Connect with us

Highlights

কলারোয়ায় বিলুপ্তির পথে ইতালি নগরের সুবিখ্যাত টালি শিল্প

Avatar photo

Published

on

দেশজুড়ে ডেস্ক:
সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ না পাওয়া, আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টিতে সরকারের সহযোগিতার অভাব এবং কতিপয় ব্যবসায়ীর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে সাতক্ষীরার কলারোয়ার সুবিখ্যাত টালি শিল্প। এদিকে, আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার করতে না পারা ও উৎপাদন খরচ বাড়াসহ নানা সমস্যা রয়েছে। ফলে কলারোয়া উপজেলার মুরারিকাটি ও শ্রীপতিপুর এলাকায় ৪১টি কারখানার মধ্যে সচল আছে মাত্র ১৫টি। বর্তমানে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় চার হাজার শ্রমিকের অবস্থা করুণ। ভালো নেই এখানকার টালি শিল্পের মালিক ও শ্রমিকরা।

কলারোয়া টালি কারখানার মালিক ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি ও কলারোয়া ক্লে টাইলসের মালিক গোষ্ট চন্দ্র পাল জানান, পূর্ব পুরুষদের পেশা অনুযায়ী এখানকার পালরা প্রতিমা তৈরি করতেন। আর এই প্রতিমা তৈরি করে মুরারিকাটি ও শ্রীপতিপুর এলাকার পালরা সারা দেশে খ্যাতি অর্জন করেন। শুধু তাই নয়, পালপাড়া বধ্যভূমির কারণে এখানকার ঐতিহ্য রয়েছে। ২০০০ সাল থেকে এখানে টালি নির্মাণ শুরু হয়। ২০০২ সালে ইটালির ব্যবসায়ী রাফাইলো আলদো আসেন বাংলাদেশে। এরপর থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে নারায়ণগঞ্জে টালি তৈরির কাজ শুরু করেন তিনি। কিন্তু ওই এলাকার তৈরি টালি পছন্দসই না হওয়ায় তিনি তার দেশে ফিরে যান। কিন্তু ওই কোম্পানির ম্যানেজার রুহুল আমিন দেশের বিভিন্ন স্থানে পোড়া মাটির টালি তৈরির জন্য মাটি খুঁজতে থাকেন। পরে কলারোয়ার কুমারপাড়ায় এসে পেয়ে যান যুৎসই মাটি।

