কায়রোয় যুদ্ধবিরতি আলোচনা পণ্ড, বোমা হামলা শুরু
কায়রোয় চলমান যুদ্ধবিরতি বিষয়ক আলোচনা এড়িয়ে ইসরাইলি যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ইহুদিবাদী সেনারা আবারও গাযায় তাদের আগ্রাসন শুরু করেছে।
গতকাল বিকেলেই তারা চব্বিশ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে পূর্ব গাজার যেইতুন এবং গাজার উত্তরাঞ্চলীয় বেইত লাহিয়ায় বোমা হামলা চালিয়েছে। বার্তা সংস্থাগুলো জানিয়েছে কায়রোয় ফিলিস্তিনী পক্ষের সাথে ইসরাইলের যেসব আলোচক পরোক্ষভাবে আলোচনা করছিল, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গতকাল তাদেরকে আলোচনা বন্ধ করে অধিকৃত ফিলিস্তিনে ফিরে যেতে বলেছে। ইসরাইলিদের আচরণ থেকে সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে তারা আসলে যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে আস্থাহীনতায় ভুগছে। আলোচনা ত্যাগ করার ঘটনায় ইসরাইল ফিলিস্তিনীদের ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে। হামাস মুখপাত্র সামি আবু জুহরি গতকাল বলেছেন যুদ্ধবিরতি আলোচনায় অচলাবস্থা সৃষ্টির জন্য ইসরাইল দায়ী। তারা আসলে সময়ক্ষেপন করার জন্য আলোচনায় বসেছে কোনোরকম সমঝোতা বিশেষ করে যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে তাদের সদিচ্ছা ছিল না।
কায়রোয় অনুষ্ঠিত যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত আলোচনায় ফিলিস্তিনী পক্ষের প্রধান আলোচক এজাম আল আহমাদও বলেছেন, ইসরাইলিদের আলোচনা ত্যাগ করার ঘটনা প্রমাণ করছে এই আলোচনাকে ভণ্ডুল করে দেওয়ার বিষয়টি তাদের পূর্বপরিকল্পিত। তিনি বলেন আমরা মিশরীয়দের প্রস্তাব দিয়েছি গাজার ওপর থেকে স্থল এবং সামুদ্রিক অবরোধ তুলে নিতে হবে। প্রকৃতপক্ষে নেতানিয়াহু আলোচনা যেমন এগিয়ে নিতে চায় না, তেমনি চূড়ান্ত কোনো চুক্তি হোক-সেটাও চায় না।
এজাম আহমাদ আরও বলেন, গাজায় গতকালের ইসরাইলি হামলা থেকেই বোঝা যায় পরিস্থিতি স্থিতিশীল ও শান্ত হোক সেটা তারা চায় না বরং তারা চায় জোর করে তাদের শর্তগুলো ফিলিস্তিনী এবং মিশরীয় পক্ষের ওপর চাপিয়ে দিতে। এমন শর্ত তারা জুড়ে দিচ্ছে, যুদ্ধবিরতি আলোচনার সাথে যেগুলোর কোনো সম্পর্কই নেই। ইসরাইল যে বারবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে তা থেকেই অনুমান করা যায় তারা যুদ্ধবিরতিকেও নিজেদের আগ্রাসী লক্ষ্য বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগাতে চায়। কীভাবে পুনরায় গাজার ওপর হামলা শুরু করা যায় সেই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিল তারা। এগুলো করে তারা আসলে চায় গাজায় তাদের মারাত্মক ব্যর্থতাকে ঢাকা দিতে।
ইসরাইল শর্ত দিচ্ছে ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসকে নিরস্ত্র করতে হবে। এরকম শর্তই প্রমাণ করে তারা যেই লক্ষ্য নিয়ে গাজায় আগ্রাসন চালিয়েছিল সেই লক্ষ্য বাস্তবায়ন হয় নি।
পক্ষান্তরে ফিলিস্তিনী পক্ষের শর্তগুলো যুদ্ধবিরতির সাথে পুরোপুরি সংশ্লিষ্ট। তাদের দেওয়া শর্তগুলোর মধ্যে ছিল: অনতিবিলম্বে ইসরাইলি হামলা বন্ধ করতে হবে। গাজার ওপর শত্রুতাপূর্ণ সকল পদক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। গাজার ওপর থেকে অবরোধ তুলে নিতে হবে। ফিলিস্তিনী বন্দিদেরকে মুক্তি দিতে হবে। ফিলিস্তিনীদের সকল শর্তই বাস্তবসম্মত এবং যুক্তিযুক্ত।
ইসরাইলের দেওয়া শর্ত এবং ফিলিস্তিনের দেওয়া শর্তগুলোকে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করলেই যাবে, গাজা সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক মহলের চেষ্টার প্রতি ফিলিস্তিন যথেষ্ট আন্তরিক। সে কারণেই জাতিসংঘসহ বিশ্বসংস্থাগুলো চায় ফিলিস্তিণীদের দাবীগুলো বাস্তবায়ন করতে। স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য ফিলিস্তিনীদের প্রস্তাবগুলোকে পূর্বশর্ত হিসেবে জরুরি বলেই মূল্যায়ন করেন তারা।
অপরদিকে যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে ইসরাইলিদের প্রতারণাপূর্ণ নীতি বিশ্ববাসীদের সামনে আবারও স্পষ্ট করে তুলছে যে তারা শান্তির বিপক্ষে, সহিংসতাই তাদের বৈশিষ্ট্য। সুতরাং যারা আন্তর্জাতিক কোনোরকম রীতিনীতির তোয়াক্কা করে না, সেই মানবতার শত্রু ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।