Connecting You with the Truth

কৃষকদের স্বপ্ন ভয়াবহ দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে

শেরপুর প্রতিনিধি:
চারদিকে সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকা সোনালী ধানে ভরে ছিল মাঠ। কৃষক কেবল সেই পাকা ধান গোলায় ভরার প্রহর গুণছিলেন। পাশাপাশি ‘আপৎকালীন’ ফসলখ্যাত এ ধানে কৃষক বিগত সময়ের ক্ষতিও কিছুটা পুষিয়ে নেওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন। কিন্তু কৃষকের সেই স্বপ্ন ভয়াবহ দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। পানিতে লুটোপুটো খাচ্ছে তাদের শত কষ্টে বোনা সেই স্বপ্ন। কেননা গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে জমির উঠতি ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। রোপা আউশ মৌসুমের উঠতি প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমির বেশির ভাগ ধান এখন পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। ঝুঁকি নিয়ে কেউ কেউ একটু-একটু করে জমির সেই ধান কাটলেও ফলন গতবারের চেয়ে অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। এছাড়া ভেজা থাকার কারণে ধানের দামও অত্যন্ত কম। এর মধ্যেই আবার বিক্রিকালে কৃষককে নির্ধারিত ওজনের চেয়ে বস্তা প্রতি ৫-৬ কেজি হারে ধান বেশি দিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় লাভ তো দূরের কথা, লোকসান দিয়েও বগুড়ার শেরপুর উপজেলার কৃষকরা জমির ফসল ঘরে তুলতে পারছে না।
এদিকে কয়েক দিনের টানা বর্ষণে পানিতে তলিয়ে যাওয়া কিছু কিছু এলাকার ধান ইতোমধ্যেই নষ্ট হতে শুরু করেছে। অপরদিকে পানিতে তলিয়ে যাওয়া জিরাশাইল জাতের ধান থেকে নতুন নতুন ধান গাছ গজাচ্ছে। এমন অবস্থায় বর্ষণ অব্যাহত থাকলে জমির উঠতি জিরাশাইল ও পারিজাত ধান অধিকাংশ কৃষকই ঘরে তুলতে পারবেন না বলে ক্ষতিগ্রস্তরা জানিয়েছেন। সব মিলিয়ে স্থানীয় কৃষক পরিবারগুলো মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন। বিশেষ করে চলতি রোপা আমন মৌসুমের আবাদ নিয়ে মাঝারি ও ছোট সারির কৃষকরা অনেকটা আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকদিনের টানা বর্ষণে উপজেলার বরেন্দ্রখ্যাত ৫টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় লাগানো শতশত বিঘা রোপা আউশ মৌসুমের জিরাশাইল ও পারিজাত জাতের ধান পানিতে ভাসছে। ফলে কৃষক চেষ্টা করেও জমির পাকা ধান কাটতে পারছে না।
পালাশন গ্রামের কৃষক ইকবাল হোসেন জানান, তিনি ১৫ বিঘা জমিতে জিরাশাইল ধান লাগিয়েছিলেন। কিন্তু ধান কাটা শুরুই করতে পারেননি। এরমধ্যে টানা বর্ষণ চলছে। ফলে জমির সব ফসল কাটার আগেই মাটির সঙ্গে মিশে পানিতে তলিয়ে গেছে। একই গ্রামের আকবর হোসেন ১১ বিঘা, মোখলেছুর রহমান ৯ বিঘা, দুলাল হোসেন ৭ বিঘা, শংকরআটা গ্রামের ইদ্রিস আলী ২০ বিঘা, হেদায়েত আলী ৭ বিঘা, ভায়রা গ্রামের নজরুল ইসলাম ৭ বিঘা, আরব আলী ৫ বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের বেশির ভাগ জমির পাকা ধান এখন পানিতে ভাসছে বলে এসব গ্রামের কৃষকরা জানান।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্র জানায়, রোপা আউশ মৌসুমে এ উপজেলায় ৫ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে জিরাশাইল জাতের ধান লাগানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, জমির সব ধান মোটামোটি চাল হয়ে গেছে। তাই আবহাওয়া বৈরী হলেও হতাশ হওয়ার কোন কারণ নেই। দাম পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা হলেও ফলনে কোন প্রভাব পড়বে না বলে এই কর্মকর্তা দাবি করেন। তবে বৃষ্টির কারণে ধানকাটা ও মাড়াইয়ে কৃষকদের বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হবে। এছাড়া গত কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতকে এই কর্মকর্তা চলতি রোপা আমান মৌসুমের জন্য আশীর্বাদ মনে করেন।

Comments
Loading...