গোষ্ঠ চন্দ্র পালি আরো বলেন, এক কন্টেইনারে ১৫ হাজার পিস টালি বহন করা যায়। ইটালিতে একসময় প্রতি মাসে ৩০ কন্টেইনার টালি যেত। বর্তমানে ৫-৬ কন্টেইনার টালি যায়। বর্তমানে মালিক সমিতির সদস্য শ্রীকান্ত পাল, তৈলাজ পাল, মদন পাল, শঙ্কর পাল, সন্তোষ পালসহ ১৫-১৬ জন এবং লালপাল, ময়না পাল, জগবন্ধু পাল, স্বপন পাল, মোসলেম উদ্দীন, পরিতোষ দাসসহ আরো ২৫ থেকে ২৬ জন তাদের কারখানা বন্ধ করেছেন। টালি তৈরির সঙ্গে যুক্তরা জানান, কারার এক্সপোর্ট ইমপোর্ট প্রাইভেট লিমিটেডের মালিক রুহুল আমিন কলারোয়া কুমারদের পোড়া মাটির তৈরি টালির সম্ভাবনার পথ দেখান। শুরু হলো টালি তৈরির কাজ। এরপর প্রথমবার পাঁচটি কারখানার উৎপাদিত টালি ইতালিতে রপ্তানি শুরু হয়। এ কারণে এলাকাকে অনেকেই ‘ইতালিনগর’ বলে থাকেন। দু’বছর যেতে না যেতেই এখানকার উৎপাদিত টালি নজর কাড়ে জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ীদের। কলারোয়ার মাটি পৌঁছে যায় ইউরোপ-আফ্রিকা-পশ্চিম এশিয়ায়। জাহাজে করে রপ্তানি শুরু হয় কলারোয়ার টালি। বিনিময়ে আসতে থাকে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা। চাহিদা সঙ্গে সঙ্গে এখানকার টালি কারখানার সংখ্যাও বাড়ে। এসব কারখানার কাজ পান প্রায় চার হাজার শ্রমিক। ২০১০ সাল পর্যন্ত টালি শিল্প মালিকদের সুদিন ছিল। আন্তর্জাতিক বাজারে বেশ ভালো দামেই বিক্রয় হতো এখানে উৎপাদিত টালি। প্রতিটি টালি ৩০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন উৎপাদকরা। এতে করে প্রতি বছর এ শিল্প থেকে ৩০০ কোটিরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হতো। কিন্তু ২০১০ সালের পর থেকে এ শিল্পে ভাঁটা পড়ে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কলারোয়ায় উৎপাদিত প্রতি স্কয়ার ফুট টালির বাজার মূল্য দুই থেকে ১০০ টাকা, রেকট্যাংগুলোর টালি তিন থেকে ৬০ টাকা, স্টেপ টালি দশ থেকে ৩৫ টাকা, বেন টালি ১৫ থেকে ২৫ টাকা, টেরাকোটা টালি ছয় থেকে ৩০ টাকা, লিস্ট টালি তিন থেকে ১০ টাকা দরে বিক্রি হয়। ১০-১২ ধরনের ফ্যাশনেবল টালি তৈরি হয় এখানে। মেঝে, দেয়াল, ছাদে ব্যবহৃত হয় এসব টালি। দেশি সমঝদার-শৌখিন মানুষদের কাছে কলারোয়ার টালি খুবই পছন্দের। টালি কারখানা মালিক সমিতির সদস্যরা জানান, প্রতি বছর নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হয় টালি মৌসুম। ৩১ মে পর্যন্ত চলে উৎপাদন। প্রতি মৌসুমে সর্বোচ্চ ৩০ বার পন (চুল্লি) জ¦ালানো যায়। প্রতি পনে ছোট আকারের দশ হাজার থেকে ১২ হাজার টালি এবং বড় আকারের আট হাজার থেকে দশ হাজার টালি উৎপাদন করা হয়। এতে করে প্রতি ‘পোনে’ খরচ হয় প্রায় দেড় লাখ টাকা। ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করার পর তবেই লাভের মুখ দেখা যায়।

টালি কারখানার মালিকরা জানান, এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন প্রায় চার হাজার শ্রমিক। শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা।

টালি কারখানা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ ইমাদুল ইসলাম ও সদস্য আবদুর রব মোল্যা জানান, তারাসহ বেশ কয়েকজন এ ব্যবসাটা ধরে রেখেছেন। প্রতি কন্টেইনার টালির উৎপাদন খরচ প্রায় এক লাখ টাকা। ইউরোপের বাজারে যার দাম দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। বছরে প্রায় ৪০০ কন্টেইনার টালি রপ্তানি করে শত শত কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। কিন্তু অসম প্রতিযোগিতা এ শিল্পকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। একদিন এ শিল্পের সুদিন ছিল। আজ দুর্দিন। ব্যবসায়ীরা সুদিন ফিরিয়ে আনতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও নীতিমালা তৈরির দাবি জানান।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Highlights

মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করে পুরস্কার পেলেন রাশিয়ান পাইলটরা

Avatar photo

Published

on

কৃষ্ণ সাগরে মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করা ফাইটার পাইলটদের পুরস্কৃত করেছে রাশিয়া। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সের্গেই শোইগু দুটি রাশিয়ান এসইউ-২৭ যুদ্ধবিমানের পাইলটদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানায় বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) একটি রাশিয়ান এসইউ-২৭ যুদ্ধবিমানের সঙ্গে সংঘর্ষের পর মার্কিন এমকিউ-৯ রিপার ড্রোনটি কৃষ্ণ সাগরে বিধ্বস্ত হয়।

