জাতীয়

তিস্তা চুক্তি দ্রুত করুন: প্রধানমন্ত্রী

Published

on

স্টাফ রিপোর্টার:
শুষ্ক মৌসুমে পানির চাহিদা মেটাতে ‘দ্রুত’ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি করার ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার গণভবনে ঢাকা সফররত ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিং সৌজন্য সাক্ষাতে এলে এমত দেন প্রধানমন্ত্রী। সাক্ষাত শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এ কে এম শামীম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশের আরো পানি দরকার। তাই যত দ্রুত সম্ভব তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি করা উচিত। “বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী আশাপ্রকাশ করেন, পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে শিগগিরই তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি হবে এবং সীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন হবে।” ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভারতের তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের সঙ্গে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে আলোচনা চললেও পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতায় তা বাস্তবায়ন হয়নি। এবছর ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর সীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়নে ভারতের সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব সম্প্রতি তুমুল হৈ চৈয়ের মধ্যে লোকসভায় উত্থাপিত হলেও তা এখনো পাস হয়নি।  সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত এই প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন মেঘালয়ের মূখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমাসহ রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধিদল। প্রেস সচিব সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে ট্রানজিট ইস্যু নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ভারতের মধ্য দিয়ে ভুটান ও নেপালে বাংলাদেশের ট্রানজিট সুবিধা দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সরকারকে অনুরোধ করেছেন। ভারতের ভূমি দিয়ে বাংলাদেশের ট্রানজিটের বিষয়ে ভারতের সম্মতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। ভি কে সিংকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “অবশ্যই, আমরা এটা দেব।” দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে ওয়াটার প্রটোকল শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেছেন ভারতের প্রতিমন্ত্রী। এটা নিয়ে আগামী নভেম্বরে দুই দেশের নৌ পরিবহন সচিব পর্যায়ে বৈঠক হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন। প্রেস সচিব বলেন, ভি কে সিং আশুগঞ্জ বন্দর ব্যবহার করে ভারতীয় জাহাজের ত্রিপুরায় চাল নিতে দেয়ার অনুমতির জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানান। পণ্য পরিবহনের জন্য ভারত সরকার আখাউড়া থেকে আগরতলা পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার রাস্তা করবে বলেও প্রতিমন্ত্রী জানান। “প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা বাংলাদেশ ও উত্তর-পূর্ব ভারতের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই। “ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর সম্পর্কে ভি কে সিং বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে আগ্রহী এবং এটা যে কোনো সময় হতে পারে।’ “এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষও ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে অপেক্ষা করছে।” এসময় প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধে ভারতের মানুষ বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব ভারতের আগরতলার জনগণের সহায়তার কথা স্মরণ করেন। বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরার শিল্পমন্ত্রী তপন চক্রবর্তী, মেঘালয়ের সংসদীয় সচিব কেনেডি কাইরিয়েম, বাংলাদেশে ভারতের রাষ্ট্রদূত পঙ্কজ সরন এবং ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমেদ। ভিকে সিং ২০১২ সালে সেনাপ্রধান হিসেবে অবসর নেন। চলতি বছরের মে মাসে ভারতের সাধারণ নির্বাচনে বিজেপি জয়ী হওয়ার তিনমাস আগে তিনি দলটিতে যোগ দেন। ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজের (আইবিসিসিআই) একটি বৈঠকে যোগ দিতে শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে জেট এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে ঢাকা
পৌঁছেন ভিকে সিং। রোববার বিকাল ৪টায় ঢাকা ছাড়ার আগে সকাল ৯টায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। এর পর ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য বিষয়ক বৈঠকে যোগ দেবেন। আইবিসিসিআই এবং ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সের (আইসিসি) কোলকাতা শাখার উদ্যোগে এই বাণিজ্য বৈঠকে ভারত ও বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ নীতিনির্ধারক ও ব্যবসায়ী নেতারা অংশ নেবেন। ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাস এই উদ্যোগের সহযোগিতায় রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version