Highlights

নোয়াখালীতে যৌতুকবিহীন গণবিয়ে

Published

on

নোয়াখালী প্রতিনিধি:
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার পোরকরা গ্রামে একসাথে পাঁচ জোড়া তরুণ-তরুণীর যৌতুকবিহীন গণবিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বাদ যোহর নোয়াখালীর ঐতিহ্যবাহী শহীদী জামে মসজিদে এ গণবিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। বিয়ে উপলক্ষে পোরকরা গ্রামে ছিল সাজ সাজ রব। আনন্দ, উৎসবের কোন কমতি ছিল না আয়োজনে। প্রায় তিন হাজার মানুষের খাবারের আয়োজন করা হয় এদিন। অনুষ্ঠানে বর-কনের আত্মীয় স্বজন, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক, আলেম-ওলামারা উপস্থিত ছিলেন।

বিয়ের পিঁড়িতে বসা নবদম্পতিরা হলেন- বেলাল আহম্মেদ-মিম আক্তার (দেনমোহর- ১০,০০০ টাকা), তুহিন মাহমুদ-শামীমা আক্তার (দেনমোহর- ২০,০০০ টাকা), আলী হোসেন-মারজিয়া আকন (দেনমোহর- ৫,০০০ টাকা), রিয়াজ উদ্দিন-সাদিয়া আক্তার (দেনমোহর- ৫,০০০ টাকা), সালাউদ্দিন শেখ-মৌসুমী আক্তার (দেনমোহর- ২৫,০০০ টাকা)। বর ও কনের পরিবারের উপস্থিতিতে ইসলামি শরিয়া মোতাবেক এ বিয়ে কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তবে এ বিয়ের বিশেষ উল্লেখযোগ্য দিক হলো- এ বিয়েতে কোনো যৌতুকের লেনদেন হয়নি, বিয়ে পড়িয়ে কেউ অর্থ গ্রহণ করেনি, পছন্দের ব্যাপারে পাত্র-পাত্রীর পারস্পারিক স্বাচ্ছন্দ্য ও মতামতের ভিত্তিতে প্রস্তাব দেওয়া এবং মোহরানা নগদ পরিশোধ করে বিয়ে সংঘটিত হয়েছে।

উল্লেখ্য, বর-কনের সবাই অরাজনৈতিক আন্দোলন হেযবুত তওহীদের সদস্য। তাই এ বিয়ে হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিমের উপস্থিতিতে সম্পন্ন হয়। এসময় তিনি সকলের উদ্দেশে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, বিয়ে হলো এক পবিত্র সম্পর্ক, আল্লাহর হুকুম-বিধান, কোর’আনের নির্দেশনা ও প্রকৃত ইসলামের শরীয়াকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যদি বিয়েতে কেউ যৌতুকের আদান-প্রদান করে, মোহরানা পরিশোধ না করে, স্বাক্ষী উপস্থিত না রাখে এবং বিয়ে পড়ানোর বিনিময়ে কোনো ধর্মব্যবসায়ীকে অর্থ প্রদান করে ধর্মব্যবসার পথ প্রশস্ত করে তবে সেই বিয়ে আর পবিত্র থাকে না। রসুলাল্লাহ (সা.) ও তাঁর আসহাবদের যুগে বিয়ে হতো সম্পূর্ণ মোহরানা পরিশোধ করে, যৌতুকের তো কোনো প্রশ্নই ছিল না এবং বিয়ে পড়িয়ে অর্থ গ্রহণ ছিল ধারণারও অতীত। বিয়ে অনুষ্ঠানে সামর্থ অনুসারে মানুষকে খাওয়ানো হতো যাকে বলে ওয়ালীমা। আমরা প্রতিটা পদক্ষেপে রসুলাল্লাহ (সা.) কে অনুসরণ করার চেষ্টা করি। তিনি বলেন, বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্ক ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, কারো বিয়ের প্রয়োজন হলে পরিবারকে জানাবে, আন্দোলনকে জানাবে, পাত্র-পাত্রী দেখবে, পছন্দ করবে, সামর্থ্য না থাকলে আমরা সকলে মিলে বিয়ের ব্যবস্থা করব ইনশাল্লাহ। পালিয়ে বিয়ে করা চলবে না, সামাজিকভাবে সামর্থ্য অনুসারে তোমাদের ধুমধামের সাথে বিয়ে হবে ইনশাল্লাহ। পালিয়ে বিয়ে করা কোনো সভ্য জাতির কাজ হতে পারে না। আর বিয়ের আগে তোমাদের কর্ম করতে হবে, বেকার থাকা চলবে না।

আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কৌতুহল বসত বিয়ে দেখতে আসেন বহু মানুষ। স্থানীয় মানুষ বিয়ের অনুষ্ঠান দেখে অভিভূত হয়ে যান। প্রত্যক্ষদর্শী সোহেল তালুকদার বলেন, এমন বিয়ে তো আগে কখনো দেখিনি, আনন্দ আছে কিন্তু কোনো উশৃঙ্খলতা নেই, সহস্রাধিক মানুষের আয়োজন কিন্তু কোনো উচ্চবাক্য নেই, কোনো ঝামেলা নেই। স্থানীয় দাওয়াতী মেহমানরা বলেন, যৌতুকের বিরুদ্ধে এক নীরব প্রতিবাদ দেখলাম, এমন উদ্যোগ যদি আরও বেশি বেশি নেওয়া হয় তাহলে যৌতুক প্রথা সমাজ থেকে ইতিহাস হয়ে যাবে, বিয়েতে জবরদস্তি থাকবে না, বিয়ে সহজ হবে এবং বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্কও সমাজ থেকে দূর হয়ে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version