মার্কিন সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ড্রোনটি আন্তর্জাতিক আকাশসীমায় একটি রুটিন মিশনে ছিল। রাশিয়ার দুটি যুদ্ধবিমান তা আটকানোর চেষ্টা করে। রাশিয়ার একটি যুদ্ধবিমানের আঘাতে ড্রোনটি অকেজো হয়ে পড়ে। পাইলটরা যারা দূর থেকে ড্রোনটি পরিচালনা করেছিল তারা তখন এটিকে কৃষ্ণ সাগরে ফেলে দিতে বাধ্য হয়।

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর মঙ্গলবারের সংঘর্ষটি ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে প্রথম সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ। যদিও মস্কো মার্কিন ড্রোন ধ্বংস করার দাবি অস্বীকার করেছে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কৃষ্ণ সাগরে মার্কিন ড্রোন দেখে তারা ফাইটার জেট পাঠিয়েছিল। তবে ড্রোনের সঙ্গে এর সংঘর্ষ হয়নি। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ড্রোনটি বিধ্বস্ত হয়।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে, যুদ্ধবিমানের পাইলটদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনার বিষয়ে তাদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাশিয়ান যুদ্ধবিমান ও ড্রোনের মধ্যে কোনো সংঘর্ষ হয়নি।

মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, মস্কোর স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এমকিউ-রিপার ড্রোনটি প্রবল বেগে চলার সময় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং পানিতে পড়ে যায়। ড্রোনটি ট্রান্সপন্ডার বন্ধ রেখে উড়ছিল। যা ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে রুশ আকাশসীমায় রাশিয়ার আরোপিত নিষেধাজ্ঞার লঙ্ঘন।

তবে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, রাশিয়ান যুদ্ধবিমান ড্রোনের কাছে এসে এটিকে হয়রানি করে এবং এতে জ্বালানি ছিটিয়ে দেয়। ৩০ থেকে ৪০ মিনিট ধরে এটিকে আটকানোর চেষ্টা করার পর একটি যুদ্ধবিমান দ্বারা ড্রোনটির প্রপেলারটি কেটে যায় এবং এটি সমুদ্রে পড়ে যায়।

বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) মার্কিন সেনাবাহিনী এই এনকাউন্টারের ৪০ সেকেন্ডের সম্পাদিত ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে। এতে দেখা গেছে, রাশিয়ার যুদ্ধবিমান ড্রোনের কাছে আসছে। এ সময় এটি ড্রোনটির উপর জ্বালানি ছিটিয়ে দিচ্ছে। এরপর ড্রোনটির প্রপেলার নষ্ট হয়ে যায়। এই ঘটনাকে রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান আগ্রাসী আচরণের বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন একজন শীর্ষ মার্কিন জেনারেল।

Continue Reading

Highlights

জোড়া খুনের বিচারের দাবিতে নোয়াখালীতে হেযবুত তওহীদের মানববন্ধন-বিক্ষোভ

Avatar photo

Published

on

নোয়াখালী প্রতিনিধি:
নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে মিথ্যা গুজব রটিয়ে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে হেযবুত তওহীদের দুই সদস্যকে নৃশংসভাবে হত্যা, বাড়িঘর লুটপাট ও ধ্বংসযজ্ঞের সাথে জড়িতদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে নোয়াখালী জেলা হেযবুত তওহীদ।

মঙ্গলবার সকাল ১০টায় নোয়াখালী জেলা প্রেসক্লাবের সামনে হেযবুত তওহীদের নেতাকর্মীরা এ বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন। এ সময় তারা সোনাইমুড়ির পোরকরায় অবস্থিত হেযবুত তওহীদের বিভিন্ন কৃষিভিত্তিক, শিল্পভিত্তিক ও শিক্ষামূলক উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানান।

