জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হোক সাজানো গোছানো
লাইফস্টাইল ডেস্ক:
নবজীবনের প্রতিটি সুন্দর মুহূর্তের সাক্ষী থাকুক আপনাদের চার দেওয়ালের ঠিকানা। জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হোক সাজানো গোছানো অন্দর দিয়ে। পুরোনো বা নতুন বাড়ি যেটাই হোক না কেন, অন্দরে ছড়িয়ে থাকুক আপনাদের সম্পর্কের উষ্ণতা। স্বামী-স্ত্রীর শুধু দুজনের সংসার হোক বা শ্বশুরবাড়িতে সকলের মিলিত বসবাস, অন্দর সাজিয়ে তুলুন নিজেদের পছন্দ, রুচি এবং নান্দনিকতাবোধ কাজে লাগিয়ে। আধুনিকতার পরশ থাকুক সে বাড়িতে, নবরচিত দাম্পত্য আরও মধুর হয়ে উঠুক আপনাদের ভালো বাসায়।
বিয়ের পর সকলেই যে স্বামী-স্ত্রীর আলাদা সংসার গড়ে তুলবেন, তা তো নয়। আবার শ্বশুরবাড়িতে সবকিছু নিজেদের ইচ্ছেমতো নতুন করে সাজানোও সকলের পক্ষে সম্ভব না হতে পারে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই নিজেদের বেডরুম রি-ডেকোরেট করতে পারেন। বিয়েতে কী ধরনের ফার্নিচার কিনছেন, বা ঘরে কী রং করছেন, সেগুলো স্বামী-স্ত্রী মিলে আলোচনা করে নিতে পারেন। আত্মীয়দের তরফ থেকেও যদি নতুন কোনও গ্যাজেট বা ফার্নিচার গিফ্ট পাওয়ার প্রশ্ন থাকে, আগে থেকে খোলাখুলি আলোচনা করে পছন্দমতো জিনিস কিনে নিতে পারেন।
সামঞ্জস্য রাখুন : পুরো ঘরেই একটা সিমেট্রি রাখার চেষ্টা করুন। এক-একটা ফার্নিচারের লুক অ্যান্ড ফিল যদি এক-একরকম হয়, তাহলে ঘরের সৌন্দর্য নষ্ট হবে। ঘর পুরনো হলেও, পর্দা, আসবাস বদলালে, বা আসবাবের স্থান পরিবর্তন করলে ঘর নতুন দেখাবে। যারা নতুন ফ্ল্যাট বা বাড়ি কিনছেন, তারা প্রথমে বাজেটের কথা মাথায় রাখুন। বড় ঘর কেনার জন্য অযথা বাজেট ছাড়ানো যুক্তিহীন।
স্পেস ব্যবস্থাপনা : সঠিকভাবে স্পেস ম্যানেজমেন্ট করলে ছোট বাড়িও সুন্দর করে সাজানো সম্ভব। আর যদি বড় বাড়িও কেনেন, সেক্ষেত্রেও একসঙ্গে প্রচুর ফার্নিচার কেনার প্রয়োজন নেই। ইউ ক্যান অলয়েজ় অ্যাড লেটার। যা একান্ত প্রয়োজন, বরং সেখানে ইনভেস্ট করুন। একসঙ্গে বেশি ফার্নিচার বা ডেকর পিসেস কিনলেও, সব যে ঘরে সাজিয়ে রাখতে হবে, তা নয়। বরং মাঝেসাঝে ফার্নিচার বা ছোটখাট ডেকর আইটেম পালটে পালটে সাজাতে পারেন। এতে ঘরের সাজ বদলাবে, একঘেয়েমিও কাটবে। ছোট বাড়ি, ছোট ফ্ল্যাট, মানে স্পেসের অভাব। আপনার নান্দনিকতাবোধের সঙ্গে কিন্তু এর কোনও সম্পর্ক নেই। বড় বাড়িতেও ঠিকভাবে স্পেস ম্যানেজ করতে না পারলে, তা ক্লাটারড দেখাতে পারে। তাই ফ্ল্যাট ছোট বলে আক্ষেপ করার দরকার নেই। বরং বাড়িতে কী কী রাখছেন, সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন। কিছু টিপস মাথায় রাখতে পারেন।
