ঝিনাইদহে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে বেধড়ক মারপিট
জেলা প্রতিনিধি, ঝিনাইদহ:
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের গৃহবধূ দিপিকা মন্ডল হাসপাতালের বিছানায় মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে। কষ্টের কথাটুকু জানানোর একজনই জীবিত আছেন, সেও পাশে নেই। পিতৃহীন দিপিকার মায়ের ফোন নম্বরটাও মনে নেই। মমতাময়ী মাকে তার এ দুরবস্থার কথা জানিয়ে খবর দিবেন তারও উপায় নেই।
যৌতুকের দাবীতে স্বামী ও ননদের বেধড়ক লাঠিপেটায় সমস্ত শরীর জখম হয়ে যাওয়া দিপিকার ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালের বিছানায়। ব্যথার যন্ত্রণায় ঠিকমত কথাও বলতে পারছেন না তিনি। গুরুতর আহত দিপিকাকে মঙ্গলবার রাতে ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন হাসপাতালে এনে ভর্তি করেছেন। ঔষধ কেনা কিংবা প্রয়োজনে কারো সাহায্য নেওয়ার মতো আপনজন বলতে কেউ থাকছেনা তার পাশে। ভরসা অন্য রোগীর লোকজন।
দিপিকা মন্ডল ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার বাদলশো গ্রামের মৃত গোপী মন্ডলের একমাত্র মেয়ে। মা দিপালী মন্ডল পরের বাসায় কাজ করেন। তার পক্ষের জামাইয়ের ১ লাখ টাকা যৌতুক দেওয়া সম্ভব না। বড় আশা করে ৮ বছর আগে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের বেজপাড়া গ্রামের জ্ঞানেন্দ্র নাথ বিশ্বাসের ছেলে সঞ্জয় বিশ্বাসের সাথে বিয়ে দেন তার। আর সেই যৌতুকের টাকার জন্য পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠালেন দিপিকাকে।
দিপিকা জানান, বিয়ের কয়েক বছর পর থেকে স্বামী সঞ্জয় যৌতুকের জন্য প্রায়ই তার ওপর শারীরিক নির্যাতন চালাতেন। মায়ের সামর্থ নেই জামাইয়ের দাবীকৃত যৌতুকের টাকা দেওয়ার। তাই মুখ বুজে নির্যাতন সহ্য করতেন গৃহবধু দিপিকা। মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে স্বামী ও ননদ দুইজন মিলে বেধড়ক পিটিয়েছে তাকে। ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন ও প্রতিবেশীদের সহায়তায় তিনি হাসপাতাল পর্যন্ত এসেছেন। দিপিকার ৫ বছরের একটি কন্যা সন্তান আছে।
উপজেলার সুন্দরপুর-দূর্গাপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন জানান, যৌতুকের জন্য দিপিকাকে তার স্বামী প্রায়ই মারধর করতো। মঙ্গলবার লাঠি দিয়ে অতিরিক্ত মারপিট করেছে। প্রায় অর্ধমৃত অবস্থায় প্রতিবেশিদের সহায়তায় দিপিকাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন তিনি। তিনি আরো জানান, গত দুই বছর আগেও এমন নির্যাতনের কারণে দিপিকার মায়ের অভিযোগের আলোকে বিচার শালিশ করা হয়। অসহায় মেয়েটিকে দেখার কেউ নেই। তার চিকিৎসা খরচ চালানোর জন্য তিনি সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্য চেয়েছেন।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ থানার অফিসার-ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন জানান, আপনাদের মাধ্যমে আমি বিষয়টি জানতে পারলাম। আমি দ্রুত খোঁজ খবর নিচ্ছি। এ ব্যাপারে কেউ আইনি সহায়তা চাইলে তাকে দেওয়া হবে বলে ওসি জানান।