বক্তাগণ অভিযোগ করে বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের ৭ বছর পেরিয়ে গেলেও অপরাধীদের আজও বিচার হয়নি। হামলার ঘটনায় জড়িত থাকা বহু আসামী স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলোর আশ্রয়ে নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াচ্ছে কিন্তু পুলিশ তাদেরকে গ্রেপ্তার করছে না। আর সেই সুযোগ নিয়ে ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠী ও কুচক্রী মহল পুনরায় হেযবুত তওহীদের এমামের বাড়িতে হামলার ষড়যন্ত্র করছে।’

অনুষ্ঠানে সোনাইমুড়ীতে উগ্রবাদীদের হাতে নির্মমভাবে খুন হওয়া ইব্রাহীম রুবেলের স্ত্রী হাজেরা আক্তার এর বক্তব্যে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। মানববন্ধনে হাজেরা আক্তার বলেন, মসজিদ নির্মাণের মত পবিত্র কাজে স্বেচ্ছাশ্রম দিতে গিয়ে নির্মমভাবে খুন হয় আমার স্বামী। এই উগ্রবাদী ধর্মব্যবসায়ীরা প্রচার করতে থাকে যে, হেযবুত তওহীদ খ্রিস্টান, তারা গ্রামে একটি গির্জা নির্মাণ করছে। এসব গুজব ছড়িয়ে ঘটনার দিন বিভিন্ন কওমি মাদ্রাসা থেকে ছাত্রদের নিয়ে এসে ‘খ্রিস্টান মারো, গির্জা ভাঙো’ স্লোগান দিয়ে তারা একযোগে হামলা চালায়। তারা আমার স্বামীর হাত পায়ের রগ কাটে, দুই চোখ উপড়ে ফেলে, পরে গলাকেটে আগুনে পুড়িয়ে পৈশাচিকভাবে হত্যা করে। কি দোষ ছিল আমার স্বামীর? আমি কেন বিচার পাব না? কেন বিচারের দাবিতে আমাকে রাস্তায়-রাস্তায়, দ্বারে-দ্বারে ঘুরতে হবে? আর কতকাল ধর্মের মুখোষধারী, ধর্মব্যবসায়ী গুজব-সন্ত্রাসীদের এভাবে প্রশ্রয় দিয়ে যাওয়া হবে? আমি এর জবাব চাই, আমার স্বামীর খুনীদের বিচার চাই।

মানববন্ধন শেষে খোকন ও রুবেলের হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে এবং উগ্রতা, ধর্মব্যবসা, ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এসময় কেন্দ্রীয় সহকারী সাহিত্য সম্পাদক রাকিবুল হাসান, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি মো. নিজাম উদ্দিন, নোয়াখালী জেলা সভাপতি মো. গোলাম কবির প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

উল্লেখ্য, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার পোরকরা গ্রামে মসজিদ নির্মাণকে কেন্দ্র করে ২০১৬ সালের ১৪ মার্চ সোনাইমুড়ি উপজেলার পোরকরা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এদিন ধর্ম উন্মাদনা সৃষ্টি করে মানবতার কল্যানে নিয়োজিত অরাজনৈতিক অন্দোলন হেযবুত তওহীদের ২ সদস্যকে নৃশংসভাবে হত্যা, বাড়ী-ঘর লুটপাট ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায় উগ্র সন্ত্রাসীরা।

