গুমের সংখ্যা ততো নয়: স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার:
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর আর ফিরে না আসার ঘটনাগুলোকে ‘গুম’ না বলে ‘অপহরণ’ বলতে চান স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তার দাবি, যত অভিযোগ করা হচ্ছে, গুমের ঘটনা ততো নয়। “গুম বা অপহরণের ঘটনা যে দুই/চারটা ঘটছে না তা আমি বলছি না। তবে যেভাবে বলা হচ্ছে সংখ্যাটা আসলে ততো নয়।” গতকাল নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।
শনিবার আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবসে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে সাম্প্রতিক সময়ে ‘গুম হওয়া’ ব্যক্তিদের স্বজনরা নিজেদের অভিজ্ঞতা আর অভিযোগের কথা তুলে ধরেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুয়ারে দুয়ারে ধরনা দিয়েও স্বজনকে ফিরে না পাওয়া কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন তারা। বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে গুমের জন্য সরকারকে দায়ী করা হচ্ছে, যদিও মন্ত্রীরা তা অস্বীকার করে আসছেন। বিএনপির অভিযোগ, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে সারাদেশে তাদের ৬৫ জনেরও বেশি নেতা-কর্মী গুম হয়েছেন। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, “কয়েকটি ঘটনার আমি জানি যে, নিজেরাই আÍগোপনে থেকে গুমের গল্প বলছে। পরে তা পরিষ্কার হয়েছে- যখন সেই গুমের লোক উদ্ধার হয়েছে।” এসব ঘটনায় র‌্যাব সদস্যদের জড়িত থাকার যে অভিযোগ বারবার করা হচ্ছে তাও সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। কামাল বলেন, “এটা একটা ভুল ধারণা। গুম হলেই র‌্যাবের নাম বলা হয়।”
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইসলামী ফ্রন্টের নেতা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ভুল পথে যাক তা চান না বলেই ধীর স্থিরভাবে তদন্ত এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। “ফারুকী হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ভুল পথে চালাতে চাই না। ধীর স্থিরভাবে এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করে সঠিক জিনিসটা আমরা জনগণকে জানাতে চাই।” টেলিভিশনে ইসলামী অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ফারুকীর কোনো শত্র“ থাকতে পারে বলে বিশ্বাস করেন না প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, গত ২৭ অগাস্ট রাতে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায়। ইসলামী ফ্রন্টের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুকীকে হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য জামায়াতে ইসলামীকে দায়ী করে সংগঠনটির নেতারা অভিযোগ করেছেন, সরকার মূল আসামিদের বাঁচাতে চাইছে। ফারুকীর খুনিদের বিচারের দাবিতে গতকাল সারা দেশে আধা বেলা হরতালও করেছে ইসলামী ফ্রন্টের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সেনা। হরতালে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, “কোনো হরতালতো হচ্ছে না। সারাদেশে তাই কোনো গণ্ডগোলও নেই।” মগবাজারে তিন খুনের তদন্তের অগ্রগতি জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “ছেলেটা (মামলার মূল আসামি কালাবাবু) নটোরিয়াস। আগেও এক আনসার হত্যায় জড়িত সে।” পুলিশ আসামিদের খুঁজছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “কালাবাবুসহ তার সাঙ্গপাঙ্গদের তছনছ করে দেয়া হবে।” ফারুকী হত্যার একদিন পর মগবাজারের সোনালীবাগে এক বাড়িতে হামলা চালিয়ে তিনজনকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। পুলিশ বলছে, রেলের জমি দখল নিয়ে বিরোধের জেরে কালা বাবু ওই হত্যাকাণ্ড ঘটায়। এ ঘটনায় নিহত বৃষ্টি আক্তার রানুর ভাই শামিম ওরফে কালা চাঁন যে মামলা করেছেন, তার তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরপর এ দুটি হত্যাকাণ্ডে জনগণ আতঙ্কিত বলে একজন আওয়ামী লীগ নেতা মন্তব্য করলেও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলেই মনে করেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, “দুটি হত্যাকাণ্ড দুর্ভাগ্যক্রমে আমার নির্বাচনী এলাকায় ঘটেছে। ৃ সব দেশে কিছু না কিছু ঘটে। তা পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যায়।” তিন খুনের ঘটনা চাঁদাবাজির কারণে ঘটেছে বলেও মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী। “ওই এলাকায় বস্তি ও রেলের জমিতে ওই ছেলেটি (কালাবাবু) চাঁদাবাজি করত।” নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুনের ঘটনা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কামাল বলেন, ভারতে আইনি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর যতো দ্রুত সম্ভব এ মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। তিনি বলেন, “অপেক্ষা করেন। ভারতে নূর হোসেনের আইনি প্রক্রিয়া শেষ হোক।”

Comments (0)
Add Comment