Connecting You with the Truth

কুড়িল-পূর্বাচল ফ্লাইওভারের বাকি কাজ আগামী বছর

kuril fly over

 

 

 

 

 

 

 

 

স্টাফ রিপোর্টার:
রাজধানীর দৃষ্টিনন্দন কুড়িল-পূর্বাচল ফ্লাইওভারের অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে আরো এক বছর লাগবে বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে সৌন্দর্যবর্ধন, রক্ষণাবেক্ষণ দায়িত্ব ম্যানেজমেন্ট অপারেটর নিয়োগ, রাস্তা ও ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, ফোয়ারাসহ বেশ কিছু আনুষঙ্গিক কাজ বাকি রয়ে গেছে। কাজ শেষ হওয়ার আগেই সড়ক ও ব্রিজের আশপাশের অধিকাংশ দখল, অর্থ ছাড়ে বিলম্ব, স্থানীয় প্রভাবশালীদের অত্যাচার, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি ও প্রশাসনের অসহযোগিতার কারণে কাজ শেষ করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রক্ষণাবেক্ষণ দায়িত্ব প্রবর্তিত না হওয়া ও নিয়মিত তদারকি না হওয়ার ফলে অনেকটা নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে নয়নাভিরাম ফ্লাইওভারটি।
অপরদিকে পিলার তোলা ও ফ্লাইওভার’র গাঁ ঘেষে যত্রতত্র পোস্টার, ব্যানার আর ছোট বিলবোর্ড লাগানোর ফলে ফ্লাইওভার শ্রী হারাচ্ছে।
অন্যদিকে, আলাদা তদারকি না থাকায় নামসর্বস্ব রাজনৈতিক সাইনবোর্ডে টাঙ্গিয়ে ফ্লাইওভারের জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য দোকান। যেখানে প্রতিদিন উঠছে চাঁদা। পিলারের নিচের জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির অফিসসহ বেশ কয়েকটি অফিস। গড়ে উঠেছে ট্রাক স্ট্যান্ড। তবে কিছুদিনের মধ্যে রক্ষণাবেক্ষণ দায়িত্ব দিতে ‘ম্যানেজমেন্ট অপারেটর’ নিয়োগ দিতে টেন্ডার আহবান করা হবে বলে জানিয়েছেন কুড়িল-পূর্বাচল ফ্লাইওভারের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল বাকী মিয়া। তিনি বলেন,‘ ফ্লাইওভারের আরো ১৫ শতাংশ কাজ বাকি আছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করতে চায় না বলে দেরি হচ্ছে। এমনিতে তো কাজ করতে চায় না বললে কাজ আরো কম হবে।’ তিনি আরও বলেন,‘ এমাসের মধ্যে বিমানবন্দরমুখি ফুটওভার ব্রিজের কাজ শেষ হয়ে যাবে। আশা করছি আগামী দুই মাসের মধ্যে বাকিগুলো হয়ে যাবে। ম্যানেজমেন্ট অপারেটর নিয়োগ দিতে এ মাসে টেন্ডার আহবান করা হবে। ৪-৫ বছরের জন্য কোনো কোম্পানিকে ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ দেওয়া হবে। তবে যে প্রতিষ্ঠানই এর রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করুক, তদারকির দায়িত্বে থাকবে রাজউক। কারণ এর পুরো মালিকানাই রাজউকের।’ স্থানীয় এলাকাসীর সূত্রে জানা গেছে, ম্যানেজমেন্ট দায়িত্বে কেউ না থাকায় অল্প দিনে ফ্লাইওভার’র নিচ ও রাস্তার জায়গা দখল হয়ে গেছে। একটি রাজনৈতিক দলের সাইনবোর্ড টানিয়ে সেখানে শতাধিক দোকান বসানো হয়েছে। এছাড়া স্থায়ী দোকানপাটের পাশাপাশি প্রতিদিন ভ্রাম্যমাণ শতাধিক দোকানও বসানো হয়। এসব দোকানের প্রতিটি থেকে একশ আর স্থায়ী দোকান থেকে দেড়শ টাকা তোলা হয়। এথেকে কিছু পরিমাণ পুলিশকে দেওয়া হয়। ভ্রাম্যমাণ পপকর্ন বিক্রেতা সুমন জানান, ‘প্রায় একবছর ধরে এখানে পপকন তৈরি ও বিক্রি করছি। প্রতিদিন পুলিশ ও নেতাদের (একটি রাজনৈতিক দলের লোকজন) টাকা দিতে হয়। তারা অবশ্য ফ্লাইওভার কর্তৃপক্ষ আর পুলিশকে দেবে বলেই টাকা নিয়ে যায়।’ এ বিষয়ে শ্রমিক লীগের সাইনবোর্ড লাগানো অফিসে উপস্থিত কেউ কথা বলতে রাজি হননি। আরও জানা গেছে, ফ্লাইওভারের কুড়িল অংশে ফুটওভার ব্রিজ ও পিলারের নিচে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সাইনবোর্ড লাগিয়ে দখল করা হয়েছে। সেখানে ১০-১২টি ট্রাক সব সময় থাকে।
অপরদিকে পূর্বাচল সড়ক অংশে পিলার ঘেঁষে গড়ে উঠেছে বাস স্ট্যান্ড। সেখানে অর্ধশতাধিক বাস থাকে। কুড়িল অংশে ফ্লাইওভারে মুখে ময়লা ফেলে নোংরা করা হয়। ফ্লাইওভার ও পিলারের গায়ে লাগানো হয় পোস্টার-ব্যানার। রক্ষণাবেক্ষণের কোনো লোক না থাকা ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের কারণে কাজ শেষ এবং ফ্লাইওভারটি সৌন্দর্য্য ধরে রাখা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে আবদুল বাকী মিয়া। তিনি বলেন, ম্যানেজমেন্ট অপারেটর নিয়োগ হলে তারাই সব করবে। তারা পরিষ্কার করা, বিজ্ঞাপন দেওয়া, রং ও বাতি ঠিক করা, সৌন্দর্য্যবর্ধন, রক্ষণাবেক্ষণ সব কাজ করবে। বিজ্ঞাপন থেকে আয় করে তা থেকে ব্যয় করবে। অনুমোদনের জন্য রাউজক এ পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হলেই টেন্ডার আহবান করা হবে। তবে মানুষের মাঝে সচেতনতা নেই বলে সৌন্দর্য্য রক্ষা হচ্ছে না বলে জানান তিনি। দোকান ও অবৈধ স্থাপনা সম্পর্কে তিনি অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন, আমাদের কাজ তো এখনো শেষ হয়নি। আমরা ভাঙ্গতে পারবো না, কারণ ক্ষমতাসীন লোকজন সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে। তিনি বলেন, আমরা পুলিশকে চিঠি দিয়েছি, বলেছি। কোনো কাজই হয়নি। উল্টো আমাদের লোকজন ও অফিসে হামলা হয়েছে। তবে ম্যানেজমেন্ট অপারেটর নিয়োগ হলে ফ্লাইওভারটি হারানো সৌন্দর্য্য ফিরে আসবে বলে আশা করেন তিনি।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৪ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুড়িল-পূর্বাচল ফ্লাইওভার উদ্বোধন করেন। কুড়িল মোড়, বিমানবন্দর সড়ক ও প্রগতি সরণির সংযোগস্থলে ফ্লাইওভারটি অবস্থিত। আরসি গ্রিডার ও পিসি বক্স গ্রিডার উভয় পদ্ধতির মিশ্রণে নির্মাণ করা হয়েছে। এর কার্যাদেশ দেয়া হয় হয় ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে। ৮ এপ্রিল ২০১০ নির্মাণ কাজ শুরু ও ৭ এপ্রিল ২০১২ সালে পুরো কাজ শেষ হওয়ার কথা। ২০১০ সালের ২ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন। ৩ দশমিক ১ কিলোমিটার দৈর্ঘের এ ফ্লাইওভার নির্মাণ ব্যয় প্রথম ২৫৪ কোটি টাকা ধরা হলেও শেষ পর্যন্ত তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩০৬ কোটি টাকা। উচ্চতা ৪৭ দশমিক ৫৭ ফুট ও প্রস্থে ৩০ দশমিক ১৮ ফুট। ফ্লাইওভারের পাইল ২৯২টি, পাইল ক্যাপ ৬৮টি এবং পিলার ৬৭টি। এ প্রকল্পের পুরো অর্থ রাজউকের নিজস্ব তহবিল থেকে দেয়া হয়। পিবিএল এবং এমবিইসি নামে দু’টি প্রতিষ্ঠান জয়েন্ট ভেঞ্চারে এ কাজ করে।

Comments
Loading...