Continue Reading

Highlights

হেযবুত তওহীদের ঢাকা বিভাগীয় কর্মী সম্মেলনে ৬ দফা দাবি উত্থাপন

Avatar photo

Published

on

নিজস্ব প্রতিবেদক:
অরাজনৈতিক আন্দোলন হেযবুত তওহীদের ঢাকা বিভাগীয় কর্মী সম্মেলনে ৬ দফা দাবি জানিয়েছেন হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। হেযবুত তওহীদের এমাম সরকারের প্রতি ৬ দফা দাবি জানিয়ে বলেন, (১) হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত যে সমস্ত আক্রমণ হয়েছে, সে সমস্ত অভিযোগগুলোকে আমলে নিয়ে আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করা হোক। (২) বিভিন্ন ওয়াজ-মাহফিলসহ ধর্মীয় অঙ্গনকে ব্যবহার করে যে সমস্ত উগ্রবাদী বক্তা পরিকল্পিতভাবে হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে উগ্রবাদ ছড়াচ্ছে, হুমকি দিচ্ছে, মিথ্যাচার করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিচার করতে হবে। (৩) ফেসবুক, ইউটিউবসহ সকল সোশ্যাল মিডিয়াতে আসল অথবা ফেইক আইডি ব্যবহার করে হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচারমূলক কন্টেন্ট প্রচারকারী, হত্যার হুমকি প্রদানকারী, গুজব রটিয়ে, মিথ্যা ফতোয়া প্রদান করে ধর্মান্ধ মানুষকে উস্কানি প্রদানকারীদের পরিচয় ও অবস্থান চিহ্নিত করে আইসিটি আইনে বিচারের আওতায় আনতে হবে। (৪) হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে ইতঃপূর্বে যে সমস্ত মিথ্যা মামলা করা হয়েছে, সে সমস্ত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। (৫) হেযবুত তওহীদ যেন নির্বিঘ্নে সারাদেশে সভা-সমাবেশ করে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে পারে সেজন্য স্থানীয় প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা অবিলম্বে প্রদান করতে হবে। (৬) সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-ধর্মব্যবসা-সাম্প্রদায়িকতা-মাদক, অপরাজনীতি ইত্যাদির বিরুদ্ধে আদর্শিক লড়াইয়ের জন্য ইসলামের প্রকৃত ও অকাট্য ব্যাখ্যা সংবলিত যে শক্তিশালী আদর্শের প্রস্তাব করা হয়েছে তা দেশ জাতির কল্যাণে বিবেচনা করার জন্য সরকার ও রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারক মহলের কাছে আহ্বান জানান তিনি।

শনিবার (আজ ১১ মার্চ ২০২৩) রাজধানীর গুলিস্তানে কাজী বশির মিলনায়তন প্রাঙ্গণে এক বর্ণাঢ্য আয়োজনে ‘উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে ও উগ্রবাদ মোকাবেলায় করণীয়’ শীর্ষক এ কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব দাবি উত্থাপন করেন তিনি। অনুষ্ঠানে ঢাকা ও এর আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক স্বতঃস্ফূর্তভাবে উপস্থিত হন। কিছুক্ষণের মধ্যেই সমগ্র ময়দান অতিথিদের আগমনে মুখর হয়ে ওঠে।

হেযবুত তওহীদের ঢাকা বিভাগীয় সভাপতি ডা. মাহবুব আলম মাহফুজের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- হেযবুত তওহীদের উপদেষ্টামণ্ডলীর প্রধান খাদিজা খাতুন, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক সম্পাদক উম্মুত তিজান মাখদুমা পন্নী, নারী ও শিল্প-বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের সভাপতি মো. মশিউর রহমান। অনুষ্ঠানে পাবনায় উগ্রবাদীদের হামলায় নিহত শহীদ সুজনের ভাই মো. ইয়াকুব মণ্ডল শহীদ সুজনের স্মৃতিচারণ করলে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এরআগে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন রব্বানী।

এদিন সকাল ৯টায় পবিত্র কোর’আন থেকে তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। এরপর একে একে শুভেচ্ছা বক্তব্যে হেযবুত তওহীদের বিভাগীয় আমিরগণ উপস্থিত সদস্যদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন। তাদের বক্তব্যে হেযবুত তওহীদের সুদীর্ঘ পথচলার বিপ্লবী ঘটনাপ্রবাহ, ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণি কর্তৃক হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের নিন্দা ও জবাব, অনলাইন-অফলাইনে হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে হুমকির প্রতিবাদ এবং জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের স্বর উঠে আসে।

