Connecting You with the Truth

চট্টগ্রামে প্রতারক চক্রের হাতে সাংবাদিক অপহরণ; ৩০ ঘন্টা পর মুক্তিপণ আদায় করে মুক্তি

এম.আর.মিলন ( ব্যুরো প্রধান চট্টগ্রাম)

চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়েজিদ থানাধীন বালুচরা এলাকার তুফানি রোডের শেষ অংশের রাস্তার পাশ থেকে গত ১১ জুন মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬ টায় সংঘবদ্ধ পেশাদার সন্ত্রাসী দলের একটি চক্র সশস্ত্র অবস্থায় মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে এবং অনাদায়ে খুন ও গুম করার মানসিকতা নিয়ে এক সিনিয়র সাংবাদিক কে অপহরণ করে।

৩০ ঘন্টা ব্যাপী গোটা লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ভুক্তভোগী সাংবাদিক ও দেশের স্বনামধন্য ও শীর্ষ জাতীয় ইংরেজি দৈনিক দি বাংলাদেশ টুডে এর চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান এস এম আবুল বরকত আকাশ, প্রকাশ এস এম আকাশ গণমাধ্যমকে পাঠানো তাৎক্ষণিক এক সংবাদ বিবৃতিতে জানান, সাংগঠনিক ভাবে পরিচিত মোহাম্মদ আলী নামের এক ছোট ভাই এর আহবানে বালুচরা এলাকায় কেনার জন্য একটি জমি দেখতে যান। ঠিক তখনই গোপনে লুকিয়ে থাকা ৮/১০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল আমাকে হামলা করে এবং আমি যখন তাদের হাত থেকে বাঁচতে চেষ্টা করি তখন তারা মারধর করে জোর পূর্বক ফিল্ডার মডেলের কালো কাচের ও কালো রঙের একটা প্রাইভেট গাড়িতে তুলে নাকে মূখে কাপড় বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। বিস্তারিত বিবরণ দিতে গিয়ে এস এম আকাশ আরও জানান,গাড়ি থেকে নেমে দেখতে পাই গহীন অন্ধকার ও নীরব বিলের মাঝে অবস্থিত একখানা সবুজ রঙের বিল্ডিং এ নিয়ে যায়। যার দোতলায় একটি কক্ষে নিয়ে আমাকে প্রথমে চেয়ারে সাথে বেঁধে রাখে এর পর শুরু হয় মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন।
রড,চাইনিজ কুড়াল,দেশীয় অস্ত্র,দেহ ব্যবসায়ী নারী,দেশীয় পিস্তল ইত্যাদি দিয়ে মারধর ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকে।

সংঘবদ্ধ দলের প্রায় ১২/১৪ জন অপহরণকারী দল গোটা এই অপরাধের সাথে যুক্ত ছিল। এই দলের মূল নেতা কথিত জমির মুন্সি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা ইউনিয়নের বাসিন্দা মোস্তফা কাউছার মুন্সির নেতৃত্বে গোটা অপহরণ কর্মযজ্ঞটি পরিচালনা করে। সাংবাদিক এস এম আকাশ সংবাদ বিবৃতিতে আরও জানান, অপহরণের ২য় দিন (১২ জুন) আমি বুঝতে পারি যে এটা একটা পাহাড়ি এলাকা এবং ঐ দিন সকালে তারা আগের দিনের কালো ফিল্ডার গাড়িতে তুলে আরও গভীর জঙ্গলে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় আমি রাস্তার বিভিন্ন সাইনবোর্ড ও দোকানপাটের সাইনবোর্ডে দেখতে পায় কখনো রাউজান কখনো রাঙামাটি ও কখনো রাঙ্গুনিয়ার গভীর বনাঞ্চল এলাকা। ২য় দিন দুপুরে আমার মোবাইল ফোন থেকে তারা আমার পরিবারের সদস্যদের সাথে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে কথা ও যোগাযোগ শুরু করে এবং আমার ভাই ও স্ত্রীকে বলে,কাউকে অবগত না করে থানা পুলিশ না করে ৫০ লাখ টাকা ও চেক বই নিয়ে আসতে। যদি থানা পুলিশ করে তবে তোমাদের আকাশ কে জীবিত পাবে না। বিভিন্ন জায়গায় শরীরের অংশ খুজে পাবে বলে ভয় দেখায়। এক পর্যায়ে আমার স্ত্রী ও ভাই জীবনের মায়া ত্যাগ করে অপহরণকারীদের দেওয়া ঠিকানায় ৩ ঘন্টা ঘুরাঘুরি করে উপস্থিত হয়। মানবতাহীন সন্ত্রাসীরা আমার ভাই ও স্ত্রীকেও বিভিন্ন ভাবে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করতে থাকে এক পর্যায়ে তাদের আকুল মিনতিতে নগদ ৭ লাখ ও অনলাইন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে সাড়ে তিন লাখ টাকা আদায় করে,পাশাপাশি আমার স্বাক্ষরিত বিভিন্ন অংকের মোট ৫৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার তারিখ বিহীন ৪টি চেক নেয় এবং আমার স্ত্রী ডলি করিমের ব্যক্তিগত হিসাবের একাউন্ট এর একটি ৫০ লাখ টাকার চেক জোর পূর্বক গ্রহণ করে। সাথে ১০০ টাকা দামের ১৮টি খালি স্ট্যাম্পে আমার স্ত্রী,আমার ভাই ও আমার স্বাক্ষর নেয় এরপর তারা আমাকে জোর করে অস্ত্রের মুখে রেখে মোবাইলে স্বীকারোক্তি মূলক ভিডিও ফুটেজ ধারণ করে এবং আমাকে তাদের শিখিয়ে দেয়া বক্তব্য মতে যা যা বলতে বলে তাই বলি।

পরিশেষে “আমি প্রতারক” শব্দটা কাগজে প্রিন্ট লিখে আমার স্ত্রী ভাইকে আঘাত করবে বলে ভয় দেখিয়ে থানার আসামীদের মতো করে ছবি তোলে। এরপরে ১২ জুন রাত আনুমানিক পনে বারোটায় আমাদেরকে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা ইউনিয়নের সৌদিয়া গেইট সংলগ্ন এলাকায় মোটরসাইকেলে করে নামিয়ে দেয়। সবশেষে অসুস্থ ও আঘাত প্রাপ্ত শরীর নিয়ে বহু কষ্টে ১৩ জুন রাত আনুমানিক ২টায় চট্টগ্রাম শহরে এসে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসে জরুরী বিভাগে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা ও ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা করে উপস্থিত চিকিৎসকদের মানবিক সহায়তায় পুলিশ কেইস করার সনদ প্রদান করে। এমতবস্থায় চট্টগ্রামের সিনিয়র গণমাধ্যম কর্মীদের সহযোগিতায় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান ভুক্তভোগী এই সাংবাদিক।

Comments
Loading...