ঘরে ভার্টিক্যাল স্পেস যতটা সম্ভব অ্যাভয়েড করুন। অর্থাৎ, মেঝে খালি রেখে দেওয়াল ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। সেই মতোই ফার্নিচার কিনুন। এতে ঘর বড় দেখাবে। ঘরের দেওয়াল যত হালকা রাখবেন, ততই আলো খেলবে বেশি। এতেও বড় ঘরের ইলিউশন তৈরি হবে। চাইলে ঘরের কোনও একটা দেওয়ালে কনট্রাস্টিং রং, টেক্সচার বা ওয়ালপেপার লাগাতে পারেন। তবে খুব জমকালো প্রিন্ট হলে তা ভাল লাগবে না। পর্দার রংও হালকা রাখুন। উজ্জ্বল রং বাছতে পারেন। এক্সপেরিমেন্ট করতে পারেন ফ্যাব্রিক নিয়ে। খুব হালকা, শিয়ার ফ্যাব্রিকে ঘরে বেশি আলো ঢুকবে। একটা সফ্টনেসও আসবে। পুরো ফ্লোর কার্পেট দিয়ে না ঢেকে ছোট ছোট রাগস, থ্রো ব্যবহার করুন। খুব গাঢ় রং বাছবেন না।
আসবাবপত্র : বড় ফার্নিচারের পরিবর্তে কমপ্যাক্ট ফার্নিচার বেছে নিন। মিনিম্যালিজ়ম এখন সর্বত্রই ইন। অন্দরসাজের ক্ষেত্রেও মিনিম্যালিস্টিক অ্যাপ্রোচ বেছে নিতে পারেন। ঘর বড় দেখাতে আলোর খুব বড় ভূমিকা রয়েছে। বড় টিউব বা ঝাড়বাতির বদলে রিসেসড লাইটিং বা ট্র্যাক লাইট লাগাতে পারেন। সঙ্গে রাখুন ফ্লোর ল্যাম্প। এ ছাড়া ঘরে আয়না রাখতে পারেন। আয়না এমনভাবে রাখুন, যাতে তাতে আলো প্রতিফলিত হয়। এতেও ঘর বড় দেখাবে। বিছানা কাঠের হলেই ভাল। আয়রনের বিছানা এড়িয়ে চলুন। সঙ্গে প্রয়োজন ভাল ম্যাট্রেস। নিজেদের কমফর্ট অনুযায়ী ম্যাট্রেস বেছে নিন। এখন তো মশারি ব্যবহারের চল আর নেই। পরিবর্তে বেডের মাথার উপরে বিভিন্ন ধরনের ড্রেপ দিয়ে সাজাতে পারেন। বেড থেকে যে দিক দিয়ে ওঠানামা করছেন, সেই অংশে ডাবল বা কিং সাইজ় বেড তো রাখবেনই, উপরে রাখুন বিভিন্ন শেপ এবং সাইজ়ের কুশন। কুশনে হালকা এবং উজ্জ্বল রঙের কভার মিলিয়েমিশিয়ে পরান। বেডকভারও একটু হালকা রঙের হলে ভাল। সঙ্গে কালারফুল থ্রো বা বেডস্প্রেড নিতে পারেন। যদি যৌথ পরিবার হয়, বা বাড়িতে নিজের একটিই ঘর থাকে, সেক্ষেত্রে কুইন বিছানা আদর্শ। বিছানা ছাড়া একটা ড্রেসার বা চেস্ট অফ ড্রয়ার্স, ওয়ার্ড্রোব, বেডসাইড টেবল রাখতে পারেন বেডরুমে। ড্রয়ারে ছোটখাট জিনিস রাখতে পারেন। ঘর পরিপাটি থাকবে। শোওয়ার ঘরে টিভি, বইয়ের র্যাক না রাখাই ভাল। ওয়র্ক টেবলও বেডরুমে না রেখে অন্য কোনও রুমে রাখার চেষ্টা করুন। নবদম্পতিদের বেডরুমে এই জিনিসগুলো না থাকলেই ভাল। ঘরে বিছানা ছাড়াও একটা বসার জায়গা থাকলে ভাল। কেউ এলে তাকে বিছানায় বসতে দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। বিছানার উলটোদিকে ছোট একটা টেবল এবং সঙ্গে দু’টো চেয়ার রাখতে পারেন। সকাল বা সন্ধেবেলায় কফিকাপ হাতে আড্ডা দেওয়ার পক্ষেও দারুণ! স্পেস কম থাকলে বড় থ্রি-সিটারের পরিবর্তে বা এল-শেপড সোফা বা লাভসিট রাখুন। সঙ্গে রাখুন পুফ কিংবা