মূখ্য আলোচকের বক্তব্যে হেযবুত তওহীদের এমাম বলেন, “একাত্তরে লাখো প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীন হওয়া প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশকে নিয়ে আজকে গভীর চক্রান্ত চলছে। পশ্চিমাদের অনুকরণে তৈরি হওয়া পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিক, সেক্যুলার আদর্শনির্ভর রাজনৈতিক দলগুলোর হানাহানি, সংঘাত, অসুস্থ প্রতিযোগিতা দেশকে শেষ করে দিচ্ছে। এদিকে পবিত্র ধর্ম ইসলামকে আশ্রয় করে তৈরি হওয়া বিভিন্ন দল-উপদল নিজেদের মধ্যে হানাহানি-রক্তারক্তিতে লিপ্ত। কয়েকদিন পরপর একেকটা ইস্যু সৃষ্টি করে দেওয়া হচ্ছে। সেইসব ইস্যুকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারের জন্য হামলা, জ্বালাও পোড়াও ইত্যাদি ঘটনা নিত্য ঘটে চলেছে। এমনি একটি পরিস্থিতিতে সত্যের মশাল নিয়ে জীবন ও সম্পদের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে হেযবুত তওহীদ।”

হেযবুত তওহীদের বক্তব্য স্পষ্ট, দ্ব্যার্থহীন, অসঙ্গতিমুক্ত উল্লেখ করে তিনি বলেন, “হেযবুত তওহীদের বক্তব্যকে এক শ্রেণির উগ্রবাদী, সাম্প্রদায়িক ধর্মব্যবসায়ী জনগণের কাছে পরিকল্পিতভাবে ভুলভাবে উপস্থাপন করছে। ফলে আল্লাহর সত্যদীন প্রতিষ্ঠাকামী এই আন্দোলনের নিরপরাধ, নির্দোষ, আইন মান্যকারী সদস্যরা আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে, বাড়িঘর আক্রান্ত হচ্ছে। তাদের মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে।”

হেযবুত তওহীদের মূল বক্তব্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “হেযবুত তওহীদ তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সমগ্র মানবজাতিকে প্রকৃত ইসলামের পথে আহ্বান করছে। সকল অন্যায়-অশান্তি, অবিচার, মারামারি, হানাহানি, অনৈক্য থেকে বের হয়ে ঐক্য, শান্তি ও ন্যায়ের পথে সকলকে একতাবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাই। আজ যে মহাসঙ্কটের মুখে মানবজাতি পতিত তা থেকে বের হয়ে আসতে আল্লাহর সার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। এ কাজ শুধু আমাদের একার কাজ নয়। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষেরই আজ একই কাজ, একই দায়িত্ব। তাই সবার প্রতি আহ্বান থাকবে, আপনারা আসুন; আমাদের হাতে হাত রেখে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মানবতার কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করি। যদি আমাদের সাথে ঐক্যবদ্ধ না হন তাহলে অন্তত অপপ্রচার, প্রপাগান্ডা করবেন না।”

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন- ময়মনসিংহ বিভাগীয় সভাপতি এনামুল হক বাপ্পা, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি নিজাম উদ্দিন, বরিশাল বিভাগীয় সভাপতি আল-আমিন সবুজ, খুলনা (অঞ্চল-১) সভাপতি মোতালিব খান, খুলনা (অঞ্চল-২) বিভাগীয় সভাপতি শামসুজ্জামান মিলন, সিলেট বিভাগীয় সভাপতি আলী হোসেন, ঢাকা মহানগর প্রচার সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান টিটু, সাংগঠনিক সম্পাদক মেসবাউল ইসলাম প্রমুখ।

মঞ্চে অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন- হেযবুত তওহীদের সাহিত্য সম্পাদক রিয়াদুল হাসান, ঢাকা বিভাগীয় নারী বিষয়ক সম্পাদক তাসলিমা ইসলাম, ঢাকা জেলা সভাপতি ইউনুস মিয়া, বৃহত্তর মিরপুরের সভাপতি আব্দুল হক বাবুল, বৃহত্তর যাত্রাবাড়ীর সভাপতি ওলিউল্লাহ, সাভার থানা সভাপতি সোহেল তালুকদার প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন হেযবুত তওহীদের তথ্য সম্পাদক এস এম সামসুল হুদা ও শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক উপকমিটির সম্পাদক শাহনেওয়াজ খান রিপন।

 

 

Continue Reading