ছত্রাকের সংক্রমণে দিশেহারা লালমনিরহাটের আলু চাষীরা

lalmoniরাহেবুল ইসলাম টিটুল, লালমনিরহাট: বিস্তীর্ণ মাঠের আলু ক্ষেতে পাতা ঝলসানো (লেইট ব্লাইট) ছত্রাকরোগের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে লালমনিহাটের ৫টি উপজেলায়। সংক্রামিত ক্ষেতে দফায় দফায় ছত্রাকনাশক স্প্রে করেও রোগ নির্মূল করা যাচ্ছে না। আলু চাষীরা বলছেন, এবার আগাম আলুর চাষ করে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় লোকসানে মুখ দেখতে হচ্ছে। তার উপরে আবার এই ঝালসানো রোগ তবে আলু ।চাষীদের এ আশঙ্কার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদফতর। তাদের দাবি, ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের কারণে এমনটি হয়েছে। আকহাওয়া ঠিক হলে ভালো ফল পাবো এ জেলার কৃষকরা। আতঙ্কিত হওয়ার তেমন কিছু নেই। এ রোগের প্রকোপ কমে যাবে। আলু ক্ষেত অপেক্ষাকৃত ভালো আছে। কর্তৃপক্ষের প্রত্যাশা, এবারও লালমনিরহাটে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। জেলা কৃষি সম্প্রাসরণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে,চলতি মৌসুমে জেলার পাঁচটি উপজেলায় নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দেড় হাজার হেক্টর জমি বেশি আলু চাষ হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ক্রমাগত মূল্যপতনের কারণে লোকসানের মুখে পড়েছেন আলু চাষীরা । গত বছর এ সময়ে যেখানে প্রতি মণ আলু বিক্রি হয়েছে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকায়। এখন সেই আলু বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা মণ দরে। এতে বিঘাপ্রতি চাষীদের লোকসান হচ্ছে ৫০০০ থেকে ৭০০০ হাজার টাকা। এখন যতই দিন যাচ্ছে ততই দাম কমছে আলুর। এক সপ্তাহ আগে ৪০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে গ্র্যানোলা জাতের আলু। বর্তমানে ওই আলু বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে সর্বোচ্চ ৩৫০ টাকা মণ দরে। এদিকে টানা শৈত্যপ্রবাহে শীতের কারণে ক্ষেতে দেখা দেয় পাতা ঝলসানো ও কান্ড পচা রোগ। লালমনিরহাট সদর,কালীগঞ্জ,হাতিবান্ধা,আদিতমারী,ও হাতিবান্ধায় সরোজমিনে দেখাগেছে, কীটনাশক প্রয়োগের নানা চিত্র।কীটনাশকের গন্ধে এলাকার বাতাস ভারিহয়ে উঠছে। কালীগঞ্জের সুকানদিঘী গ্রামের কৃষক মোকলেছুর রহমান বলেন,’যেভাবে ঝালসানো রোগ সৃষ্টি হচ্ছে। তা যদি না সরানো যায় তবে প্রত্যেক আলু কৃষকদের আর্থিক ক্ষতি হবে। ৫০হাজার থেকে ২ লক্ষ টাকা। গড্ডিমারী গ্রামের কৃষক অমিত হাসানের সঙ্গে। এবার তিনি ২৫ বিঘা জমিতে গ্র্যানোলা, এ্যারিস্টিক ও কার্ডিনাল আলু রোপণ করেছেন।বর্তমানে গাছের বয়স ৫০ থেকে ৫৫ দিন হয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে পাতা ঝলসানো (লেইট ব্রাইট) রোগে আক্রান্ত হওয়ায় প্রায় সব ক্ষেতেই ছত্রাকনাশক ওষুধ। প্রয়োগ শুরু করেছেন। একই গ্রামের কৃষক শাহাজুল ইসলাম জানান, ১০ বিঘা জমিতে তিনি গ্র্যানোলা জাতের আলু রোপণ করেছেন। এতে বিঘা প্রতি তার খরচ হয়েছে ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকা। এক মাস পরই এই আলু ক্ষেত থেকে তোলা শুর” হবে। কিন্তু সব ক্ষেতেই পাতা ঝলসানো রোগ দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে একবার কীটনাশক প্রয়োগ করে ফল না পেয়ে আবারও কীটনাশক প্রয়োগ করছেন। আদিতমারীর বেশ কয়কটি আলু চাষীদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, দুই বিঘা জমিতে আলু রোপণের পর রোগ দেখা দিলে তিন দফায় কীটনাশক দিয়েও রোগ সারেনি। এমনকি আলু গাছ মারা গেছে। লালমনিরহাট সদরের আলুচাষী মোশারফ হোসেন জানান, দুই দিন ক্ষেতে না আসায় তার চারবিঘা আলু ক্ষেতে রোগ দেখা দিয়েছে।ফলে সালেক্সিন ও মেরাটাব নামের ছত্রাকনাশক মিশ্রণ করে ক্ষেতে প্রয়োগ করেছেন। আমরা স্থানীয় ডিলারদের পরামর্শ নিয়ে ক্ষেতে কীটনাশক প্রয়োগ করছি। জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদফতরের উপ- পরিচালক সাফেয়াত হোসেন জানান, অন্যবারের তুলনায় এবার আলুর ফলন বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর শীতের কারণে কিছু সমস্যা দেখা দিলেও সার্বিক বিবেচনায় আলু ক্ষেত ভালো আছে।

Comments (0)
Add Comment