফোন করলে অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স নিয়ে থানার ওসি ঘটনাস্থলে আসেন। কিন্তু ততক্ষণে যা ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে। অথচ সকালে ধর্মব্যবসায়ী উগ্রবাদী গোষ্ঠীকে বে-আইনী সমাবেশটি করতে না দিলেই এই ঘটনা তারা ঘটাতে পারত না। বর্তমানে তারা পুনরায় হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে সংঘটিত হয়ে হামলা চালানোর ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। উল্লেখ্য, ঈশ্বরগঞ্জের হেযবুত তওহীদ সভাপতি মো. নাজমুল ইসলামের বড় ভাই সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান। তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বর্তমান চেয়ারম্যান এ ঘটনাটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছেন বলে জানা যায়। এর প্রমাণ হচ্ছে, সাবেক চেয়ারম্যানের বাড়িতেও হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। বর্তমান চেয়ারম্যান ধর্মব্যবসায়ীদের উস্কানি ও প্রশ্রয় প্রদান করছেন।

উক্ত ঘটনা প্রসঙ্গে ময়মনসিংহ জেলা আমির হাবিবুর রহমান বলেন, ধর্মব্যবসায়ী উগ্রবাদী গোষ্ঠী সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে দীর্ঘদিন থেকে এই ঘটনা ঘটানোর পটভূমি রচনা করেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা যেভাবে এ আন্দোলনের সদস্যদের উপর বিনা উস্কানিতে হামলা চালায়, এখানেও তারা একই কাজ করেছে। মিথ্যা হ্যান্ডবিল বিতরণ, উস্কানিমূলক পোস্টারিং, ফেসবুকে উস্কানিমূলক প্রচারণা, দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বে-আইনী সমাবেশ এ সবকিছু কী ইঙ্গিত দেয় তা যে কোনো বিবেকবান মানুষ বুঝবে। কাজেই আমাদের দাবি হচ্ছে,

১. দ্রুত হামলাকারীদের সবাইকে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা হোক।
২. মিথ্যা হ্যান্ডবিলের রচয়িতাকে অবিলম্বে গ্রেফতার করা হোক।
৩. লুটপাট করা মোটর সাইকেল ও অন্যান্য মালামাল দ্রুত উদ্ধার করা হোক।
৪. উচাখিলার নির্দোষ নিরপরাধ আইন মান্যকারী সদস্যদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *