উত্তরাঞ্চলে চলছে আঞ্চলিক উৎসব ‘ভাদর কাটানি’
তেঁতুলিয়া প্রতিনিধি, পঞ্চগড়:
শ্রাবণ মাস শেষ, চলছে ভাদ্র। উত্তরাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী উৎসব ‘ভাদর কাটানি’র প্রস্ততি নিয়ে বাড়িতে গেছে পঞ্চগড়সহ উত্তরাঞ্চলের নববিবাহিতা বধূরা। এ উৎসবের রীতি অনুযায়ী ভাদ্র মাসের প্রথম দিন হতে সাতদিন পর্যন্ত স্বামীর মঙ্গল কামনায় কোনো নববধূ তার স্বামীর মুখ দর্শন করবে না।
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ‘ভাদর কাটানি’র কোনো ব্যাখ্যা না থাকলেও এ অঞ্চলের আদি প্রথা অনুযায়ী ভাদ্র মাসের প্রথম তারিখ থেকে শুরু হয় এ উৎসব। যুগ যুগ ধরে পালিত হয়ে আসছে এটি। এবার ভাদ্র মাসে শুরুর পূর্বেই ঈদ চলে যাওয়ায় ঈদ পরবর্তী আমেজ নিয়ে এ উৎসবকে নিয়ে গ্রামে-গঞ্জে শুরু হয়েছে নানা আয়োজন। সাজ সাজ রব পড়ে গেছে নতুন বিয়ে হওয়া বর এবং কনে পক্ষের মধ্যে। উদ্দেশ্য, ‘নববিবাহিতা বধূ বাবার বাড়িতে নাইয়র যাবে।’ গত বছরের আশ্বিন মাস থেকে এ বছরের শ্রাবণ মাস পর্যন্ত যতো ছেলে মেয়ের বিয়ে হয়েছে তাদের নিয়েই এ আয়োজন। তাই শ্রাবণ মাসের দু’একদিন বাকি থাকতেই মেয়েপক্ষের লোকজন অনেকটা ধুমধাম করে মেয়েকে স্বামীর বাড়ি থেকে নিয়ে আসেন। স্থানীয় লোকজনের বিশ্বাস- বিবাহিত জীবনের প্রথম ভাদ্র মাসের এক থেকে সাত তারিখ পর্যন্ত সাতদিন স্বামীর মুখ দেখলে অমঙ্গল হবে, চোখ অন্ধ হয়ে যাবে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকবে অর্থাৎ তাদের দাম্পত্য জীবন সুখের হবে না। তাই নবদম্পত্তিদের এ মাসে ন্যূনতম সাত দিন দেখা সাক্ষাৎ বন্ধ রাখাই এ অঞ্চলের রীতি হয়ে উঠেছে। তাছাড়া সাধারণত এ মাসে নতুন করে কোনো বিয়ের আয়োজনও করা হয় না। প্রচলিত এ প্রথাটি যুগ যুগ ধরে এ অঞ্চলে হিন্দু-মোসলেমদের মধ্যে চলে আসছে।
নিয়ম অনুযায়ী, কনেপক্ষ শ্রাবণ মাসের দু’একদিন বাকি থাকতেই বরপক্ষের বাড়িতে সাধ্যমতো বিভিন্ন রকমের ফল, মিষ্টি, পায়েসসহ নানা রকম পিঠা-পুলি নিয়ে যায়। বরপক্ষও সাধ্যমতো তাদের আপ্যায়ন করে। বাড়িতে কনেপক্ষের লোকজন আসায় চারদিকে একটা উৎসবমুখর পরিবেশ লক্ষ করা যায়। কনেপক্ষ থেকে নিয়ে আসা বিভিন্ন খাবার বরপক্ষ তাদের আত্বীয়স্বজন ছাড়াও প্রতিবেশীদের মধ্যে বিতরণ করে। ভাদর কাটানি মুসলিম সম্প্রদায়ের কোনো ধর্মীয় বিষয় না হলেও এ অঞ্চলে প্রথাটি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। এখানে এক সময় সম্ভ্রান্ত হিন্দু সম্প্রদায় বসবাস করতো। তারা এ উৎসবকে জাঁকজমকভাবে পালন করতো। তাদের এ রেওয়াজ ক্রমান্বয়ে এ অঞ্চলের মানুুষকে প্রভাবিত করার ফলশ্র“তিতে উৎসবটি এ অঞ্চলে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সাংস্কৃতির একটি অংশ হয়ে দাঁড়ায়।