Connecting You with the Truth

এনামুলের চ্যালেঞ্জের বিপরীতে নিজের ২০৭, স্ত্রীর ৪৯ কোটি টাকার সন্ধানপ্রাপ্তী

স্টাফ রিপোর্টার:
‘অবৈধ সম্পদ নেই’ দাবি করে চ্যালেঞ্জ ছুড়লেও রাজশাহী-৪ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য এনামুল হকের ২০৭ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ খুঁজে পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এছাড়া তার স্ত্রী তহুরা হকের বিরুদ্ধে ৪৯ কোটি টাকা সম্পদ গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে সংস্থাটির অনুসন্ধান প্রতিবেদনে। স্বামী-স্ত্রী দু’জনের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ চেয়ে ইতোমধ্যে প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছেন দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা। শিগগিরই প্রতিবেদনটি কমিশনে দাখিল হবে বলে জানিয়েছেন দুদকের একটি দায়িত্বশীল সূত্র। গত সোমবার দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এনামুল হক দুদককে চ্যালেঞ্জ করে সাংবাদিকদের জানান, তার কোনো অবৈধ সম্পদ নেই। গত পাঁচ বছরে তার কোন অস্বাভাবিক সম্পদবৃদ্ধি হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি। অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এনামুল হকের ‘নেট প্রফিট আফটার ট্যাক্স’ হয়েছে ৮৪ লাখ টাকা। আর তিনি আয়কর দিয়েছেন ৮৭ লাখ টাকা, যা বাস্তবসম্মত নয়।
এতে আরও উল্লেখ রয়েছে, এনামুল হক ও তহুরা হক সম্পদ গোপন এবং অবৈধভাবে সম্পদ উপার্জন করেছেন যা দুদক আইন ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় অপরাধ। দুদক আইনে ২৬(২) ধারায় অপরাধ প্রমাণিত হলে ৩ বছর এবং ২৭(১) ধারায় অপরাধ প্রমাণিত হলে ৭ বছর কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের উপ-পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা যতন কুমার রায় বলেন, ‘প্রতিবেদন প্রায় প্রস্তুত। শিগগিরই কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করবো। কমিশন যাছাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেবে।’ অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এনামুল হক ও তার স্ত্রী তহুরা হক সম্মিলিতভাবে মাত্র ৮ কোটি ৩৪ লাখ ৬৫ হাজার ৫০০ টাকার সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। কৌশলে এড়িয়ে যান তার মালিকানাধীন লিমিটেড কোম্পানি, প্রোপ্রাইটারশিপ এবং পার্টনারশিপে থাকা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের তথ্য।
সালেহা-ইমারত কোল্ড স্টোরেজ, এনা-ডুঙ্গা লিজিং, নর্দার্ন পাওয়ার সল্যুশন লি, এনা ইন্টারন্যাশনাল, এনা কারস, এনা এনার্জি লিমিটেডসহ অন্য প্রতিষ্ঠানে তার শেয়ার বা মালিকানার বিষয়টি বিবরণীতে উল্লেখই করেননি তিনি। হলফনামা থেকে জানা যায়, দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচনী হলফনামায় ২০০৮ সালে শুধু বেতন-ভাতা থেকে তার বছরে আয় ছিল ২০ লাখ টাকা। পাঁচ বছর পরে এখন কৃষি, বাড়ি ও দোকান ভাড়া, ব্যবসা ও পেশা থেকে বছরে তার আয় হয় ৫০ লাখ টাকা। পাঁচ বছর আগে তার ওপর নির্ভরশীলদের সাত লাখ ৫১ হাজার ৬০০ টাকা বার্ষিক আয় থাকলেও এবারের হলফনামায় নির্ভরশীলদের কোনো আয়ের উৎস নেই। তার নিজের, স্ত্রীর ও নির্ভরশীলদের মোট ১৬ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার সাধারণ শেয়ার থেকে কোনো আয় নেই। পাঁচ বছর আগে তার স্ত্রীর থাকা দুই কোটি ৮৯ লাখ ৬৩ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে আট কোটি ৩৪ লাখ ৬৫ হাজার ৫০০ টাকায়। এর মধ্যে এবার নিজের হাতে নগদ রয়েছে ১০ লাখ টাকা ও স্ত্রীর হাতে পাঁচ লাখ টাকা। নিজ নামে ব্যাংকে আছে আট লাখ ৫৮ হাজার ৯১ টাকা ও স্ত্রীর নামে এক লাখ ৫৫ হাজার ৫০০ টাকা। গত ২২ জানুয়ারি কমিশন সভায় বিগত মহাজোট সরকারের সাত মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এনামুল হক ছাড়া অপর ছয়জন হলেন- সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান তালুকদার, কক্সবাজার-৪ আসনের এমপি আবদুর রহমান বদি, ঢাকা-১২ আসনের এমপি আসলামুল হক এবং সাতক্ষীরা-২ আসনের এমপি এম এ জব্বার। এর মধ্যে সম্প্রতি আবদুল মান্নান খান, মাহবুবুর রহমান এবং আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে রাজধানীর রমনা মডেল থানায় মামলা করেছে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি দমন সংস্থাটি। তবে এনামুল হককে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয় দুদক।

Comments
Loading...