Connecting You with the Truth

কুষ্টিয়ার পাসপোর্ট অফিসে আবারও সক্রিয় দালালচক্র

 মাহফুজ , কুষ্টিয়া:

বর্তমান সরকার যখন দুর্নীতি হ্রাস করার চেষ্টায় দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে তখন এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নানা কায়দায় প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে দুর্নীতি করে চলেছে। অভিযোগ উঠেছে, তারই এক প্রজ্বলিত উদাহরণ কুষ্টিয়ার পাসপোর্ট অফিস। অফিসটি এখন সম্পূর্ণই দালাল চক্রের দখলে বলে জানা গেছে। স্বয়ং উক্ত দপ্তরের বিভিন্ন শ্রেণির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও রয়েছে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ। জানা যায়, অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতিদিন অতি চাতুরতার সাথে একটি দালালচক্রের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, কুষ্টিয়া শহরতলীর পেয়ারা তলাতে অবস্থিত পাসপোর্ট অফিসটিতে প্রতিদিন কুষ্টিয়াসহ মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা থেকে শতাধিক মানুষ পাসপোর্ট করাতে ভিড় জমায়। সাধারণভাবে ব্যাংড্রাফ্ট এর ৩০০৫ টাকায় পাসপোর্ট হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। পাসপোর্ট করতে আসা ব্যক্তিদের সাথে কথা বললে তারা জানায়, এই অফিসে আঙ্গুলের ছাপ (ফিঙ্গার প্রিন্ট) দিতে ৯০০ টাকা ও ফরম লেখাতে ২০০ টাকা করে দিতে হয়। অন্যদিকে টাকা না দিলে বিভিন্ন ভুল দেখিয়ে দিনের পর দিন পাসপোর্ট প্রার্থীকে ঘুরাতে থাকে দায়িত্বশীল অফিস স্টাফরা। বাধ্য হয়েই অবশেষে দালাল ধরা ছাড়া তাদের আর কোন উপায় থাকে না। ভুক্তভোগী এক ব্যক্তি তার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পাসপোর্ট করতে হলে দালাল ধরতেই হবে। আমরা সরাসরি তো টাকা দিতে পারি না তাই দালালদের মাধ্যমে টাকা দিতে হয়। যে যত বেশি টাকা দিতে পারে তার কাজটাও আগে হয়। এদিকে গোপন সূত্রে জানা যায়, পাসপোর্ট অফিসের পেছন দিকের বিভিন্ন গলিতে দালালেরা ফাইল ও টাকার লেনদেন করে থাকে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে ঐ স্থানে গেলে আজিজ নামের এক দালালের সাথে সাক্ষাৎ হয়। প্রতিবেদকের সাংবাদিক পরিচয়টি গোপন রেখে তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমরা ভিড়ের ভেতর না যেয়ে এই দিক থেকেই কাজ সেরে নিই। কিভাবে ফাইল এবং টাকা লেনদেন করা হয় সেই বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, অফিস থেকে এডির কাছের লোক ইমদাদ নামের এক স্টাফ প্রতিনিয়ত এই ফাইল এবং টাকা লেনদেন করে থাকে। অফিসের সামনে পেয়ারাতলার মালেক, তালেব, মজমপুরের চাদু, শাহিন ও চুয়াডাঙ্গার আরিফ নামের কয়েকজন দালালের উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায়। পাসপোর্ট করতে আসা ভুক্তভোগী শাহিনুর ইসলাম ও আলমডাঙ্গার ফারুক জানান, তারা উভয়েই এখানকার এক দালালের কাছে পাসপোর্ট করতে ৪৮০০ টাকা দিয়েছে। সম্প্রতি পলাশ ও খোকন নামে দুই দালালকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতে পৃথক পৃথকভাবে ঐ দুই দাললকে যথাক্রমে ৩ মাস ও ২ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল খালেকের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমরা আমাদের কাজের ফাঁকে ফাঁকে নজরদারি রেখেছি। এই পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালকসহ কিছু অসৎ কর্মকর্তা ও কর্মচারী দালালদের মাধ্যমে এ অর্থবাণিজ্যের সাথে জড়িত রয়েছে। ইতোপূর্বে আমরা দুই দালালকে আটক করতে সক্ষম হয়েছি। পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক রুস্তম আলীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এ অভিযোগ মিথ্যা। আমার অফিসে কোন দালাল নেই।

Comments
Loading...