নদী পারাপারের সঙ্কট কাটাতে একডজন ফেরি তৈরির উদ্যোগ
নদী পারাপারে দেশে যেসব ফেরি ব্যবহার করা হচ্ছে তার অনেকগুলোই জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেক ফেরির বয়স ৪০ বছরের বেশি হয়ে গেছে। এমনকি দেশের ফেরিবহরে প্রায় একশ বছরের পুরনো ফেরিও রয়েছে। সেগুলোর কয়েকটি মেরামতের জন্য নিয়মিতই ডকইয়ার্ডে রাখতে হয়। ফলে কখনো সব ফেরি একসঙ্গে চালু রাখা যায় না। তাছাড়া ওসব ফেরির বেশির ভাগেরই প্রয়োজনীয় ফিটনেসও নেই। বর্তমানে ফেরিবহরে ১৯২৫, ১৯৩৮, ১৯৪৭ সালে নির্মিত একাধিক ফেরি রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে শক্তিশালী নতুন ১২টি ফেরি তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নৌ-মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডাব্লিউটিসি) আওতায় থাকা ফেরিগুলোর বেশির ভাগই পুরনো ও দুর্বল শক্তির হওয়ায় সেগুলো চালাতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিপাকে পড়ে চালকরা। তাতে নানা ধরনের বিপত্তি ঘটে। তাছাড়া প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে স্রোতের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে কখনো কখনো ফেরি বন্ধও রাখতে হয়। তাছাড়া সম্প্রতি সেতুতে ধাক্কা দেয়া একাধিক ফেরিই বহু আগের তৈরি। আর পদ্মা সেতুতে বারবার ফেরির ধাক্কা লাগার ঘটনায় এই নৌযান সঙ্কটের বিষয়টি উঠে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে ১২টি শক্তিশালী ফেরি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর নতুন যেসব ফেরি তৈরি করা হচ্ছে সেগুলো বড় ১২টি ট্রাক বা বাস পরিবহন ক্ষমতার। বিআইডাব্লিউটিসি ইতিমধ্যে ওসব ফেরিসহ মোট ৩৫টি বিভিন্ন ধরনের নৌযান নির্মাণের কার্যাদেশ দিয়েছে। তাতে ফেরি ছাড়াও রয়েছে যাত্রীবাহী অত্যাধুনিক ১০টি নৌযান। বাকিগুলোর মধ্যে টাগবোট, ট্যাংকার, সি-ট্রাকও রয়েছে। ইতিমধ্যে দেশের ৩টি নৌযান নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকে ওসব নৌযান নির্মাণের কার্যাদেশ দেয়া হয়। তার মধ্যে ঢাকার কাছেই গজারিয়ায় থ্রি অ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেডের ডকইয়ার্ডে সবচেয়ে বেশি ১৮টি নৌযান তৈরি হবে। বাকিগুলো চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ও আনন্দ শিপইয়ার্ডে তৈরি হবে। নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যাদেশ পাওয়ার পর ইতিমধ্যে প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে।
সূত্র আরো জানায়, পদ্মা নদীসহ দেশের বিভিন্ন নৌপথে চলাচলকারী ৫৩টি ফেরির মধ্যে বেশির ভাগেরই চলৎশক্তি প্রায় শেষের পথে। তার মধ্যে বেশি পুরনো ফেরিগুলোর মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। যদিও ফেরিবহরে কয়েকটি নতুন ফেরিও রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, পুরনো ফেরি সরিয়ে নতুন ফেরি চালু করা গেলে বিপত্তি থাকবে না। আগে দেশে ফেরি তৈরি হতো না। বাইরে থেকে তৈরি করে আনতে হতো। এখন দেশে ফেরি তৈরি শুরু হলেও এতোদিন বিভিন্ন সরকারের সময় নতুন ফেরি তৈরির দিকে খুব একটা নজর দেয়া হয়নি। এখন ধীরে ধীরে পুরনো ফেরি বাদ দিয়ে নতুন ফেরি নামানোর দিকে নজর দেয়া হয়েছে। আর পদ্মা সেতুতে ধাক্কা লাগার পর থেকেই ওই তৎপরতা আরো বেড়েছে। আশা করা হচ্ছে আগামী বছরের জুনের মধ্যেই পর্যায়ক্রমে সব কটি ফেরি চালু করা সম্ভব হবে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে ফেরি ও অন্যান্য নৌযান নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম থ্রি অ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম জানান, থ্রি অ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেড ৬টি ইউলিটি ফেরিসহ মোট ১৮টি নৌযান তৈরির দায়িত্ব পেয়েছে। ফেরি ছাড়া অন্যগুলোর মধ্যে রয়েছে দুটি টাগবোট, দুটি ট্যাংকার, চারটি সি-ট্রাক ও তিনটি অত্যাধুনিক যাত্রীবাহী নৌযান। এর আগেও এই প্রতিষ্ঠানকে সরকারকে অনেকগুলো নৌযান দিয়েছে। সবগুলোই সময়মতো দেয়া হয়েছে। আশা করা যায় এবারও নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ফেরিগুলো দেয়া সম্ভব হবে। ফেরির পাশাপাশি এবার প্রতিষ্ঠানটি দেশের নৌপথের জন্য সরকারি উদ্যোগে বিশ্বমানের ৩টি যাত্রীবাহী নৌযানও তৈরি করবে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বিআইডাব্লিউটিসির পরিচালক (বাণিজ্য) এস এম আশিকুজ্জামান জানান, ফেরি সঙ্কট কাটাতে ১২টি ফেরি তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সেগুলোর প্রাথমিক কাজও শুরু হয়ে গেছে। আশা করা যায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই ফেরি ও অন্যান্য নৌযান বুঝে পাওয়া যাবে।