ওটোমান। জায়গা থাকলে এক কোণে ডিভানের ব্যবস্থাও রাখতে পারেন। জায়গা কম থাকলে মেঝেতে কার্পেট পেতে রাখুন। প্রয়োজনে সেখানেও বসতে পারবেন। টেবল বসার ঘরের অন্যতম আসবাব। সোফার দু’পাশে মাঝারি মাপের টেবল রাখুন। কর্নারে রাখুন ফ্লোর ল্যাম্প। সাদা এবং হলুদ, দু’ধরনের আলোর ব্যবস্থাই রাখতে পারেন। প্রয়োজনমতো জে¦লে নিতে পারবেন। বসার ঘরে একটা কর্নার তৈরী করতে পারেন। ছোট একটা চেয়ার, একটা টেবল আর বড় ফ্লোর ভাস বা ফ্লোর মাউন্ট লাইট রাখলেই সুন্দর একটা পরিবেশ তৈরি হবে। বেশিরভাগ ফ্ল্যাটেই এখন ড্রয়িং এবং ডাইনিং এরিয়া একসঙ্গে থাকে। সেক্ষেত্রে ডাইনিং এরিয়াতে ফোর সিটার বা সিক্স সিটার টেবল-চেয়ারের সেট রাখতে পারেন। জায়গা থাকলে পাশে একটা ক্রকারি ইউনিট রাখুন। ছোট আর্টিফিশিয়াল প্ল্যান্টস, ফুল দিয়ে সাজালে ভাল লাগবে।
আনুষঙ্গিক : বেডরুমে একটি আয়নাও রাখুন। এতে ঘর বড় দেখায়। তবে খেয়াল রাখবেন, বিছানার রিফ্লেকশন যেন আয়নায় না পড়ে। বিছানা এমন পজ়িশনে রাখুন যাতে, দক্ষিণ-পশ্চিমদিকে মাথা দিয়ে শুতে পারেন। সেন্টেড ক্যান্ডল, ফুল, পটপৌরি ইত্যাদি বেডরুমে রোম্যান্টিক আবহ তৈরি করবে। বেডসাইড টেবলে রাখতে পারেন ছোট ল্যাম্প। এ ছাড়া ভাল মিউজ়িক সিস্টেমও রাখতে পারেন। মেঝেতে কালারফুল রাগস রাখতে পারেন। দেখতে ভাল লাগবে। নিজেদের পোর্ট্রেট, কিছু পেন্টিং দিয়ে দেওয়াল সাজাতে পারেন। যে কোনও একটা দেওয়ালে টেক্সচার করাতে পারেন। এখন অনলাইনে স্ন্দুর সুন্দর অ্যাকসেন্ট ওয়াল শেলফ পাওয়া যায়। বিয়েতে পাওয়া বিভিন্ন গিফ্ট তাতে সাজিয়ে রাখতে পারেন।
প্রতিটা ঘরে আলাদা ভাবে সাজান : ঘর অনুযায়ী অন্দরসাজের পরিকল্পনা করুন। বেডরুমের সাজ এবং ড্রয়িং রুমের সাজ তো একরকম হবে না, দেখতেও তা ভাল লাগবে না। প্রতিটি ঘরের নিজস্ব একটা আমেজ আছে। বেডরুম সবসময়ই রিল্যাক্স করার স্পেস। সেখানকার পরিবেশ যতটা কোজ়ি হয়, ততই মুড আপলিফ্টেড হবে। ঘরে ঢুকে যেন সারাদিনের সব ক্লান্তি ভুলে যান, সেই চেষ্টা করুন। বিশেষত নবদম্পতিদের ক্ষেত্রে বেডরুমের সাজসজ্জার প্রতি বিশেষ যত্ন নিন।
আলোর ব্যবস্থা : আলো একটু ওয়র্মটোনের রাখুন। হলুদ আলো ঘরে উষ্ণতা আনে। ঘরের সৌন্দর্যও বাড়ায়। পারলে ডিম লাইটের ব্যবস্থা রাখতে পারেন। নতুন সংসারে প্রথমদিকে অতিথিদের যাতায়াত লেগেই থাকে। আর অতিথি আপ্যায়নের জন্য ড্রয়িংরুমের সাজও হওয়া চাই পারফেক্ট। ড্রয়িংরুম বা বসার ঘর মূলত অন্দরের আয়না। ঘরে ঢুকেই যদি অগোছালো, অপরিচ্ছন্ন, ক্লাটারড এরিয়া চোখে পড়ে, তাহলে বাদবাকি সাজসজ্জা নিরর্থক। বসার ঘরে থাকুক উষ্ণ অভ্যর্থনার আশ্বাস। বাকি অন্দরের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠুক বসার ঘরেই।